বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

যৌনতায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন - নারীদের জন্য বিশেষ টিপস

আমাদের সমাজে অনেক নারীই তাদের যৌনতার বিষয়টি পুরুপুরি পুরুষের উপর ছেড়ে দেন যেন এতে তাদের কোনো ভূমিকাই নেই। অথচ যৌন মিলনের বিষয়টি একজন পুরুষ আর একজন নারীর দুটি আত্মার সংমিলন। এখানে দু'জনেরই ভুমিকা রয়েছে কারণ এটা একার কোনো বিষয় নয়। তাই নারীদেরও হয়ে উঠা উচিত যৌন সচেতন এবং আত্মবিশ্বাসী। তার জন্য রয়েছে কিছু টিপস এবং ট্রিকস।

সুন্দর অন্তঃবাস ব্যবহার করুন :- আমাদের দেশের মেয়রা অন্তঃবাসকে অত একটা গুরত্ব দেয়না। বেশিরভাগ নারী মনে করে এটাতো জামা/শাড়ীর নিচে থাকবে অতএব বেশি টাকা দিয়ে সুন্দর ব্রা/আন্ডার গার্মেন্টস খরিদ করার দরকার কি? মাঝে মাঝে লক্ষ্য করা যায় হলুদ জামার নিচে কেউ কালো অন্তঃবাস পরে বেরিয়ে পড়েছেন যা সহজেই অন্যের চোখে দৃশ্যমান হয়ে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এবার আসুন ঘরে! স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বাহ্যিক পরিদেয় কাপড়ের সাথে সাথে অন্তঃবাসের গুরত্ব অপরিসীম। একজন নারীর অন্তঃবাস হতে পারে তার স্বামীর “টার্ন অন সুইচ”। নারী অনুভতির অনুরননে ব্যকুল হলেও পুরুষ ভিজ্যুয়ালাইজেশানে বেশি কর্মঠ। নারীদের বলে রাখি – মিলনের প্রস্তুতি হিসেবে নিজ থেকে কাপড় খুলে বসে থাকবেন না। আপনার পুরুষকে পিপাসার্ত করুন – তাকে বস্ত্রহরন উপভোগ করতে দিন। বস্ত্রহরনে সেক্সি সুন্দর অন্তঃবাস পুরুষ শরীরে আগুন জ্বালে।
যৌনতায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন - নারীদের জন্য বিশেষ টিপস
সুন্দর জামা কাপড়ে পরিপাটি থাকুন :- কোন একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, বিশেষ দিন কিংবা বিশেষ মুহুর্তের জন্য কেন অপেক্ষা করবেন? আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন সাজগোজ করে থাকলে আপনার প্রিয়জন আপনার দিকে বেশি নজর দেয়। একদম জমকালো মেকাপ করে সারাদিন বসে থাকতে বলছি না – সামান্য চুল আচড়ে রাখা কিংবা ঠোটে হালকা লিপিষ্টিক এর সাথে আয়রন করা জামা আপনাকে ঘরোয়া পরিবেশে আকর্ষনীয় করে তুলতে পারে। আপনার যেসকল জামা আপনাকে আনকমফোর্টএ্যবল কিংবা আনএট্রাক্টিভ করে বলে মনে হয় তা ফেলে দিন (গরীবকে দিয়ে দিন) – শুধুমাত্র আপনার পছন্দসই কাপড়ই ভেতর থেকে আপনাকে মানসিক শক্তিশালী করতে সক্ষম! যেসব রঙ আপনার গায়ের রংয়ের সাথে যায় শুধু সে রকম কাপড় কিনুন। কাপড় পছন্দের ক্ষেতে কি কাপড় কিনছেন তাও লক্ষ্য রাখার বিষয়; কারন আপনি নিশ্চয় গ্রীষ্মে সিল্ক জামা পরে ঘুরবেন না।

নিজ সম্পর্কে পুর্ন আত্মবিশ্বাসী হউন :- নারী পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের দেশে মানুষের শাররীক আত্মবিশ্বাস অনেক কম। এর প্রধান (হয়তো একমাত্রও বলা যায়) যৌনতা এবং শরীর সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা। ছোট্র একটি উদাহরনঃ আমাদের পাড়ার এক বড়ভাই (তিনি গ্রেজুয়েট ছিলেন!) বিয়ের পর পর প্রায় তার বউকে তালাক দেবার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছিলেন – কারন ছিল তার স্ত্রীর বাম স্তন ডান স্তন থেকে ছোট! এরকম একটি প্রাইভেট বিষয় পাড়ায় পাড়ায় রটে গেল! কি লজ্জার বিষয়। অথচ সত্য হল পৃথিবীর প্রায় ৫৫% নারীর দুইটি স্তন একেবারে সমান আকার/গঠনের নয়। কারো কারো স্তন আকারের পার্থক্য এত কম যে চোখে পড়েনা; আর কারো একটু বেশি যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয়। স্তনের আকারের এই বিষয়টি নারীরাও জানেন না বলে নিজ থেকে হীনমন্যতায় ভোগেন তারা। এ রকম আরো অসংখ্য স্বাভাবিক বিষয় আছে যা ভেবে আমরা অহেতুক চিন্তিত হই।

অনেকে আবার গায়ের রঙ কিংবা উচ্চতা ইত্যাদি নিয়ে নিজের মধ্যে একপ্রকার নেগেটিভ ধারনা পোষেন। আরে ভাই জগতের সব মানুষ স্বয়ংসম্পুর্ন নয়। কারো উচ্চতা ভাল তো গায়ের রং শ্যামলা। কেউ দেখতে সুন্দর তো হাসেঁর মত কর্কশ গলা (জলন্ত উদাহরন দেশের বিখ্যাত মডেল মোনালিসা, সারিকা, মৌ – ভারতের নায়ক শাহরুখের তোতলানো…)। আবার যাদের শাররীক সব গুন ঠিক আছে তারা হয় চরিত্রহীন কিংবা যৌন অসমর্থ! তাই সব কথার শেষ কথা – বিধাতা যাকে যা দিয়েছেন তা হিসেব করেই দিয়েছেন, না হয় কিছু মানুষের অহংকারের ধম্বে পৃথিবী বাসের অযোগ্য হয়ে যেত! আপনার যতটা আছে তাই আপনার হাতিয়ার – গুটিয়ে নয় ছুটিয়ে বাঁচুন। আত্মবিশ্বাসী হউন।

যত্ন/ভালবাসা/কেয়ার :- শরীর আর শরীরে যৌনমিলন হয়না। শাররীক অঙ্গের মাধ্যমে আত্মার সাথে আত্মার মিলন হলো যৌন সম্পর্ক। শক্তি দিয়ে “রেপ” করা যায়। কিন্তু অন্তরঙ্গ শাররীক মিলনের জন্য প্রয়োজন যার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করছেন তার প্রতি আপনার যত্নশীলতা এবং ভালবাসা। একজন নারী কিংবা পুরুষ তখনি যৌনতৃপ্তি অনুভব করেন যখন মানসিক ভাবে সঙ্গীর সাথে সাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন। আমার ভাষায় আমি বলি “ঘৃণা দিয়ে কেউ আমার একটা পশমও ছিড়তে পারবে না – কিন্তু ভালবাসা দিয়ে যদি কেউ আমার বুক কেটে কলিজা টান দিয়ে ছিড়ে নিয়ে যায়, আমি ব্যথায় উহ্ শব্দটি করবোনা”। যৌনসুখ শুধুমাত্র কিছু সেক্স ট্রিকস্ কিংবা পৌরুষ শক্তির উপর নির্ভর করেনা। যৌন জীবন সুখি করতে চাই মিলন পরবর্তী/পুর্ববর্তী সময়েও স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, আজকাল মোবাইল কিংবা অন্যকোন ভাবে পরিচিত হয়ে (বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত) যারা শাররীক সম্পর্ক করছেন তারা শুধুমাত্র “চরিত্র নষ্ট করছেন”। ভালবাসা ওখানে নেই। কারন ভালবাসায় “মন প্রধান – শরীর গৌন”। এখনকার বেশিরভাগ অবৈধ সম্পর্ককে আমি “গরম পানি বিসর্জন” বলে অবিহিত করতে চাই। আগে যে কাজ একজন যুবক টয়লেটে হাত দিয়ে সেরে নিত এখন নষ্টা নারী সহজলোভ্য হবার কারনে হাতের বদলে নারী শরীরযন্ত্র ব্যবহার করে সাদা রঙের গরম পানি টয়লেটের বদলে নারী যোনীতে (ভ্রম্যমান কমোড) ত্যাগ করছেন।

পুরুষের ক্ষেত্রে টয়লেট কিংবা নারী দুটি স্থানের বীর্য বিসর্জনে অনুভুতি প্রায় একই – নারীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তিনি “চরিত্রহীনা” খেতাবটি অর্জন করছেন। গ্যরান্টি দিয়ে বলতে পারি – গরম পানি বিসর্জনের এই প্রক্রিয়া নারী কিন্তু বিন্দুমাত্র উপভোগ করেন নি। কারন ছেলেটি মিলন স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে ছাদের সিড়ি ঘর কিংবা বন্ধুর খালী বাড়ী। তার মস্তিস্কে কাজ করে ভয়; এই বুঝি কেউ এসে গেলো, ধরা খেয়ে গেলো বুঝি – কোনরকম ১/২ মিনিটে কার্য সমাধা করে ছেলেটি ততক্ষনে জিপার আটকিয়ে দিয়েছে। সিড়ি ঘরের উক্ত কর্মে মেয়েটির কাজ ছিল পাজামা হাটু পর্যন্ত নামিয়ে অস্বস্তিকর কুকুরী ভঙ্গিতে হাটুর উপর হাত রেখে কিংবা সিড়ির রেলিং ধরে চোরের মত এদিক ওদিক চাহনি! তার শরীর যন্ত্রে মাঝের অংশে কি হচ্ছে তা অনুভব করার আগেই সুবিধাভোগী পুরুষের কার্য সমাধা হয়ে গেছে। ফলাফলঃ নারী নিয়ে নিলেন সারা জীবনের জন্য চরিত্রহীনা টাইটেল।

পুরুষ পেয়ে গেলেন সারা জীবন উক্ত নারীকে যেকোন সময় যেকোন পরিস্থিতিতে; এমনকি দশবছর পর পাঁচ মিনিটের দেখায় অন্তত স্তন টিপে দেবার সার্টিফিকেট।… ছিঃ ধিক্কার জানাই তাদের। এই কথা গুলোয় কিছু নারী ক্ষেপে গেছেন হয়তো এতক্ষনে। রাগের সাথে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে চাইছেন আমাকে “সবদোষ নারীর?” আমি বলি হ্যঁ আপনার দোষ! কারন একটি ছেলে গহীন বনে একা একটি মেয়ের সাথে শাররীক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না – যতক্ষন পর্যন্ত না মেয়েটি তা করার সম্মতি (সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে) না দেয়।

একজন পুরুষ এবং একজন নারী একা থাকলে তাদের সাথে ৩য় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান উপস্থিত হয়। গোপন কথা বলার জন্য আপনি খোলা পার্কে যেতে পারেন। ছাদের সিড়ির গোড়ায় কিংবা খালি প্ল্যাটে আসার মানেই হলো আপনি ছেলেটিকি টিকিট দিয়ে দিয়েছেন। ইদানিং অবশ্য পার্কগুলোরও অবস্থা কথিত এসব নষ্ট যুগল বাদ রাখেন নি। বেহায়াপনার চরম অবস্থা কমবেশি সবাই দেখেছেন। নারী না চাইলে কোন পুরুষের (দুধর্ষ খুনি হলেও) সাহস আছে খোলা পার্কে ওড়ানার নিচে হাতের কাজ সারে? বাংলাদেশে কোটি মানুষ বাস করে – আমি যাদের কথা বলছি তারা হাতে গোন। তাই দয়করে নিজের গায়ে নিতে চেষ্টা করবেন না (যদি আপনি ওরকম পুরুষ/নারী হন)। সব কথার শেষ কথা বিবাহিত বৈধ সম্পর্কের বিকল্প নেই। মনে ভয় থাকবেনা – জীবনে অপরাধবোধ তাড়া করবেনা। অন্য কেউ আপনার শরীর দিয়ে নোংরামী করতে পারবে না। বিধাতা তথাকথিত স্মার্টদের সুমতি দিন।

চিকিত্সকের পরামর্শ নিন :- মানুষ সবসময় শারীরিক কিংবা মানসিক ভাবে সুস্থ্য থাকবে এমনটি ভাবা উচিত নয়। বিবাহিত জীবনের যেকোন সময় যেকোন প্রকার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার সঙ্গির সাথে তা সরাসরি আলোচনা করুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন হাতুড়ে ডাক্তার ভুল ধারনা দিয়ে আপনার সুখী যৌন জীবন বিপর্যস্থ করে তুলবে। তাই বিশেষজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথের পরামর্শ বাঞ্চনীয়। কারণ নারী এবং পুরুষের যৌন সমস্যা নির্মূলে হোমিওপ্যাথির মত সফলতা আজ পর্যন্ত কোনো চিকিত্সা বিজ্ঞানই দেখাতে পারে নি। তাই বিবাহিত জীবনে আপনাদের যাবতীয় যৌন সমস্যার দায় ভার নিশ্চিন্তে হোমিওপ্যাথির উপর ছেড়ে দিন।

জীবন সম্পর্কে পজেটিভ চিন্তা করুন :- আপস্ এন্ড ডাউন ই হলো জীবনের ধর্ম। যেদিন আপনার মাথায় কোন চিন্তা নেই – ধরে নেবেন আপনি মরে গেছেন। এটা পেলামনা কেন? ওটা আমার জীবনে হলোনা কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে ভাবা বোকামীর চরম লক্ষন। জীবন একটি যুদ্ধ – তাই সংসার জীবনে অহেতুক নেতিবাচক চিন্তা থেকে বিরত থেকে বাস্তবতার হাত ধরে চলুন।

নিজের শরীর সম্পর্কে জানুন :- মাঝেমাঝে টয়লেটে যদি বড় আয়না থাকে কিংবা দরজা জানালা বন্ধ করে (পর্দা ঠিকঠাক টেনে) মাঝে মাঝে সম্পুর্ন বিবস্ত্র হয়ে আপনার শরীর বিভিন্ন কৌনিকে পর্যবেক্ষন করুন। নিজ শরীর সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হউন। আপনার চোখে যেসকল অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে তা ঠিক করার চেষ্টা করুন। যেমন কেমন অন্তঃবাস পরলে আপনাকে সুন্দর লাগে কিংবা কেমন করে দাড়ালে আপনার সঙ্গীর চোখে আবেদনময়ী মনে হবে সেরকম ভঙ্গিমার প্রাকটিস করুন।

সম্পুর্ন নতুন মেকওভার নিন :- আপনাকে ডান পাশে সিথি কাটলে সুন্দরী লাগে। কিংবা চোখে গাঢ় কাজলে মায়াবী লাগতে পারে। কিন্তু সবসময় একই রকম সাজগোজ অথবা বাহ্যিক অবয়ব আপনার স্বামীর ভাল লাগার কথা নয়। তাই চুলের নতুন স্টাইল, মেনিকিউর, পেডিকিউর, ব্রু ফ্লাক সহ সম্পুর্ন মেকওভার করিয়ে নিতে পারেন। আর্থিক সমস্যা থাকলে এতকিছু একসাথে না করে ঘরোয়া ভাবে নিজের বাহ্যিক পরিবর্তনের চেষ্টা করতে পারেন।

চমত্কার হাসি :- নবী করিম (সঃ) বলেছেন “হাসি হলো সদকা”। কেউ একজনের দিকে হাসি মুখে তাকানো এবং কাউকে অর্থ সাহায্য করার মাধ্যমে সমান নেকী পাওয়া যায়। স্বামী কিংবা আপনজনের পানে হাসিমুখে তাকানোর মাধ্যমে তার পৃথিবী বদলে দিতে পারেন। আমার দাদা বলতেন “দিনমজুর সারাদিন মাটি কেটে ঘরে আসার পর তার স্ত্রী যদি হাসিমুখে তাকে ডাল-ভাত খেতে দেয় তাহলে ওই মজুর সারাদিনের কষ্ট নিমেষেই ভুলে যান এবং তার কাছে ডাল-ভাত বিরিয়ানীর মত স্বাদের লাগে। আবার কোটিপতি সারাদিন প্রচুর আরাম আয়েশে অফিস করে ঘরে আসার পর যদি স্ত্রী চেহারা কালো করে চাইনীজও খেতে দেয় তখন সে খাবার তার কাছে ছাই-ভস্ম খাবার মত লাগবে।” ভালবাসা লেনদেনের জিনিস। দিবেন তো ফিরত পাবেন। দিবেন না – পাবার কল্পনাও করবেন না।

নিয়মিত ব্যয়াম করুন :- বিয়ের পর মেয়েরা হঠাৎ ঘরকুনো হয়ে যাওয়ার ফলে শাররীক ওজন বেড়ে যায়। অনেক নারী মনে করেন বিয়েতো হয়ে গেছে এখন আর শরীর অথবা বাহ্যিক সৌন্দয্য চর্চার দরকার কি? ধারনা ভুল! সব পুরুষ চায় তার বউ হবে অপ্সরী। আপনি হয়তো নায়িকাদের মত হতে পারবেন না – তবে পরিমিত খাবার গ্রহন এবং নিয়মিত ব্যয়ামের মাধ্যমে শররীক গঠন ঠিক রাখা এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে পারেন।
বিস্তারিত

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

সেক্স বা যৌন মিলনে নারীদের অনীহার কারণ ও মুক্তির উপায়

বিবাহিত নারীরা অনেক সময় স্বামীর সুবিধা অসুবিধা নিয়ে যেমন চিন্তিত থাকে পাশাপাশি অনেকেই তাদের শুরু হওয়া যৌন জীবন নিয়েও এমন কিছু ঝামেলায় পড়েন যা আগে হয়ত ভাবেননি হতে পারে। জেনে অবাক হবেন যে নব্য বিবাহিত মেয়েদের মধ্যেও সেক্স এ অনীহা থাকতে পারে। আর যারা দীর্ঘ দিন সংসার করছেন তাদের তো আছেই ।
বিস্তারিত

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৪

নারীর যৌনাঙ্গের জি-স্পট - আসুন জেনে নেই বিস্তারিত

নারী দেহের জি-স্পটের নাম হয়ত আমরা অনেকেই শুনেছি। কিন্তু বিষয়টা কি এ সম্পর্কে হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। "জি-স্পট" রহস্য বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো সম্পুর্ন বোধগম্য নয়। তাই আমি যা করতে পারি তা হচ্ছে থিওরি দেয়া – যার মাধ্যমে আপিনি আবিষ্কার করতে পারেন "জি-স্পট" এর অবস্থান, কিভাবে এটি খুজে পাওয়া যাবে এবং "জি-স্পট" দিয়ে কি করবেন?

ইতিহাস কি বলে ?

‘জি’ অক্ষরটি ‘গ্রাফিনবার্গ’ শব্দের আদ্যক্ষর। গ্রাফিনবার্গ হচ্ছেন একজন গাইনোকলজিষ্ট যিনি ১৯৫০ সালে প্রথম ‘ইউরেথ্রার সাথে যোনী পথে মিলনের সময় যৌন উত্তেজনার সম্পর্ক’ নিয়ে কলাম লিখেন। ‘জি-স্পট’ নিয়ে পরবর্তীকালে ব্যাভারিল হুইপলি এবং জন পিরি নামক দুইজন বিজ্ঞানী বিশদ গবেষনা করেন। গ্রাফিনবার্গের কলাম চাপার ৩০ বছর পর এই বিজ্ঞানীদয় গ্রাফিনবার্গের নামানুসারে ‘জি-স্পট’ নামকরন করেন।
নারীর যৌনাঙ্গের জি-স্পট

'জি-স্পট' কি ?

ইউরেথ্রার (তলপেটের ঠিক পরে যোনীর ছিদ্রের উপরিভাগে গোলাপি রঙের ভাজ করা অংশ) ভিতর অতিসংবেদনশীল কোষ দ্বারা আবৃত ছোট্র একটি অঞ্চল হচ্ছে ‘জি-স্পট’। নারীর জি-স্পট যৌনাঙ্গের সর্বচ্চ ৫ সেঃমিঃ ভিতরে অবস্থিত। অনেক মহিলা মনে করেন জি-স্পট বলে বিশেষ কোন কিছু নেই। তাদের মতে সমস্ত যোনী সমান সংবেদনশীল। তবে অনেকে জোরালো ভাবে দাবী করেন তারা জি-স্পট স্টিমুলেশানের মাধ্যমে পুর্ন যৌন তৃপ্তি অর্জন করতে পেরেছেন।

কিভাবে 'জি-স্পট' খুজে পাবেন ?

ইউরেথ্রা এবং যোনীর ছিদ্রের মাঝামাঝি অংশে সেন্ডউইচের মত ভাজ করা দেখতে অংগটি হচ্ছে ইউরেথ্রাল স্পঞ্জ। নারীর উত্তেজনার সময় জি-স্পট এর অবস্থান সম্পর্কে জানা খুব সোজা। তাই আপনি যদি একা থাকেন তাহলে যৌন ফ্যান্টাসীর মাধ্যমে নিজেকে উত্তেজিত করে নিন। লক্ষ্য করুন যোনী যেন কামরসে ভিজে যায় এবং যৌনাঙ্গ উত্তপ্ত হয়। কারন উত্তেজিত অবস্থায় জি-স্পট সাধারনের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠে।

এবার আপনার মধ্যমা আস্তে আস্তে ইউরেথ্রা স্পঞ্জ এবং যৌনী পথের দেয়াল ঘেষে প্রবেশ করান। বেশিরভাগ মহিলার যোনীপথ তলপেটের দিকে ৪৫ডিগ্রী কৌনিক অবস্থানে থাকে। তাই কৌনিকভাবে প্রায় ৫ সেঃমিঃ ভিতরে যাবার পর বৃত্তাকার একটি অঞ্চল পাবেন যেখানে হালকা চাপ প্রয়োগ করলে প্রস্রাবের বেগ আসবে। তবে চিন্তিত হবেননা। কারন যৌন উত্তেজনার সময় আপনি চেষ্টা করলেও সরাসরি প্রস্রাব চলে আসবে না। হ্যাঁ এটিই জি-স্পট। তবে অনেক নারী ওই অঞ্চলে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। চিন্তিত হবেন না হয়তো আপনি জি-স্পট থেকে মজা পাবার দলে নন। তবে জি-স্পট ছাড়াও পুর্ন যৌন তৃপ্তি পাওয়া যায়। তাই ভাবনার কোন কারন নেই। (তথ্য সূত্র: সংগ্রহিত)
বিস্তারিত

বিয়ের পূর্বে যে কাজ গুলো করে নেয়া ভালো !!

বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে একজন নারী এবং একজন পুরুষের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য এক সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আর এক সময় এই সম্পর্কের মাধ্যমেই নারী ও পুরুষের ঔরসজাত হয়ে পৃথিবীর মুখ দেখে নতুন প্রজন্ম। তাই বিয়ের আগে বর এবং কনে উভয়কেই কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে নিলে সেটা তাদের এবং আগামী ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও বেশ মঙ্গল জনক হয়ে থাকে। তার জন্য কি কি করা যেতে পারে এবং তাতে কি পরিমান উপকার নিহিত রয়েছে - আসুন এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখি।
বিস্তারিত

নারীদের যে গুনাবলী পুরুষদের মোহিত করে তুলে

প্রতিটি পুরুষই চায় তার সঙ্গীনি হবে খুব রূপসী এবং আকর্ষণীয়। আর নারীর কিছু আলাদা গুনাবলী রয়েছে যা একজন পুরুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্টই বলা চলে। চলুন জানা যাক পুরুষদের মোহিত করা নারীদের সেই সব গুনগুলি কি কি ?
বিস্তারিত

সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৪

ক্যান্সার প্রতিরোধেও রয়েছে বিয়ের ভুমিকা - জানেন কি ?

সম্প্রতি "সাইন্স ডেইলিতে" প্রকাশিত ব্রিগহেম ইয়ং ইউনিভার্সিটি-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা বিয়ে করেছেন তাদের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার কম। অবিবাহিতরা বিবাহিতদের চেয়ে শতকরা ৩৫ ভাগ বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

৪০ বছরের ডাটা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ৪০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় সাড়ে ৪ লাখ নরওয়ে নারী-পুরুষের ওপর গবেষণা করে এ তথ্য প্রকাশ করেন গবেষকরা।
ক্যান্সার প্রতিরোধেও রয়েছে বিয়ের ভুমিকা - জানেন কি ?
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১৯৭০-১৯৭৮ সালে অবিবাহিত পুরুষ বিবাহিতদের চেয়ে ১৮ ভাগ ও মেয়েরা ১৭ ভাগ বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। ২০০৫-২০০৭ সালে এসে এ পরিসংখ্যান দাঁড়ায় ৩৫ ও ২২ ভাগে। ‘বিএমসি পাবলিক হেলথ’ জার্নালে এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

বিবাহিতদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকার হার অবিবাহিতদের চেয়ে বেশি। এ জন্য সঙ্গীর সেবাযত্ন, সাহস, ভালোবাসা কাজ করে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাই সুস্থ্ দেহ আর সুন্দর জীবনের জন্য দিল্লি কা লাড্ডু যে জরুরি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিস্তারিত

বিয়ের রাতে বিদায়ী কন্যার প্রতি মমতাময়ী জননীর একগুচ্ছ উপদেশ

আদরের নন্দিনী মেয়েকে চিরতরে একজনের কাছে তুলে দিতে একজন মায়ের কী কষ্ট লাগে, মমতাময়ী জননীর তখন কী আবেগের ঢেউ খেলে যায়, তাঁর চোখে তখন কত আনন্দ-বেদনার ভাবনা ভীড় করে তা একমাত্র ওই মা জননীই জানেন। কিন্তু শুধু চোখের পানি ফেলে কলিজার টুকরা মেয়েকে শুধু বিদায় জানানোই নয়, তখন যদি তাকে এমন কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেয়া যায় যা তার সারা জীবনের সম্বল হবে, যা তার আগামীর দিনগুলোকে উজ্জ্বল সুখময় করবে তবে তা বড্ড ভালো হয়। সে থেকেই নিচের এই অমূল্য রত্নতুল্য উপদেশগুলো ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি বোনের এবং মেয়ের জীবনকে করুন বর্ণিল ও সুখময়।
বিস্তারিত

বিয়ের সময় পুত্রের উদ্দেশ্যে পিতার উপদেশ

হে আমার আত্মজ, প্রথমেই আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এ জন্য যে তিনি আমার জীবনটাকে এতটুকু প্রলম্বিত করেছেন যে আমি তোমার বিয়ের রাত দেখতে পাচ্ছি। তুমি তোমার পুরুষত্বের পূর্ণতায় পৌঁছেছো। আজ তুমি তোমার দীনের অর্ধেক পুরো করতে যাচ্ছো। হ্যাঁ, এখন তুমি সেই জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি একটি মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলে। কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া যাচ্ছে তা-ই করেছো এতদিন। কোনো চিন্তা ছাড়াই সমুদ্রে গিয়ে লাফিয়ে পড়েছো। সেখান থেকে তুমি যাচ্ছো এখন এক কর্তব্যপরায়ণতা ও পূর্ণতার জগতে।
বিস্তারিত

বিয়ের প্রস্তাব - ইসলামের দৃষ্টিতে করণীয় এবং বর্জনীয়

সবার জীবনেই আসে বিয়ের ঘটনা। আর বিয়ের আগে আসে কনে দেখার পর্ব। ইসলাম শুধু নামায-রোযার নয়; ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই এখানে সালাত-সিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে-শাদীর আমলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল মসজিদে আমরা মুসলিম পরিচয় বজায় রাখি; কিন্তু বিয়ে-শাদীতে কেন যেন ইসলাম পরিপন্থী কাজই বেশি করি। বিয়ে-শাদীর আগে যেহেতু কনে দেখার পর্ব তাই আগে বিয়ের প্রস্তাব বা কনে দেখা সংক্রান্ত ইসলামী নির্দেশনাগুলো আগে তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি এ নিবন্ধে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
বিয়ের প্রস্তাব - ইসলামের দৃষ্টিতে করণীয় এবং বর্জনীয়
শরীয়তে বিবাহ বলতে কী বুঝায় :- নারী-পুরুষ একে অপর থেকে উপকৃত হওয়া এবং আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এ সংজ্ঞা থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি, বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার ও আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত।

বিবাহের তাৎপর্য :- বিবাহ একটি বৈধ ও প্রশংসনীয় কাজ। প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এর যার গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে করা নবী-রাসূলদের (আলাইহুমুস সালাম) সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিবাহ করেছেন এবং এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলেছেন,
أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي.
‘আমি নারীকে বিবাহ করি। (তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’

এ জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মধ্য দিয়ে অনেক মহৎ গুণের বিকাশ ঘটে এবং অবর্ণনীয় কল্যাণ প্রকাশ পায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। যেমন : যদি কেউ বিবাহ না করলে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে। তখন নিজেকে পবিত্র রাখতে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁচতে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاء.
‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।’

বিয়ের প্রস্তাব এবং তার নিয়ম

কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হয় তার জন্য সমীচীন হলো ওই মেয়ের অভিভাবকের মাধ্যমে তাকে পেতে চেষ্টা করা। আর এর জন্য রয়েছে কিছু মুস্তাহাব ও ওয়াজিব কাজ, যা উভয়পক্ষের আমলে নেওয়া উচিত :

১. শরীয়তে বিয়ের প্রস্তাব কী বুঝায় :- এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিয়ে করতে চাওয়া যার কাছ থেকে এমন প্রস্তাব গ্রহণ হতে পারে। এটি বিবাহ পর্ব সূচনাকারীদের প্রাথমিক চুক্তি। এটি বিবাহের ওয়াদা এবং বিবাহের প্রথম পদক্ষেপ।

২. ইস্তিখারা করা :- মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা। জাবির রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
عَنْ جَابِرٍ- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ- قَالَ كَانَ النَّبِيُّ- صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ- يُعَلِّمُنَا الْاِسْتِخَارَةَ فِي الْأُمُوْرِ كُلِّهَا، كَالسُّوْرَةِ مِنَ الْقُرْآنِ : (إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيْضَةِ، ثُمَّ يَقُوْلُ : اللّهُمَّ إنِّيْ أسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَ أسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَ أسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإنَّكَ تَقْدِرُ وَ لآ أقْدِرُ، وَ تَعْلَمُ وَ لآ أعْلَمُ، وَ أنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ، اللّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَآجِلِه- فَاقْدُرْهُ لِيْ، وَ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ شَرٌّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَ آجِلِه- فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَ اصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَ اقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِيْ بِه. ( وَ يُسَمِّيْ حَاجَتَه.)
‘যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় সে যেন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে অতপর বলে :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ ، وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ ، وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي.
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি।‌ কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।

৩. পরামর্শ করা :- বিবাহ করতে চাইলে আরেকটি করণীয় হলো বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ, পাত্রী ও তার পরিবার সম্পর্কে ভালো জানাশুনা রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক পরিমাণে পরামর্শ করতেন। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ مَشُورَةً لأَصْحَابِهِ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে বেশি পরামর্শ করতে দেখি নি।’ হাসান বসরী রহ. বলেন,
ثلاثة فرجل رجل ورجل نصف رجل ورجل لا رجل فأما الرجل الرجل فذو الرأي والمشورة وأما الرجل الذي هو نصف رجل فالذي له رأي ولا يشاور وأما الرجل الذي ليس برجل فالذي ليس له رأي ولا يشاور
‘মানুষের মধ্যে তিন ধরনের ব্যক্তিত্ব রয়েছে : কিছু ব্যক্তি পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কিছু ব্যক্তি অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং কিছু ব্যক্তি একেবারে ব্যক্তিত্বহীন। পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং পরামর্শও করেন। অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তবে পরামর্শ করেন না। আর ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি তিনিই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আবার কারো সঙ্গে পরামর্শও করেন না।’
এদিকে পরামর্শদাতার কর্তব্য বিশ্বস্ততা রক্ষা করা। তিনি যেমন তার জানা কোনো দোষ লুকাবেন না, তেমনি অসদুদ্দেশে আদতে নেই এমন কোনো দোষের কথা বানিয়েও বলবেন না। আর অবশ্যই এ পরামর্শের কথা কাউকে বলবেন না।

৪. পাত্রী দেখা :- জাবের ইবন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدَرَ عَلَى أَنْ يَرَى مِنْهَا مَا يُعْجِبُهُ وَيَدْعُوهُ إِلَيْهَا فَلْيَفْعَلْ. قَالَ جَابِرٌ : فَلَقَدْ خَطَبْتُ امْرَأَةً مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ فِى أُصُولِ النَّخْلِ حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا بَعْضَ مَا أَعْجَبَنِى فَتَزَوَّجْتُهَا.
‘তোমাদের কেউ যখন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর এতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে এবং মেয়েটিকে (বিবাহ করতে) উদ্বুদ্ধ করে, সে যেন তা দেখে নেয়।’
অপর এক হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كُنْتُ عِنْدَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَنَظَرْتَ إِلَيْهَا ». قَالَ لاَ. قَالَ « فَاذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّفِى أَعْيُنِ الأَنْصَارِ شَيْئًا ».
‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জানাল যে সে একজন আনসারী মেয়েকে বিয়ে করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছো?’ সে বললো, না। তিনি বললেন, যাও, তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারীদের চোখে (সমস্যা) কিছু একটা রয়েছে’।’
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘এ হাদীস থেকে জানা যায়, যাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক তাকে দেখে নেয়া মুস্তাহাব।’

৫. ছবি বা ফটো বিনিময় :- নারী-পুরুষ কারো জন্য কোনোভাবে কোনো ছবি বা ফটো বিনিময় বৈধ নয়। কারণ, প্রথমত. এ ছবি অন্যরাও দেখার সম্ভাবনা রয়েছে, যাদের জন্য তা দেখার অনুমতি নেই। দ্বিতীয়ত. ছবি কখনো পূর্ণ সত্য তুলে ধরে না। প্রায়শই এমন দেখা যায়, কাউকে ছবিতে দেখে বাস্তবে দেখলে মনে হয় তিনি একেবারে ভিন্ন কেউ। তৃতীয়ত. কখনো এমন হতে পারে যে প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়া হয় বা প্রত্যাখ্যাত হয় অথচ ছবি সেখানে রয়েই যায়। ছবিটিকে তারা যাচ্ছে তাই করতে পারে।

৬. বিবাহের আগে প্রস্তাবদানকারীর সঙ্গে বাইরে বের হওয়া বা নির্জনে অবস্থান করা :- বিয়ের আগে প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে নির্জন অবস্থান বা তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা, এখনো সে বেগানা নারীই রয়েছে। পরিতাপের বিষয়, আজ অনেক মুসলমানই তার মেয়েকে লাগামহীন ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তারা প্রস্তাবদানকারী পুরুষের সঙ্গে ঘরের বাইরে যায়! উপরন্তু তার সঙ্গে সফরও করে! ভাবখানা এমন যে মেয়েটি যেন তার স্ত্রী হয়ে গেছে।

৭. বর-কনের পারস্পরিক যোগাযোগ করা :- প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের মাধ্যমে শুধু বিবাহের চুক্তি ও শর্তাদি বোঝাপড়ার জন্য যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে। তবে এ যোগাযোগ হতে হবে ভাব ও আবেগবিবর্জিত ভাষায়, যা একজন বেগানা নারী-পুরুষের জন্য বৈধ ভাবা হয় না। আর বলাবাহুল্য, বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণকারী কনের কেউ নন, যাবৎ না তারা বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, এ যোগাযোগ উভয়ের পিতার সম্মতিতে হওয়া শ্রেয়।

৮. একজনের প্রস্তাবের ওপর অন্যজনের প্রস্তাব না দেয়া :- যে নারীর কোথাও বিয়ের কথাবার্তা চলছে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বৈধ নয়। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لاَ يَخْطُبُ الرَّجُلُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ حَتَّى يَنْكِحَ ، أَوْ يَتْرُكَ.
‘কেউ তার ভাইয়ের প্রস্তাবের ওপর যেন প্রস্তাব না দেয়, যাবৎ না সে তাকে বিবাহ করে অথবা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।’
হ্যা, দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি প্রথম প্রস্তাবদাতার কথা না জানেন তবে তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে ওই নারী যদি প্রথমজনকে কথা না দিয়ে থাকেন তবে দু’জনের মধ্যে যে কাউকে গ্রহণ করতে পারবেন।

৯. ইদ্দতে থাকা নারীকে প্রস্তাব দেয়া :- বায়ান তালাক বা স্বামীর মৃত্যুতে ইদ্দত পালনকারী নারীকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়া হারাম। ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়া বৈধ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ
‘আর এতে তোমাদের কোন পাপ নেই যে, তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব করবে।’
তবে ‘রজঈ’ তালাকপ্রাপ্তা নারীকে সুস্পষ্টভাবে তো দূরের কথা আকার-ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়াও হারাম। তেমনি এ নারীর পক্ষে তালাকদাতা ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও প্রস্তাবে সাড়া দেয়াও হারাম। কেননা এখনো সে তার স্ত্রী হিসেবেই রয়েছে।
(সুস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। অস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি তোমার মতো মেয়েই খুঁজছি ইত্যাদি বাক্য।)

১০. এ্যাংগেজমেন্ট করা :- ইদানীং পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে যদি এমন ধরে নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, মুসলিম সমাজ বা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার হলো, এ আংটি প্রস্তাবদানকারী পুরুষ নিজ হাতে কনেকে পরিয়ে দেয়। কারণ, এ পুরুষ এখনো তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী হয়নি। কেননা, কেবল বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে গণ্য হবেন।

১১. উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা :- উপযুক্ত পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত নয়। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ.
‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে।’

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আজ আমাদের ভেবে দেখা দরকার, ইসলামের আদর্শ কোথায় আর আমরা কোথায়। ইসলাম কী বলে আর আমরা কী করি। আমরা কি অস্বীকার করতে পারি যে, এসব আদর্শ আজ আমাদের আমলের বাইরে চলে গেছে। আমাদের যাপিত জীবনে ইসলামের বিমল রঙ ফিকে হয়ে এসেছে। সত্যি কথা বলতে গেলে, আমরা বরং বর্জনীয় কাজগুলো করি আর করণীয়গুলো ভুলে থাকি। আল্লাহ মাফ করুন। এ কারণেই আমাদের বিয়ে-শাদীতে বরকত নেই। বিবাহিত জীবনে সুখ নেই। দাম্পত্য জীবনের সুখ আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত সুখের পরশ পেতে হলে, সুখ পাখির আগুন ডানা ছুঁতে হলে আজ আমাদের তাই ইসলামের কাছেই ফিরে আসতে হবে। ইসলামের আদর্শকেই আকড়ে ধরতে হবে। শুধু কনে দেখা আর বিয়ে-শাদীতেই নয়; জীবনের প্রতিটি কর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মুখে নয়; কাজে পরিণত করতে হবে তাঁর উম্মত দাবী। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে তাঁর যাবতীয় আদেশ এবং তাঁর রাসূলের সকল আদর্শ মেনে চলার তাওফীক দিন। আমীন।
তথ্য সুত্র:-
  • রা‘দ : ৩৮।
  • বুখারী : ৫০৫৬; মুসলিম : ৩৪৬৯।
  • বুখারী : ৫০৬৬; মুসলিম : ৩৪৬৪।
  • বুখারী : ১১৬৬; আবূ দাউদ : ১৫৪০।
  • তিরমিযী : ১৭১৪; বাইহাকী : ১৯২৮০।
  • শিহাবুদ্দীন আবশীহী, আল-মুসতাতরিফ ফী কুল্লি মুসতাযরিফ : ১/১৬৬।
  • বাইহাকী, সুনান কুবরা : ১৩৮৬৯।
  • মুসলিম : ৩৫৫০।
  • নববী, শারহু মুসলিম : ৯/১৭৯।
  • বুখারী : ৫১৪৪; নাসায়ী : ৩২৪১।
  • সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৩৫।
  • ফাতাওয়া জামেয়া লিল-মারআতিল মুসলিমা।
  • তিরমিযী: ১০৮৪।
সংকলক : আলী হাসান তৈয়ব, সম্পাদনা : মো: আব্দুল কাদের এবং প্রকাশ : ইসলামিক অলাইন মিডিয়া
বিস্তারিত

ইসলামের দৃষ্টিতে আন্তধর্ম বিয়ে এবং এর পরিণতি

আন্তধর্ম বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ? আসুন এ বিষয়ে জেনে নেই আজ। কারণ আমরা অনেকেই হয়ত বিষয়টা পুরুপুরি জানি না অথচ এটা নিয়ে নানা বাক বিতন্ডে লিপ্ত হই। তাই আমাদের সকলেরই বিষয়টা সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।
ইসলামের দৃষ্টিতে আন্তধর্ম বিয়ে এবং এর পরিণতি
একজন মুসলিম কখনো অমুসলিম নারীকে বিয়ে করতে পারে না। মুসলিম হয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكَٰتِ حَتَّىٰ يُؤۡمِنَّۚ وَلَأَمَةٞ مُّؤۡمِنَةٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكَةٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَتۡكُمۡۗ وَلَا تُنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤۡمِنُواْۚ وَلَعَبۡدٞ مُّؤۡمِنٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكُمۡۗ أُوْلَٰٓئِكَ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلنَّارِۖ وَٱللَّهُ يَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ وَٱلۡمَغۡفِرَةِ بِإِذۡنِهِۦۖ وَيُبَيِّنُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ ٢٢١ ﴾ [البقرة: ٢٢١]

‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২২১}

আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মারছিদ নামক এক সাহাবীকে মক্কায় প্রেরণ করেন গোপনে গিয়ে সেখানে থেকে যাওয়া লোকদের আনতে। তিনি সেখানে পৌঁছলে ‘ইনাক নামক এক মুশরিক নারী তাঁর কথা শুনতে পায়। সে ছিল তাঁর জাহেলী যুগের বান্ধবী। সে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আবূ মারছিদ তুমি কি আমায় সান্নিধ্য দেবে না? তিনি বললেন, ধ্বংস হও তুমি হে ‘ইনাক, ইসলাম এখন আমাদের মাঝে ওই কাজে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। সে বলল, তবে কি তুমি আমায় বিয়ে করতে পার? তিনি বললেন, হ্যা, কিন্তু আমাকে আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যেতে হবে। তাঁর কাছে আমি (তোমাকে) বিয়ে করার অনুমতি প্রার্থনা করব। সে বলল, তুমি আমাকে উপেক্ষা করছ? অতপর মেয়েটি তাঁর বিরুদ্ধে (নিজ গোত্রীয়) লোকদের সাহায্য চাইল। তারা তাঁকে বেদম প্রহার করল। তারপর তাঁর পথ ছেড়ে দিল। মক্কায় নিজের কাজ সেরে তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন, তাঁকে তিনি নিজের অবস্থা, ‘ইনাকের বিষয় এবং এ জন্য প্রহৃত হবার ঘটনা জানালেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার জন্য কি তাকে (মুশরিক নারীকে) বিয়ে করা হালাল হবে? তখন আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন।

এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম ইবনু জারীর আত-তবারী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

اخْتَلَفَ أَهْلُ التَّأْوِيلِ فِي هَذِهِ الآيَةِ : هَلْ نَزَلَتْ مُرَادًا بِهَا كُلُّ مُشْرِكَةٍ ، أَمْ مُرَادًا بِحُكْمِهَا بَعْضَ الْمُشْرِكَاتِ دُونَ بَعْضٍ ؟ وَهَلْ نُسِخَ مِنْهَا بَعْدَ وُجُوبِ الْحُكْمِ بِهَا شَيْءٌ أَمْ لاَ ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ : نَزَلَتْ مُرَادًا بِهَا تَحْرِيمُ نِكَاحِ كُلِّ مُشْرِكَةٍ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ مِنْ أَيِّ أَجْنَاسِ الشِّرْكِ كَانَتْ عَابِدَةَ وَثَنٍ أَوْ كَانَتْ يَهُودِيَّةً أَوْ نَصْرَانِيَّةً أَوْ مَجُوسِيَّةً أَوْ مِنْ غَيْرِهِمْ مِنْ أَصْنَافِ الشِّرْكِ ، ثُمَّ نُسِخَ تَحْرِيمُ نِكَاحِ أَهْلِ الْكِتَابِ بِقَوْلِهِ : {يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ} إِلَى {وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَهُمْ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ} ..ذِكْرُ مَنْ قَالَ ذَلِكَ :

‘আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর বিশারদগণ এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন যে এতে সকল মুশরিকের কথা বলা হয়েছে নাকি কতিপয় মুশরিকের কথা। আর আয়াতটি নাযিল করার পর এর কিছুকে মানসূখ বা রহিত করা হয়েছে কি-না। তাঁদের কেউ বলেছেন, আয়াতে সকল মুসলিমের জন্য সব মুশরিক নারীর বিবাহকে হারাম বুঝানো হয়েছে। চাই সে যে কোনো ধরনের শিরকেই লিপ্ত থাকুক না কেন। হোক সে মূর্তিপূজারী, ইহুদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজারী বা অন্য কোনো ধরনের শিরকে লিপ্ত কেউ। অতপর আহলে কিতাবদের বিয়ে হারামের বিয়ষটি রহিত ঘোষণা করা হয় নিচের আয়াতের মাধ্যমে। আল্লাহ তা‘আলা তাতে ইরশাদ করেন,

﴿ ٱلۡيَوۡمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حِلّٞ لَّكُمۡ وَطَعَامُكُمۡ حِلّٞ لَّهُمۡۖ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ إِذَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِيٓ أَخۡدَانٖۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٥ ﴾ [المائ‍دة: ٥]

‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৫} এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সতী-সাধ্বী খ্রিস্টান ও ইহুদীদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন।

একই শাস্ত্রের আরেক ইমাম ইবন কাছীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ সাধারণভাবে শিরকে লিপ্ত সব নারীকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা করেছেন, চাই সে মূর্তিপূজক কিংবা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ভুক্ত হোক। তবে পরবর্তীতে মায়িদার আয়াতে তাদের মধ্যে কেবল আসমানী কিতাবধারী সচ্চরিত্রা নারীদের বিশেষভাবে বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে প্রতিভাত হয় যে বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষেই কেবল খ্রিস্টান বা ইহুদী নারীকে কোনো মুসলিম বিয়ে করতে পারে। এক. বাস্তবিকই আহলে কিতাব হতে হবে। শুধু নামে ইহুদী কিংবা খ্রিস্টান হলে চলবে না। নামে ইহুদী-খ্রিস্টান অথচ সে নাস্তিক কিংবা নিজ ধর্মকে বিশ্বাস করে না; তাহলে চলবে না। দুই. অবশ্যই তাকে পবিত্র হতে হবে। ব্যভিচারিণী হলে চলবে না। তিন. এমন কাউকে বিয়ে করা যাবে না যার জাতি পুরো মুসলিম উম্মতের সাথে ঘোর শত্রুতা পোষণ করে, যেমন : বর্তমান সময়ের ইসরাঈলের ইহুদীরা। চার. বিয়ের কারণে স্বামীর সন্তানের কোনো বৈষয়িক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা থাকলেও আহলে কিতাব বিয়ে করা যাবে না।

আন্তধর্ম বিয়ের ভয়াবহ পরিণতি

বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন। নিজের খেয়াল-খুশি মতো এ বন্ধনের নিয়মে ব্যত্যয় ঘটাবার সুযোগ নেই। ইসলাম মানবজীবনের সব পর্যায়ের যাবতীয় উপলক্ষ ও অনুসর্গকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেমন হবে, দিয়েছে তার দ্ব্যর্থহীন দিকনির্দেশনা। এই জীবনদিশা আল্লাহ প্রদত্ত বিধায় এর মধ্যে কোনো গলদ নেই। সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই। এর বাইরে যাওয়ার চেষ্টা মানেই নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে আনা। ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম দিয়ে বল্গাহীনভাবে কিছু করার স্বাধীনতা ইসলামে নেই। যারা নিজের স্বাধীনতা দিয়ে অন্যের ধর্ম, সম্মান, রীতি-নীতি ও স্বাধীনতাকে নষ্ট করে তারা মানবতার শত্রু।

আন্তধর্ম বিয়ের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। বাংলাদেশে আগে দেখা যেত, কেউ নিজের ধর্ম ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইলে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করতে হতো বিধায় সহজে কেউ ওপথে হাঁটতো না। এখন বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। ধর্ম ত্যাগ না করেই যুবক-যুবতীরা তাদের রঙ্গলীলা সাঙ্গ করতে নেমে পড়বে। কোনো ধর্মের স্বকীয়তা আর থাকবে না। যার ফল দাঁড়াবে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজ ব্যবস্থাই ধর্মহীন হয়ে পড়বে। যেনা-ব্যভিচার ডাল-ভাতে পরিণত হবে। জন্ম নেবে জারজ সন্তান। একদিন জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। আর এই ব্যভিচার নামক গর্হিত কাজটি আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও সমগ্র উম্মাহর ঐক্যমত্যে হারাম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [الاسراء: ٣٢]

‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’। {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৩২}

ব্যভিচার তো দূরের কথা ইসলামে যে কোনো ধরনের অশ্লীলতাকেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣ ﴾ [الاعراف: ٣٣]

‘বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। {সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ৩৩}

অপর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,

﴿ ۞قُلۡ تَعَالَوۡاْ أَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَيۡكُمۡۖ أَلَّا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗاۖ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ١٥١ ﴾ [الانعام: ١٥١]

‘বল, ‘এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি। তা এই যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}

যেনা-ব্যভিচারের ভয়াবহতা তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

« لا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ , وَلا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ , وَلا يَنْتَهِبُ مُنْتَهِبٌ النُّهْبَةَ يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ».

‘যেনাকারী মুমিন থাকে না যখন সে যেনা করে, আর মদ্যপ মুমিন থাকে না যখন মদ পান করে, চোর মুমিন থাকে না যখন সে চুরি করে, ছিনতাইকারী মুমিন থাকে না যখন সে কোনোরূপ ছিনতাই করে আর লোকেরা তার দিকে (বিস্ময় বিস্ফোরিত নেত্রে) চেয়ে থাকে।’

আবদুর রহমান ইবন সাখার রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

« إِذَا زَنَى الْعَبْدُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيمَانُ فَكَانَ فَوْقَ رَأْسِهِ كَالظُّلَّةِ فَإِذَا خَرَجَ مِنْ ذَلِكَ الْعَمَلِ عَادَ إِلَيْهِ الْإِيمَانُ ».

‘বান্দা যখন যেনা করে তখন তার কাছ থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং তা ছায়ার মতো (শূন্যে) দুলতে থাকে। অতপর যখন সে ওই কাজ থেকে নিবৃত হয়, তখন তার কাছে ঈমান ফিরে আসে।’

বিশেষ বিবাহ আইনটি বাংলাদেশে কার্যকর হলে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দু’ধর্ম পালনকারী দম্পতির সন্তানরা। মানসিকভাবে তারা বিকারগ্রস্ত হবে। মুসলিম বাবা বলবেন, আল্লাহ এক আর মা বলবেন ঈশ্বর তিনজন অথবা আমাদের অসংখ্য খোদা রয়েছেন। মুসলিম বাবা যেটাকে বলবেন সত্য সেটাকেই অমুসলিম মা বলবেন অসত্য। মা-বাবার এই বিপরীত অবস্থান থেকে সন্তানের মনে ঘৃণার জন্ম নেবে। জীবনের ঊষাকাল থেকে মধ্যগগন অবধি সে হাবুডুবু খাবে সিদ্ধান্তহীনতার চোরাবালিতে। এছাড়া উত্তরাধিকারী হয়ে মা বাবার সম্পত্তি ভোগ করতেও ঝামেলায় পড়তে হবে সন্তানকে। প্রচলিত আইনে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার পেতেও তাদের ঝামেলা পোহাতে হবে। মোটকথা নৈরাজ্য ছাড়া উপায় নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক দৈনিক নয়াদিগন্তকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের মুসলিম স্ত্রীর কথা তুলে ধরে বলেন, ওই পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানটি কোন ধর্ম গ্রহণ করবে, সেটি নির্ধারণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে সমস্যা এখন মনোমালিন্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, দেশের একজন খ্যাতিমান প্রবাসী কথাশিল্পীর স্বামী মুসলিম। তিনি হিন্দু। তার সন্তান মারা যাওয়ার পর তাকে জানাযা দেয়া হবে নাকি দাহ করা হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এ ধরনের বিয়ে সমাজে কোনো রকমের ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এটা একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে মাত্র। (১ মে সংখ্যা)

তাই পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের অনুসারীকে বিয়ে করাটা ভালোভাবে নেয় না। এটি একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। ব্যতিক্রম শুধু ইহুদী ধর্ম। তাদের ব্যাপারটি বেশ মজারও বটে! ইহুদীরা তাদের মেয়েদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিয়ে দেয়, কিন্ত কখনোই ছেলেদের এই অনুমতি দেয় না। কারণ তাদের বিশ্বাস, সন্তানেরা তাদের মায়েদের ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ কারণে বিল ক্লিন্টনের মেয়েকে এক ইহুদী ছেলে বিয়ে করায় জুইস কাউন্সিল এর তীব্র সমালোচনা করেছিল। অতএব নিজেদের জাতকে বিশুদ্ধ রেখে অন্য সকল ধর্মের মধ্যে ফ্রি মিক্সিং বা জগাখিচুড়িকে উত্সাহিত করা ইহুদীদের কৌশল। বাংলা রম্য রচনার বরপুত্র সৈয়দ মুজতবা আলীর কর্নেল গল্পে এর ইঙ্গিত দেওয়া আছে।

ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ মতে শিশুকে তার বাবা মায়ের ধর্মের অনুসারী ধরা হলে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হয়। শিশুকে যে কোনো নীতি বা আদর্শের দীক্ষা দেওয়াই তার স্বাধীনতার পরিপন্থী! তাই হয়তো বড় হয়ে বিবেক-বুদ্ধি অনুসারে যে কোনো ধর্মের অনুকরণ করা না করা তার এখতিয়ারে রাখা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, দেশাত্ববোধের বিষয়টিও কি তার ইচ্ছাধীন? বড় হয়ে তার কি দেশের সংবিধান ও আদর্শে বিশ্বাসী না হবারও অধিকার রয়েছে? কোনো উদারতম ধর্মনিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও কিন্তু এ অধিকার দেবে না।

আসলে মানুষ কখনোই পুরোপুরি স্বাধীন নয়। তার স্বাধীনতা সীমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। আর একজন মুসলিমের স্বাধীনতার প্রথম শর্তই হলো তা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির মধ্যে থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]

‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। {সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৮৫}

কেউ সুন্দরী বিধর্মী নারীতে মজে আল্লাহর বিধান উপেক্ষা করবেন আর নিজেকে খুব ভালো মুসলিম ভেবে আবার তৃপ্তও হবেন তা কিন্তু হয় না। তারা মূলত বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কিছু মানা আর কিছু না মানার কোনো সুযোগ ইসলামে রাখা হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفۡعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمۡ إِلَّا خِزۡيٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلۡعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٨٥ ﴾ [البقرة : ٨٥]

‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৫}

নিজের মন মতো নয় আমাদের সব কাজ হতে হবে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]

‘অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়’। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৬৫}

বাংলাদেশে আন্তধর্ম বিয়ে আইন

নিজ ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে যেসব নারী-পুরুষ বিয়ে করতে আগ্রহী তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে গত ১৮ এপ্রিল ২০১২ ইং আইনমন্ত্রীর এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) আকছির এম চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতদিন এই বিয়ে পড়ানোর একমাত্র স্থান হিসেবে নির্ধারিত ছিল পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী শরৎচন্দ্র ব্রাহ্ম প্রচারক নিবাস। এখানে প্রাণেশ সমাদ্দার ছিলেন সরকার নিযুক্ত একমাত্র রেজিস্ট্রার। এখন উভয়ে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে যে কোনো ধর্মের (হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-মুসলমান) নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।

এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। ধর্ম পরিবর্তন ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে পারবে। ইচ্ছে করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে অথবা যে কোনো একজন নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিতে পারে। এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। বড় হয়ে (১৮ বছর) তারা যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে অথবা ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে। (১ মে, ২০১২ দৈনিক নয়া দিগন্ত ও আমার দেশ)

আইন সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

আইনটি পাসের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে দেশের আলেম সমাজ একে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। সকল দল-মতের ইসলামী ভাবাপন্ন নেতৃবৃন্দ এবং সর্বশ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মানুষ এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বলছে, প্রস্তাবিত আইনে ইসলামবিরোধী কিছু নেই।

১৫ মে (সোমবার) আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিবাহ আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘বিশেষ বিবাহ আইনটি ১৮৭২ সালে প্রণীত হয়েছে। এ আইন এখনো বর্তমান আছে। বর্তমান সরকারের সময় এ আইনের কোনো প্রকার সংশোধন হয় নি। আইনটি অপরিবর্তিত অবস্থায় বহাল আছে।’

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘১৮৭২ সালের এ আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। তারা ১৮ বছর বয়সের পর যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে।’ (আমার দেশ : ১৬/০৫/২০১২)

আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার অসারতা

বক্তব্যটি আসলে একটি স্পষ্ট মিথ্যাচারের নমুনা। কেননা, ১৮৭২ সালের আইনেও মুসলমান কর্তৃক বিধর্মীদের বিয়ে জায়িয বলা হয় নি। ১৮৭২ সালের বিশেষ বিয়ে আইনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি খ্রিস্টান, ইহুদী, হিন্দু, মুসলিম, পারসি, বৌদ্ধ, শিখ অথবা জৈন কোনো ধর্মই পালন করে না, তারা এ আইনের অধীনে বিয়ে করতে পারে। এ আইনের অধীনে বিয়ে করতে হলে পাত্র-পাত্রীকে ঘোষণা করতে হবে, তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। ধর্ম ত্যাগের ঘোষণা না করলে বিয়েটি অবৈধ, বরং বাতিল হবে। তবে বিয়েটি যদি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈনদের মধ্যে সম্পাদন করা হয় তাহলে তারা নিজ নিজ ধর্ম অনুসরণ করতে পারবে। নিচে ১৮৭২ সালে প্রণীত স্পেশাল ম্যারিজ এ্যাক্ট বা বিশেষ বিবাহ আইনটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
THE SPECIAL MARRIAGE ACT, 1872
(ACT NO. III OF 1872). [18th July, 1872]
Local extent 1. This Act extends to the whole of [Bangladesh].
An Act to provide a form of Marriage in certain cases.
Preamble WHEREAS it is expedient to provide a form of marriage for persons who do not profess the Christian, Jewish, Hindu, Muslim, Parsi, Buddhist, Sikh or Jaina religion, and for persons who profess the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina religion and to legalize certain marriages the validity of which is doubtful; It is hereby enacted as follows:–
Conditions upon which marriages under Act may be celebrated :

2. Marriages may be celebrated under this Act between persons neither of whom professes the Christian or the Jewish, or the Hindu or the Muslim or the Parsi or the Buddhist, or the Sikh or the Jaina religion, or between persons each of whom professes one or other of the following religions, that is to say, the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina religion upon the following conditions:–
  1. neither party must, at the time of the marriage, have a husband or wife living:
  2.  the man must have completed his age of eighteen years, and the woman her age of fourteen years, according to the Gregorian calendar:
  3. each party must, if he or she has not completed the age of twenty-one years, have obtained the consent of his or her father or guardian to the marriage:
  4. the parties must not be related to each other in any degree of consanguinity or affinity which would, according to any law to which either of them is subject, render a marriage between them illegal.
1st Proviso- No such law or custom, other than one relating to consanguinity or affinity, shall prevent them from marrying.

2nd Proviso- No law or custom as to consanguinity shall prevent them from marrying, unless a relationship can be traced between the parties through some common ancestor, who stands to each of them in a nearer relationship than that of great-great-grand-father or great-great-grand-mother, or unless one of the parties is the lineal ancestor, or the brother or sister of some lineal ancestor, of the other.
আইনের ধারাগুলো পড়লেই বুঝা যায় বর্তমানে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃটিশ প্রণীত এই আইনটিকে বলা হয়েছে ‘বিশেষ বিবাহ আইন’। পক্ষান্তরে সরকার যে আইনটি করতে যাচ্ছে তা মূলত তো ‘আন্তধর্ম বিয়ে আইন’। বিশেষ আর আন্তধর্ম বিয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ বিবাহ আইন হলো, স্বধর্মত্যাগীদের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে আন্তধর্ম বিয়ে হলো, এক ধর্মের লোকের সঙ্গে আরেক ধর্মাবলম্বীর বিয়ে।

সুতরাং বৃটিশ আমলে খ্রিস্টান সরকারও কিন্তু সরাসরি কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধাতে যায় নি। অতএব কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভোটে নির্বাচিত মুসলিম সরকারকে বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। যারা এমন বিয়ের বাঁধনে জড়াতে চান তাদের উদ্দেশে বলি, সমাজ ও ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই যদি বিয়ে করতে হয় তবে এ সম্পর্কে জড়ানোর কী দরকার? যারা সরাসরি আল্লাহর বাণীকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছে যেনা-ব্যভিচার তো কোনো ব্যাপারই না। এ দিয়েই তো তাদের কাজ চলার কথা। সামাজিক ও আইনগত দায়বদ্ধতায় আনতেই কি তবে তাদের বিয়ের বৈধতা প্রয়োজন? উত্তর হ্যা হলে প্রশ্ন, যারা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতির তোয়াক্কা করে না তাদের সামাজিক বৈধতা দিতে রাষ্ট্রের এত দায় কেন?

এটি আসলে প্রবঞ্চনামূলক জবাব। তা না হলে হঠাৎ করে দু’জন কাজী নিয়োগ দিয়ে কেন বলা হবে, সারাদেশেও প্রয়োজন হলে এ ধরনের কাজী নিয়োগ হবে। যেখানে বছরে দু-চারজন নিজ ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে-শাদি করছে সেখানে কয়জন কাজী লাগে? তাছাড়া ১৮৭২ সনের বৃটিশ আইনই আমাদের রাখার দরকার কী? প্রতিনিয়ত সব কিছু উল্টাতে পারলে ওই আইন নিয়ে কেন মাথা ব্যথা?

অতএব সরকার ও দেশের সর্বশ্রেণীর মুসলিম ভাই-বোনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা না জেনে না বুঝে পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তা-ই হবে আমাদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সর্বশক্তিমান আল্লাহই একমাত্র আমাদের ভরসাস্থল; কেবল তিনিই যাবতীয় প্রতিকূলতা থেকে এই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সুমতি দান করুন। আমীন।
- আলী হাসান তৈয়ব এবং সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
তথ্য সুত্র :-
  • তাফসীর তাবারী : ৪/৩৬৪।
  • তাফসীরে তাবারী : ৪/৩৬৩; আল-ওয়াসিত : ৩২০-৩২১।
  • তাফসীরে ইবন কাছীর : ১/৪৭৪।
  • তাফসীরে কুরতুবী : ৩/৬৭-৬৯।
  • বুখারী : ২৪৭৫; মুসলিম : ৫৫৩।
  • আল-মুস্তাদরাক আলাস-সাহীহাইন : ৫৫; বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান : ৪৯৬৪।
বিস্তারিত