ধর্মীয় নির্দেশনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ধর্মীয় নির্দেশনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৪

সুন্নতে খতনা করানোর বহুবিদ সুফল এবং বৈজ্ঞানিক গুরত্ব

খতনা একজন পুরুষের জীবনঘনিষ্ঠ সভাবকর্ম (ফিতরাত)। ইসলামে এটি সুন্নত, মুসলমানদের অনুসরণীয় স্বাস্থ্যবিধি। সাধারণ পরিভাষায় খতনাকে ‘মুসলমানি’ বলা হয়। মুসলিম জাতির পিতা অভিধায় ভূষিত হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রবর্তিত সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত এটি। হজরত ইবরাহিম (আ.) ঐশী নির্দেশে ৯৯ বছর বয়সে, হজরত ইসমাঈল (আ.) ১৩ বছর বয়সে এবং হজরত ঈসা (আ.) ৮ বছর বয়সে খতনা করেছেন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও খতনা করেছেন।

এটি মূলত পয়গম্বর (আ.) এর প্রবর্তিত সুন্নত। এ মর্মে কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইসলাম গ্রহণ করলে নবী করিম (সা.) খতনা করার আদেশ করেছেন আর নবীজির নির্দেশ মেনেই তা পালন করা ওয়াজিব। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, 'পাঁচটি বিষয় মানুষের ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ ছাঁটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা, নাভির নিম্নাংশের লোম চেঁছে ফেলা ও খতনা করা।' (সুনানে নাসায়ি)।
সুন্নতে খতনা করানোর বহুবিদ সুফল এবং গুরত্ব
আলী বলেছেন, 'ফিতরাত ৫টি, খাতনা করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভির নিম্নাংশে), বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ ছোট করা।' (বোখারি : ৫৪৬৯)।

খতনা হচ্ছে লিঙ্গের অগ্রভাগের ত্বক কেটে বাদ দেয়া। এ ত্বক লিঙ্গ মু-কে ঢেকে রাখে। খতনা আরবি শব্দ, ইংরেজিতে বলে "সারকামসিশন (Circumcisions)"। এ প্রথাটি পৃথিবীতে চালু আছে সেমেটিকিয় যুগ থেকে। ইসলাম ছাড়া খ্রিস্ট ও ইহুদি ধর্মে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। অন্যান্য ছোট ছোট ধর্ম-সংস্কৃতি-উপজাতি সমাজ ও অঞ্চলে এটা চালু আছে। মহিলাদের খতনা করার রীতিও বর্তমান আছে, বিশেষ করে আরব্য উপজাতি ও আফ্রিকান সমাজে।

পুরুষদের খতনার বিষয়টি ইসলামসম্মত, ওয়াজিব বটে যা নবী করিম (সা.) এর নির্দেশিত পদ্ধতি। খতনার আদর্শ সময় শৈশবকাল। শিশুর বয়স বেশি হলে খতনা করাতে গেলে তার জন্য ভীতিকর ও কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে হাজম (ডাক্তার নন) দ্বারা খতনা করার ঐতিহ্য আছে। তবে অভিজ্ঞ ডাক্তার-সার্জন দ্বারা খতনা করানোর মতো সচেতনতা অভিভাবকদের থাকা উচিত।

সুন্নতে খতনার বৈজ্ঞানিক সুফল

পুরুষের খতনাকে আধুনিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন। খতনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক (ব্যাকটেরিয়া) জাতীয় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খতনার প্রধান সুবিধা হলো এর ফলে লিঙ্গের অগ্র ত্বকে যে রিত তরল জমে নোংরা অবস্থার সৃষ্টি করে তা থেকে লিঙ্গ রেহাই পেতে পারে।

দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (সা.) খতনার কথা বলেছেন, ব্যাপক গবেষণা শেষে আজকের আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করেছে, খতনার ব্যাপক উপকারিতা আছে। খতনার সুফল নিয়ে চমৎকার গবেষণা করেছেন অস্ট্রেলীয় মেডিকেল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিস। তার গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের সারকামসিশন (খতনা) করা হয়নি তাদের যেসব বালককে খতনা করানো হয় তাদের অপেক্ষা কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন ৪ থেকে ১০ গুণ বেশি হয়। তিনি মনে করেন, সারকামসিশনের (খতনা) মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালির ইনফেকশন হ্রাস করা যায়।

এ ব্যাপারে ইউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূত্রনালির প্রদাহ শিশুদের বেশি হয় এবং এতে কিডনির সমস্যা, জ্বর ও রক্তের ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি সারকামসিশন (খতনা) মরণব্যাধি এইডস ও যৌন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। সাধারণ অর্থে লিঙ্গের ক্যানসার হলো অপরিচ্ছন্নতার ব্যাধি। পুরুষাঙ্গের শীর্ষে ঘা হয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে এক সময় ক্যানসারে রূপ নেয় এমন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, খতনা করানো পুরুষের চেয়ে খতনা না করানো পুরুষ এ ধরনের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

পাশ্চত্যে আজকাল স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে খতনা করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষের খতনা এইচআইভি ও এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। আফ্রিকার যে দেশে খতনার হার বেশি সেসব দেশে এইডসের হার তুলনামূলক কম। 

যৌন বিজ্ঞানীরা বহুকাল আগে থেকেই বলে আসছে-পুরুষের খতনা করালে স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। এতে করে যৌন মিলনে অধিক আনন্দ উপভোগ করে নারী-পুরুষ উভয়েই। পরিতৃপ্তির মাত্রাটাও বেশি হয়। অমুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝেও খতনার প্রচলন রয়েছে। আফ্রিকার ‘ঝোসা’ সম্প্রদায়ের মাঝে কথিত আছে খতনা না করালে 'পুরুষ' হওয়া যায় না, বালক থেকে যায়। এ সম্প্রদায়েরই পুরুষ বিশ্বনন্দিত অবিসংবাদিত নেতা সদ্য প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলাও খতনা করেছেন।
লেখক :- মোতাওয়াল্লি, হজরত কায়েদ সাহেব হুজুর (রহ.)
বিস্তারিত

শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

মুসলিম বোনদের যা অনুধাবন করা অতি জরুরি

প্রতিটি মুসলিম বোনের জন্য অপরিহার্য হলো ইসলাম তার কাছে কী চায় তা জানা। আল্লাহর অভিপ্রায় উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত হওয়া। ইসলাম চায় মানুষের চেতনা পরিচ্ছন্ন রাখতে। চায় নারীকে ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা থেকে দূরে রাখতে। ইসলাম নিশ্চিত করে নারীর ইহকালীন সার্বিক নিরাপত্তা এবং পরকালীন মুক্তি। 
মুসলিম বোনদের যা অনুধাবন করা অতি জরুরি
ইসলাম এমন একটি পুণ্যময় সমাজ বিনির্মাণে সচেষ্ট, যেখানে মানুষের সহজাত লালসাকে উদ্বিপ্ত করা হয় না। উত্তেজিত করা হয় না তার কাম প্রবৃত্তিকে। এতে বরং সর্বত্র বিদ্যমান ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। এটি সুন্দর পথ বেষ্টিত। উত্তম চরিত্র মাধুর্যের বর্মে সুরক্ষিত। ইসলামে যথাযথভাবে লক্ষ্য রাখা হয় নারী-পুরুষের দৈহিক, মানসিক ও প্রাকৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতি। ইসলাম তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। প্রত্যেকের অধিকার ও প্রাপ্যও সুস্পষ্ট বলে দিয়েছে। নারী বা পুরুষ- কেউই যাতে রিপুর তাড়নায় বিপথগামী, ধ্বংসের পথযাত্রী না হয় সেজন্য এই দীন বিয়েকে বানিয়েছে সর্বোত্তম ব্যবস্থা আর বৈবাহিক সম্পর্কের সৌন্দর্যকে বানিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। আর নারী-পুরুষের জন্য হারাম করেছে ব্যভিচার ও এর প্রতি প্ররোচনা দানকারী এবং এর ইন্ধনদাতা সবকিছু। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [الإسراء: ٣٢]
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ২৩}

এ লক্ষে নারীর জন্য করেছে পর্দা অপরিহার্য। নির্দেশ দিয়েছে তাদের গৃহাভ্যন্তরে থাকতে। নিষিদ্ধ করেছে সব ধরনের বেহায়া ও বেলেল্লপনা। এদিকে পুরুষদের আদেশ দিয়েছে তাদের কাছে আসার আগে অনুমতি গ্রহণ করতে। বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ থেকে নিজেকে সংযত করতে। কারণ, উভয় লিঙ্গের মধ্যেই প্রোথিত করা হয়েছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সহজাত আকর্ষণ। আল্লাহ তা‘আলা তা করেছেন মানব প্রজাতির বংশবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার স্বার্থে। এরই ভিত্তিতে নারী-পুরুষ উভয়ের রয়েছে তাদের স্বভাব-প্রকৃতি ও জৈবিক চাহিদা অনুপাতে প্রয়োজনীয় ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা।

যেহেতু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ দুর্বার ও দুর্দমনীয় বিষয়। আর প্রাণীজগতে- মানুষ যার শ্রেষ্ঠতম জাতি- উভয়ের মাঝে এ প্রবল ঝোঁকের অনেক কারণও বিদ্যমান, তাই ইসলাম এই আকর্ষণের উত্তাপকে আপাত শীতল এবং এ প্রবণতার বহ্নিকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়েছে। এটিকে শালীন ও শোভনীয় গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে। যাতে তার প্রয়োগ ঘটে কেবল পবিত্র ও নিরাপদ ক্ষেত্রে।

সেহেতু সব পরপুরুষ থেকে নারীর জন্য তার আল্লাহ প্রদত্ত ও অর্জিত সৌন্দর্য তথা সারা দেহ আবৃত রাখার বিধান বা শরয়ী পর্দা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে সে সুরক্ষিত থাকে দুর্বিনীত দৃষ্টি থেকে। একইভাবে তার জন্য সকল উত্তেজক আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং উলঙ্গপনা ও সৌন্দর্য প্রদর্শনকে বড় অপরাধ বিবেচনা করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, তাকে লাঞ্ছনা, স্বেচ্ছাচারিতা, অবাধ মেলামেশা, সন্দেহপূর্ণ বন্ধুত্ব ও বিষাক্ত হাস্য-রসিকতা থেকে উন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسۡتُنَّ كَأَحَدٖ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيۡتُنَّۚ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِٱلۡقَوۡلِ فَيَطۡمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلۡبِهِۦ مَرَضٞ وَقُلۡنَ قَوۡلٗا مَّعۡرُوفٗا ٣٢ وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [الأحزاب: ٣٢، ٣٣]
‘হে নবী পত্নীগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩২-৩৩}

এখানে নবীপত্নীগণ ও তাঁদের পরবর্তী সকল মুমিন নারীকে সম্বোধন করা হয়েছে। ইসলাম এ পন্থা অবলম্বন করেছে পর্দা, পবিত্রতা ও লজ্জার প্রচারে। অবনত দৃষ্টি, লজ্জাস্থান হেফাজত, নারী-পুরুষের আত্মিক শূচি রক্ষায়। নারীর প্রতি যৌন লোলুপতা রুখতে। ফিতনা-ফাসাদ ও সন্দেহ-অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি থেকে তাকে দূরে রাখতে।

নারীরা হলেন ইসলামী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মৌল। কারণ, তাদের ওপরই ন্যস্ত আগামী প্রজন্মের আবেগ-অনুভূতি এবং চিন্তা-চেতনাকে সুস্থ ও অমলিন রাখার দায়িত্ব। প্রবৃত্তি তথা রিপুর তাড়না ও অধোমুখী পাশবিক আচরণের দূষণ থেকে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার সুকঠিন যিম্মাদারিও অর্পণ করা হয়েছে তাদের ওপর। এভাবেই নারীরা অবদান রাখেন সমাজকে পবিত্র করতে এবং এর প্রকৃত সম্পদ ও মর্যাদা অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখতে।

এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নারীদের ওপর এসব দায়িত্ব অর্পণ করে, এর মাধ্যমে তাদের সম্মানিত বানিয়ে তাদেরকে চরিত্রহীনতার সব ধরণের সংশ্লেষ এবং অশান্তি সৃষ্টিকারী ক্ষুধার্ত পুরুষের চোরা দৃষ্টির আওতা থেকে যোজন দূরে অবস্থানে করার নির্দেশ দিয়েছেন। উপরন্তু তাদেরকে পাপাচারীদের নাগাল থেকে আপন ইজ্জত-আব্রু রক্ষার উপদেশও দিয়েছে এই পবিত্র ধর্ম। তাদের উদ্বুদ্ধ করেছে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বৈধ ক্ষেত্র ছাড়া আপন লজ্জাস্থানকে যে কোনো মূল্যে সুরক্ষিত রাখতে।

তবে হ্যা, আল্লাহ তা‘আলা সম্মানিতা মহিলাদের জন্য সৌন্দর্য চর্চাও বৈধ করেছেন। কেন নয়, তিনিই তো তাদের স্বভাব এমন বানিয়েছেন যে, তারা সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য চর্চা করতে পছন্দ করে। ইসলাম এই সহজাত আগ্রহকে অস্বীকার বা অবদমন করে না। বরং একে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে। সে যেন তার সমুদয় রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্য সুধা দিয়ে একমাত্র স্বামীরই হৃদয় হরণ করে। নারী যখন তার কমনীয়তা ও মোহময়তা স্বামীতেই সমর্পণ করে, তখন তা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় এবং ছাওয়াবের কাজ। এদিকে ইঙ্গিত করে হাদীছে যেমন বলা হয়েছে, আবূ যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« وَفِى بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ ». قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِى أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ « أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِى حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِى الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ».
‘আর তোমাদের লজ্জাস্থানেও রয়েছে সদকা। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের কেউ তার যৌন চাহিদা মেটাবে আর তাতেও তার জন্য ছাওয়াব হবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে করো সে যদি তা হারাম জায়গায় মেটায় তবে কি তার সে থেকে গুনাহ উপার্জিত হবে না? (অবশ্যই হবে) ঠিক সেভাবেই যখন সে তা হালাল জায়গায় মেটাবে, তার জন্য ছাওয়াব লিখা হবে। [মুসলিম : ৬০০১; মুসনাদ আহমদ : ২১৫১১]

আল্লাহ তা‘আলা মুমিন নারীদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে। আপন ইজ্জত রক্ষা করে এবং আকর্ষণীয় অঙ্গগুলো আবৃত রাখে। যাতে কোনো অসুস্থ অন্তর বা অসংযত দৃষ্টির অধিকারী পুরুষ তার টিকিটিও স্পর্শ করতে না পায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ﴾ [النور: ٣١]
‘আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১}

একজন মুমিন নারী যার হৃদয় আল্লাহর নূরে উদ্ভাসিত, সে কখনো আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যে ছাড় দেয় না। সে কখনো আল্লাহ ও তদীয় রাসূল নির্দেশিত বিষয় পালনে কিংবা তাঁদের নিষেধকৃত বিষয় বর্জনে পিছ পা হয় না। যদিওবা তার মন চায় রূপ প্রদর্শন করতে এবং সৌন্দর্য প্রকাশ করতে। কারণ, সজীব আত্মাধারী নারীরা পূর্বসূরী পুণ্যাত্মা নারীদেরই আদর্শ মানেন। যাদের সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
يَرْحَمُ اللَّهُ نِسَاءَ الْمُهَاجِرَاتِ الأُوَلَ لَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ: {وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ} شَقَّقْنَ مُرُوطَهُنَّ فَاخْتَمَرْنَ بِهِ.
‘আল্লাহ হিজরতকারী অগ্রবর্তী নারীদের ওপর রহমত করুন। যখন তিনি নাযিল করলেন, ‘আর তারা যেন তাদের বক্ষের ওপর ওড়না টেনে দেয়’ তখন তারা তাদের নিম্নাংশের কাপড়ের প্রান্ত ছিড়ে ফেলেন এবং তা দিয়ে ওড়না বানিয়ে নেন।’ [বুখারী : ৮৫৭৪]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হজ অবস্থায় তাদের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.
‘আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ [আবূ দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮] ভেবে দেখুন পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা সচেতন যে হজের সময়ও (যেখানে সাধারণত: মহিলাদের মুখ খোলা রাখতে হয় সেখানেও) এ ব্যাপারে তাঁরা শৈথিল্য দেখাতেন না।

প্রিয় মুমিন বোন, আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তোমার মর্যাদা উন্নীত করেছেন। তোমার রুচিকে মার্জিত করেছেন। তোমার সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন অনুভূতি দান করেছেন। তাই যে যুক্তিতেই হোক না কেন তুমি নিজেকে দেহ প্রদর্শনী ও পশুসুলভ উলঙ্গপনার জন্য প্রস্তুত করো না। আল্লাহ তা‘আলা তোমার ওপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেছেন, তোমাকে লাজুকতার ভূষণ এবং লজ্জা ও সৌন্দর্যের আভরণ দান করেছেন। যেখানে সর্ব সাধারণের রুচি বিকৃতি এবং পশু বৃত্তির প্রভাবে নগ্নতা ও উলঙ্গপনায় আগ্রহের আতিশয্য দেখা যাচ্ছে, সেখানে তোমার রুচিকে তিনি একজন মুমিন নারীর উপযুক্ত বানিয়েছেন। তোমার অনুভূতি পরিচ্ছন্ন আর চেতনা পরিশুদ্ধ।

প্রিয় ভগ্নী, তুমি তো আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছায় অগ্রসর হয়েছো। সৎ কাজের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে এসেছো। অবাধ্যাচারিনীরা যেখানে বল্গাহীন বিচরণ করছে, পাপাচারিণীরা যেখানে সৌন্দর্যের প্রদর্শনী আর পাপের ফেরি করে করে ফিরছে, সেখানে তুমি দীনী বাধ্যবাধকতা ও আল্লাহর দাসত্বের দাবী পূরণ করে বিভ্রান্তির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছো। ফিতনার উৎসসমূহ উপড়ে ফেলেছো। দিয়েছো তাড়িয়ে উত্তেজনা ও উম্মক্ততাকে। অবিচল থেকেছো সম্মান ও মর্যাদার পথে। আঁকড়ে ধরেছো হেদায়েত নামের পাথেয়। আগ্রণী থেকেছো শূচিতা ও পবিত্রতায়। ধরে রেখেছো পর্দা ও লজ্জার ভূষণ। আখলাকের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছো আল্লাহর প্রকৃত দাসত্বের। আর নমুনা হয়েছো নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণীর :
﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ﴾ [النساء: ٣٤]
‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিণী ওই বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেন।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৪}

হে ঈমানের দৌলতধন্য বোন, আল্লাহ ও রাসূলের দৃষ্টি নত রাখা এবং লজ্জাস্থান হেফাযতের নির্দেশ তোমার হৃদয় ধারণ করেছে। তোমার অমলিন আত্মাকে সুরেলা কণ্ঠে কথা বলা ও সশব্দ পদবিক্ষেপে চলা থেকে, তেমনি দাঙ্গা-বিশৃঙ্খলায় উস্কানিদাতা শয়তানি প্ররোচনা প্রভাবিত কথা বা কর্ম থেকে নিবৃত রেখেছো। বস্তুত তুমি নিজেকে পূর্বসুরী নেককার, সাহাবীয়া ও মুমিন জননী পুণ্যবতীদের আদর্শে গড়ে তুলেছো। ফলে তা পরিণত হয়েছে তোমার অবিচ্ছেদ্য স্বভাবে। সম্মান ও মর্যাদা এবং সুষমা ও শূচিতার ভূষণে তুমি নিজেকে অলংকৃত করেছো। আর এসবকে গ্রহণ করেছো তুমি নিজের পালনীয় বিধান বলে। বস্তুত এসবে কোনো মুমিন নারীর জন্য দ্বিমত করার অবকাশ নেই। যেমন বুঝা যায় নিচের আয়াত থেকে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦﴾ [الأحزاب: ٣٦]
‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৩৬}

প্রিয় ভগ্নী, নিশ্চয় এটি আনুগত্যের সৌভাগ্য, যা দিয়ে তুমি তোমার মর্যাদা অটুট রাখবে। অন্তর পবিত্র এবং চরিত্র মাধুর্যকে উজ্জ্বলতর করবে। শুভ্রতা ও শুদ্ধতায় নিজেকে অলংকৃত করবে। আল্লাহর এ আনুগত্য ও দাসত্ব দিয়েই অধঃপতিতদের লিপ্সাকে বিচূর্ণ এবং শয়তানী লালসার জিভকে সংবরণ করবে।

প্রিয় ভ্রাতা, পুরুষদের কামার্ত ভিড় থেকে দূরত্ব অবলম্বনকারী, জীবন্ত হৃদয় পর্দাকারী যে নিজেকে যাবতীয় অপদস্ততা ও নিচুতা থেকে রক্ষা করে তার অবস্থা দেখ, কী তার সম্মান-মর্যাদা, কী তার ভক্তি ও শ্রদ্ধা। আর এর সঙ্গে তুলনা করে দেখ সর্বত্রগামী প্রদর্শনপ্রিয় নির্লজ্জ, অপমানিত ও লাঞ্ছিত নারীর অবস্থা। এ দুই শ্রেণীর নারীদের মাঝে বিস্তর ব্যবধান এবং যোজন ফারাক। তুমি আল্লাহ তা‘আলার বর্ণনা দেয়া মাদায়েনের সে বৃদ্ধের দুই কন্যার সাদৃশ্য অবলম্বন করো। কুরআনে যার বিবরণ দেওয়া হয়েছে এভাবে,
﴿فَجَآءَتۡهُ إِحۡدَىٰهُمَا تَمۡشِي عَلَى ٱسۡتِحۡيَآءٖ﴾ [القصص: ٢٥]
‘অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন লাজুকভাবে হেঁটে তার কাছে এলো’ {সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ৫২} দেখ কী আদব, কী লাজুকতা ! আর কেমন আত্মিক শূচিতা ! ঘটনাটি চিন্তার সঙ্গে সবিস্তারে পড়ে দেখ। জানতে পারবে সত্যিকার পুণ্যবতীরা কেমন সুরক্ষিত থাকেন। দেখো সলাজ পদবিক্ষেপে এসে কেমন বিনয়ভরা কণ্ঠে তিনি বাবার নির্দেশ পালন করলেন। কুরআনের ভাষায় তার উক্তি ছিল এমন,
﴿إِنَّ أَبِي يَدۡعُوكَ لِيَجۡزِيَكَ أَجۡرَ مَا سَقَيۡتَ لَنَاۚ﴾ [القصص: ٢٥]
‘আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যেন তিনি আপনাকে পারিশ্রমিক দিতে পারেন, আমাদের পশুগুলোকে আপনি যে পানি পান করিয়েছেন তার বিনিময়ে।’ {সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ৫২}

অতএব আসুন হে প্রিয় বোন, পুরুষ হৃদয়ে ঝড়তোলা লাস্যময় চলন আর মনোযোগ আকৃষ্ট করা কোমল বচন ত্যাগ করি। আল্লাহর কাছে এ থেকে তাওবা করি। তাওবা করি অশ্লীল পোশাক ও সৌন্দর্য বিকাশকারী লেবাস থেকে। তাওবা করি পুরুষদের সাদৃশ্য গ্রহণ, পুরুষদের বেশ ধারণ থেকে। আসুন হে বোন, আল্লাহর নির্দেশ মত পরিপূর্ণ পর্দা ও পবিত্রতার জীবন যাপন করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবার মা-বোনকে ইসলামের প্রথম যুগের নেককার নারীদের মতো পর্দানশীল ও দীনদার হবার তাওফীক দিন। আল্লাহ তাদের সকলকে পঙ্কিল জীবনের স্পর্শ থেকে দূরে রাখুন। আমীন। ইয়া রব্বাল আলামীন।
তথ্যসূত্র :- আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা :- ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
প্রকাশ :- ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া 
বিস্তারিত

নারীদের হিজাবের ওপর কেন পশ্চিমি হামলা?

ইউরোপে ফ্রান্সের পর হল্যান্ডেও বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মিক্সিনের ভাষ্য মতে, বোরকা ছাড়া জনসমাগমস্থানে হেলমেট পরিধানেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। হল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে বোরকা, নেকাব বা হিজাব এবং চেহারা আবৃত রাখে এমন সব পোশাক পরিধানে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
বিস্তারিত

সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৪

বিয়ের রাতে বিদায়ী কন্যার প্রতি মমতাময়ী জননীর একগুচ্ছ উপদেশ

আদরের নন্দিনী মেয়েকে চিরতরে একজনের কাছে তুলে দিতে একজন মায়ের কী কষ্ট লাগে, মমতাময়ী জননীর তখন কী আবেগের ঢেউ খেলে যায়, তাঁর চোখে তখন কত আনন্দ-বেদনার ভাবনা ভীড় করে তা একমাত্র ওই মা জননীই জানেন। কিন্তু শুধু চোখের পানি ফেলে কলিজার টুকরা মেয়েকে শুধু বিদায় জানানোই নয়, তখন যদি তাকে এমন কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেয়া যায় যা তার সারা জীবনের সম্বল হবে, যা তার আগামীর দিনগুলোকে উজ্জ্বল সুখময় করবে তবে তা বড্ড ভালো হয়। সে থেকেই নিচের এই অমূল্য রত্নতুল্য উপদেশগুলো ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি বোনের এবং মেয়ের জীবনকে করুন বর্ণিল ও সুখময়।
বিস্তারিত

বিয়ের সময় পুত্রের উদ্দেশ্যে পিতার উপদেশ

হে আমার আত্মজ, প্রথমেই আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এ জন্য যে তিনি আমার জীবনটাকে এতটুকু প্রলম্বিত করেছেন যে আমি তোমার বিয়ের রাত দেখতে পাচ্ছি। তুমি তোমার পুরুষত্বের পূর্ণতায় পৌঁছেছো। আজ তুমি তোমার দীনের অর্ধেক পুরো করতে যাচ্ছো। হ্যাঁ, এখন তুমি সেই জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি একটি মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলে। কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া যাচ্ছে তা-ই করেছো এতদিন। কোনো চিন্তা ছাড়াই সমুদ্রে গিয়ে লাফিয়ে পড়েছো। সেখান থেকে তুমি যাচ্ছো এখন এক কর্তব্যপরায়ণতা ও পূর্ণতার জগতে।
বিস্তারিত

বিয়ের প্রস্তাব - ইসলামের দৃষ্টিতে করণীয় এবং বর্জনীয়

সবার জীবনেই আসে বিয়ের ঘটনা। আর বিয়ের আগে আসে কনে দেখার পর্ব। ইসলাম শুধু নামায-রোযার নয়; ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই এখানে সালাত-সিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে-শাদীর আমলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল মসজিদে আমরা মুসলিম পরিচয় বজায় রাখি; কিন্তু বিয়ে-শাদীতে কেন যেন ইসলাম পরিপন্থী কাজই বেশি করি। বিয়ে-শাদীর আগে যেহেতু কনে দেখার পর্ব তাই আগে বিয়ের প্রস্তাব বা কনে দেখা সংক্রান্ত ইসলামী নির্দেশনাগুলো আগে তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি এ নিবন্ধে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
বিয়ের প্রস্তাব - ইসলামের দৃষ্টিতে করণীয় এবং বর্জনীয়
শরীয়তে বিবাহ বলতে কী বুঝায় :- নারী-পুরুষ একে অপর থেকে উপকৃত হওয়া এবং আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এ সংজ্ঞা থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি, বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার ও আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত।

বিবাহের তাৎপর্য :- বিবাহ একটি বৈধ ও প্রশংসনীয় কাজ। প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এর যার গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে করা নবী-রাসূলদের (আলাইহুমুস সালাম) সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিবাহ করেছেন এবং এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলেছেন,
أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي.
‘আমি নারীকে বিবাহ করি। (তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’

এ জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মধ্য দিয়ে অনেক মহৎ গুণের বিকাশ ঘটে এবং অবর্ণনীয় কল্যাণ প্রকাশ পায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। যেমন : যদি কেউ বিবাহ না করলে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে। তখন নিজেকে পবিত্র রাখতে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁচতে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاء.
‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।’

বিয়ের প্রস্তাব এবং তার নিয়ম

কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হয় তার জন্য সমীচীন হলো ওই মেয়ের অভিভাবকের মাধ্যমে তাকে পেতে চেষ্টা করা। আর এর জন্য রয়েছে কিছু মুস্তাহাব ও ওয়াজিব কাজ, যা উভয়পক্ষের আমলে নেওয়া উচিত :

১. শরীয়তে বিয়ের প্রস্তাব কী বুঝায় :- এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিয়ে করতে চাওয়া যার কাছ থেকে এমন প্রস্তাব গ্রহণ হতে পারে। এটি বিবাহ পর্ব সূচনাকারীদের প্রাথমিক চুক্তি। এটি বিবাহের ওয়াদা এবং বিবাহের প্রথম পদক্ষেপ।

২. ইস্তিখারা করা :- মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা। জাবির রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
عَنْ جَابِرٍ- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ- قَالَ كَانَ النَّبِيُّ- صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ- يُعَلِّمُنَا الْاِسْتِخَارَةَ فِي الْأُمُوْرِ كُلِّهَا، كَالسُّوْرَةِ مِنَ الْقُرْآنِ : (إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيْضَةِ، ثُمَّ يَقُوْلُ : اللّهُمَّ إنِّيْ أسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَ أسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَ أسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإنَّكَ تَقْدِرُ وَ لآ أقْدِرُ، وَ تَعْلَمُ وَ لآ أعْلَمُ، وَ أنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ، اللّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَآجِلِه- فَاقْدُرْهُ لِيْ، وَ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ شَرٌّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَ آجِلِه- فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَ اصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَ اقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِيْ بِه. ( وَ يُسَمِّيْ حَاجَتَه.)
‘যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় সে যেন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে অতপর বলে :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ ، وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ ، وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي.
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি।‌ কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।

৩. পরামর্শ করা :- বিবাহ করতে চাইলে আরেকটি করণীয় হলো বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ, পাত্রী ও তার পরিবার সম্পর্কে ভালো জানাশুনা রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক পরিমাণে পরামর্শ করতেন। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ مَشُورَةً لأَصْحَابِهِ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে বেশি পরামর্শ করতে দেখি নি।’ হাসান বসরী রহ. বলেন,
ثلاثة فرجل رجل ورجل نصف رجل ورجل لا رجل فأما الرجل الرجل فذو الرأي والمشورة وأما الرجل الذي هو نصف رجل فالذي له رأي ولا يشاور وأما الرجل الذي ليس برجل فالذي ليس له رأي ولا يشاور
‘মানুষের মধ্যে তিন ধরনের ব্যক্তিত্ব রয়েছে : কিছু ব্যক্তি পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কিছু ব্যক্তি অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং কিছু ব্যক্তি একেবারে ব্যক্তিত্বহীন। পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং পরামর্শও করেন। অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তবে পরামর্শ করেন না। আর ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি তিনিই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আবার কারো সঙ্গে পরামর্শও করেন না।’
এদিকে পরামর্শদাতার কর্তব্য বিশ্বস্ততা রক্ষা করা। তিনি যেমন তার জানা কোনো দোষ লুকাবেন না, তেমনি অসদুদ্দেশে আদতে নেই এমন কোনো দোষের কথা বানিয়েও বলবেন না। আর অবশ্যই এ পরামর্শের কথা কাউকে বলবেন না।

৪. পাত্রী দেখা :- জাবের ইবন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدَرَ عَلَى أَنْ يَرَى مِنْهَا مَا يُعْجِبُهُ وَيَدْعُوهُ إِلَيْهَا فَلْيَفْعَلْ. قَالَ جَابِرٌ : فَلَقَدْ خَطَبْتُ امْرَأَةً مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ فِى أُصُولِ النَّخْلِ حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا بَعْضَ مَا أَعْجَبَنِى فَتَزَوَّجْتُهَا.
‘তোমাদের কেউ যখন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর এতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে এবং মেয়েটিকে (বিবাহ করতে) উদ্বুদ্ধ করে, সে যেন তা দেখে নেয়।’
অপর এক হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كُنْتُ عِنْدَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَنَظَرْتَ إِلَيْهَا ». قَالَ لاَ. قَالَ « فَاذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّفِى أَعْيُنِ الأَنْصَارِ شَيْئًا ».
‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জানাল যে সে একজন আনসারী মেয়েকে বিয়ে করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছো?’ সে বললো, না। তিনি বললেন, যাও, তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারীদের চোখে (সমস্যা) কিছু একটা রয়েছে’।’
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘এ হাদীস থেকে জানা যায়, যাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক তাকে দেখে নেয়া মুস্তাহাব।’

৫. ছবি বা ফটো বিনিময় :- নারী-পুরুষ কারো জন্য কোনোভাবে কোনো ছবি বা ফটো বিনিময় বৈধ নয়। কারণ, প্রথমত. এ ছবি অন্যরাও দেখার সম্ভাবনা রয়েছে, যাদের জন্য তা দেখার অনুমতি নেই। দ্বিতীয়ত. ছবি কখনো পূর্ণ সত্য তুলে ধরে না। প্রায়শই এমন দেখা যায়, কাউকে ছবিতে দেখে বাস্তবে দেখলে মনে হয় তিনি একেবারে ভিন্ন কেউ। তৃতীয়ত. কখনো এমন হতে পারে যে প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়া হয় বা প্রত্যাখ্যাত হয় অথচ ছবি সেখানে রয়েই যায়। ছবিটিকে তারা যাচ্ছে তাই করতে পারে।

৬. বিবাহের আগে প্রস্তাবদানকারীর সঙ্গে বাইরে বের হওয়া বা নির্জনে অবস্থান করা :- বিয়ের আগে প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে নির্জন অবস্থান বা তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা, এখনো সে বেগানা নারীই রয়েছে। পরিতাপের বিষয়, আজ অনেক মুসলমানই তার মেয়েকে লাগামহীন ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তারা প্রস্তাবদানকারী পুরুষের সঙ্গে ঘরের বাইরে যায়! উপরন্তু তার সঙ্গে সফরও করে! ভাবখানা এমন যে মেয়েটি যেন তার স্ত্রী হয়ে গেছে।

৭. বর-কনের পারস্পরিক যোগাযোগ করা :- প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের মাধ্যমে শুধু বিবাহের চুক্তি ও শর্তাদি বোঝাপড়ার জন্য যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে। তবে এ যোগাযোগ হতে হবে ভাব ও আবেগবিবর্জিত ভাষায়, যা একজন বেগানা নারী-পুরুষের জন্য বৈধ ভাবা হয় না। আর বলাবাহুল্য, বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণকারী কনের কেউ নন, যাবৎ না তারা বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, এ যোগাযোগ উভয়ের পিতার সম্মতিতে হওয়া শ্রেয়।

৮. একজনের প্রস্তাবের ওপর অন্যজনের প্রস্তাব না দেয়া :- যে নারীর কোথাও বিয়ের কথাবার্তা চলছে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বৈধ নয়। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لاَ يَخْطُبُ الرَّجُلُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ حَتَّى يَنْكِحَ ، أَوْ يَتْرُكَ.
‘কেউ তার ভাইয়ের প্রস্তাবের ওপর যেন প্রস্তাব না দেয়, যাবৎ না সে তাকে বিবাহ করে অথবা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।’
হ্যা, দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি প্রথম প্রস্তাবদাতার কথা না জানেন তবে তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে ওই নারী যদি প্রথমজনকে কথা না দিয়ে থাকেন তবে দু’জনের মধ্যে যে কাউকে গ্রহণ করতে পারবেন।

৯. ইদ্দতে থাকা নারীকে প্রস্তাব দেয়া :- বায়ান তালাক বা স্বামীর মৃত্যুতে ইদ্দত পালনকারী নারীকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়া হারাম। ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়া বৈধ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ
‘আর এতে তোমাদের কোন পাপ নেই যে, তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব করবে।’
তবে ‘রজঈ’ তালাকপ্রাপ্তা নারীকে সুস্পষ্টভাবে তো দূরের কথা আকার-ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়াও হারাম। তেমনি এ নারীর পক্ষে তালাকদাতা ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও প্রস্তাবে সাড়া দেয়াও হারাম। কেননা এখনো সে তার স্ত্রী হিসেবেই রয়েছে।
(সুস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। অস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি তোমার মতো মেয়েই খুঁজছি ইত্যাদি বাক্য।)

১০. এ্যাংগেজমেন্ট করা :- ইদানীং পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে যদি এমন ধরে নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, মুসলিম সমাজ বা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার হলো, এ আংটি প্রস্তাবদানকারী পুরুষ নিজ হাতে কনেকে পরিয়ে দেয়। কারণ, এ পুরুষ এখনো তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী হয়নি। কেননা, কেবল বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে গণ্য হবেন।

১১. উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা :- উপযুক্ত পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত নয়। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ.
‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে।’

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আজ আমাদের ভেবে দেখা দরকার, ইসলামের আদর্শ কোথায় আর আমরা কোথায়। ইসলাম কী বলে আর আমরা কী করি। আমরা কি অস্বীকার করতে পারি যে, এসব আদর্শ আজ আমাদের আমলের বাইরে চলে গেছে। আমাদের যাপিত জীবনে ইসলামের বিমল রঙ ফিকে হয়ে এসেছে। সত্যি কথা বলতে গেলে, আমরা বরং বর্জনীয় কাজগুলো করি আর করণীয়গুলো ভুলে থাকি। আল্লাহ মাফ করুন। এ কারণেই আমাদের বিয়ে-শাদীতে বরকত নেই। বিবাহিত জীবনে সুখ নেই। দাম্পত্য জীবনের সুখ আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত সুখের পরশ পেতে হলে, সুখ পাখির আগুন ডানা ছুঁতে হলে আজ আমাদের তাই ইসলামের কাছেই ফিরে আসতে হবে। ইসলামের আদর্শকেই আকড়ে ধরতে হবে। শুধু কনে দেখা আর বিয়ে-শাদীতেই নয়; জীবনের প্রতিটি কর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মুখে নয়; কাজে পরিণত করতে হবে তাঁর উম্মত দাবী। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে তাঁর যাবতীয় আদেশ এবং তাঁর রাসূলের সকল আদর্শ মেনে চলার তাওফীক দিন। আমীন।
তথ্য সুত্র:-
  • রা‘দ : ৩৮।
  • বুখারী : ৫০৫৬; মুসলিম : ৩৪৬৯।
  • বুখারী : ৫০৬৬; মুসলিম : ৩৪৬৪।
  • বুখারী : ১১৬৬; আবূ দাউদ : ১৫৪০।
  • তিরমিযী : ১৭১৪; বাইহাকী : ১৯২৮০।
  • শিহাবুদ্দীন আবশীহী, আল-মুসতাতরিফ ফী কুল্লি মুসতাযরিফ : ১/১৬৬।
  • বাইহাকী, সুনান কুবরা : ১৩৮৬৯।
  • মুসলিম : ৩৫৫০।
  • নববী, শারহু মুসলিম : ৯/১৭৯।
  • বুখারী : ৫১৪৪; নাসায়ী : ৩২৪১।
  • সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৩৫।
  • ফাতাওয়া জামেয়া লিল-মারআতিল মুসলিমা।
  • তিরমিযী: ১০৮৪।
সংকলক : আলী হাসান তৈয়ব, সম্পাদনা : মো: আব্দুল কাদের এবং প্রকাশ : ইসলামিক অলাইন মিডিয়া
বিস্তারিত

ইসলামের দৃষ্টিতে আন্তধর্ম বিয়ে এবং এর পরিণতি

আন্তধর্ম বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ? আসুন এ বিষয়ে জেনে নেই আজ। কারণ আমরা অনেকেই হয়ত বিষয়টা পুরুপুরি জানি না অথচ এটা নিয়ে নানা বাক বিতন্ডে লিপ্ত হই। তাই আমাদের সকলেরই বিষয়টা সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।
ইসলামের দৃষ্টিতে আন্তধর্ম বিয়ে এবং এর পরিণতি
একজন মুসলিম কখনো অমুসলিম নারীকে বিয়ে করতে পারে না। মুসলিম হয়ে অন্য ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكَٰتِ حَتَّىٰ يُؤۡمِنَّۚ وَلَأَمَةٞ مُّؤۡمِنَةٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكَةٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَتۡكُمۡۗ وَلَا تُنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤۡمِنُواْۚ وَلَعَبۡدٞ مُّؤۡمِنٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكُمۡۗ أُوْلَٰٓئِكَ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلنَّارِۖ وَٱللَّهُ يَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ وَٱلۡمَغۡفِرَةِ بِإِذۡنِهِۦۖ وَيُبَيِّنُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ ٢٢١ ﴾ [البقرة: ٢٢١]

‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২২১}

আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মারছিদ নামক এক সাহাবীকে মক্কায় প্রেরণ করেন গোপনে গিয়ে সেখানে থেকে যাওয়া লোকদের আনতে। তিনি সেখানে পৌঁছলে ‘ইনাক নামক এক মুশরিক নারী তাঁর কথা শুনতে পায়। সে ছিল তাঁর জাহেলী যুগের বান্ধবী। সে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আবূ মারছিদ তুমি কি আমায় সান্নিধ্য দেবে না? তিনি বললেন, ধ্বংস হও তুমি হে ‘ইনাক, ইসলাম এখন আমাদের মাঝে ওই কাজে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। সে বলল, তবে কি তুমি আমায় বিয়ে করতে পার? তিনি বললেন, হ্যা, কিন্তু আমাকে আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যেতে হবে। তাঁর কাছে আমি (তোমাকে) বিয়ে করার অনুমতি প্রার্থনা করব। সে বলল, তুমি আমাকে উপেক্ষা করছ? অতপর মেয়েটি তাঁর বিরুদ্ধে (নিজ গোত্রীয়) লোকদের সাহায্য চাইল। তারা তাঁকে বেদম প্রহার করল। তারপর তাঁর পথ ছেড়ে দিল। মক্কায় নিজের কাজ সেরে তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন, তাঁকে তিনি নিজের অবস্থা, ‘ইনাকের বিষয় এবং এ জন্য প্রহৃত হবার ঘটনা জানালেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার জন্য কি তাকে (মুশরিক নারীকে) বিয়ে করা হালাল হবে? তখন আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন।

এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম ইবনু জারীর আত-তবারী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

اخْتَلَفَ أَهْلُ التَّأْوِيلِ فِي هَذِهِ الآيَةِ : هَلْ نَزَلَتْ مُرَادًا بِهَا كُلُّ مُشْرِكَةٍ ، أَمْ مُرَادًا بِحُكْمِهَا بَعْضَ الْمُشْرِكَاتِ دُونَ بَعْضٍ ؟ وَهَلْ نُسِخَ مِنْهَا بَعْدَ وُجُوبِ الْحُكْمِ بِهَا شَيْءٌ أَمْ لاَ ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ : نَزَلَتْ مُرَادًا بِهَا تَحْرِيمُ نِكَاحِ كُلِّ مُشْرِكَةٍ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ مِنْ أَيِّ أَجْنَاسِ الشِّرْكِ كَانَتْ عَابِدَةَ وَثَنٍ أَوْ كَانَتْ يَهُودِيَّةً أَوْ نَصْرَانِيَّةً أَوْ مَجُوسِيَّةً أَوْ مِنْ غَيْرِهِمْ مِنْ أَصْنَافِ الشِّرْكِ ، ثُمَّ نُسِخَ تَحْرِيمُ نِكَاحِ أَهْلِ الْكِتَابِ بِقَوْلِهِ : {يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ} إِلَى {وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَهُمْ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ} ..ذِكْرُ مَنْ قَالَ ذَلِكَ :

‘আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর বিশারদগণ এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন যে এতে সকল মুশরিকের কথা বলা হয়েছে নাকি কতিপয় মুশরিকের কথা। আর আয়াতটি নাযিল করার পর এর কিছুকে মানসূখ বা রহিত করা হয়েছে কি-না। তাঁদের কেউ বলেছেন, আয়াতে সকল মুসলিমের জন্য সব মুশরিক নারীর বিবাহকে হারাম বুঝানো হয়েছে। চাই সে যে কোনো ধরনের শিরকেই লিপ্ত থাকুক না কেন। হোক সে মূর্তিপূজারী, ইহুদী, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজারী বা অন্য কোনো ধরনের শিরকে লিপ্ত কেউ। অতপর আহলে কিতাবদের বিয়ে হারামের বিয়ষটি রহিত ঘোষণা করা হয় নিচের আয়াতের মাধ্যমে। আল্লাহ তা‘আলা তাতে ইরশাদ করেন,

﴿ ٱلۡيَوۡمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حِلّٞ لَّكُمۡ وَطَعَامُكُمۡ حِلّٞ لَّهُمۡۖ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡمُحۡصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ إِذَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِيٓ أَخۡدَانٖۗ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٥ ﴾ [المائ‍دة: ٥]

‘আজ তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো সব ভালো বস্তু এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ এবং তোমার খাবার তাদের জন্য বৈধ। আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়’। {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৫} এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সতী-সাধ্বী খ্রিস্টান ও ইহুদীদের বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন।

একই শাস্ত্রের আরেক ইমাম ইবন কাছীর রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ সাধারণভাবে শিরকে লিপ্ত সব নারীকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা করেছেন, চাই সে মূর্তিপূজক কিংবা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ভুক্ত হোক। তবে পরবর্তীতে মায়িদার আয়াতে তাদের মধ্যে কেবল আসমানী কিতাবধারী সচ্চরিত্রা নারীদের বিশেষভাবে বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে প্রতিভাত হয় যে বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষেই কেবল খ্রিস্টান বা ইহুদী নারীকে কোনো মুসলিম বিয়ে করতে পারে। এক. বাস্তবিকই আহলে কিতাব হতে হবে। শুধু নামে ইহুদী কিংবা খ্রিস্টান হলে চলবে না। নামে ইহুদী-খ্রিস্টান অথচ সে নাস্তিক কিংবা নিজ ধর্মকে বিশ্বাস করে না; তাহলে চলবে না। দুই. অবশ্যই তাকে পবিত্র হতে হবে। ব্যভিচারিণী হলে চলবে না। তিন. এমন কাউকে বিয়ে করা যাবে না যার জাতি পুরো মুসলিম উম্মতের সাথে ঘোর শত্রুতা পোষণ করে, যেমন : বর্তমান সময়ের ইসরাঈলের ইহুদীরা। চার. বিয়ের কারণে স্বামীর সন্তানের কোনো বৈষয়িক ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকা থাকলেও আহলে কিতাব বিয়ে করা যাবে না।

আন্তধর্ম বিয়ের ভয়াবহ পরিণতি

বিয়ে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন। নিজের খেয়াল-খুশি মতো এ বন্ধনের নিয়মে ব্যত্যয় ঘটাবার সুযোগ নেই। ইসলাম মানবজীবনের সব পর্যায়ের যাবতীয় উপলক্ষ ও অনুসর্গকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেমন হবে, দিয়েছে তার দ্ব্যর্থহীন দিকনির্দেশনা। এই জীবনদিশা আল্লাহ প্রদত্ত বিধায় এর মধ্যে কোনো গলদ নেই। সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিয়ে সম্পর্কিত আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই। এর বাইরে যাওয়ার চেষ্টা মানেই নিজেদের ধ্বংস নিজেরা ডেকে আনা। ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম দিয়ে বল্গাহীনভাবে কিছু করার স্বাধীনতা ইসলামে নেই। যারা নিজের স্বাধীনতা দিয়ে অন্যের ধর্ম, সম্মান, রীতি-নীতি ও স্বাধীনতাকে নষ্ট করে তারা মানবতার শত্রু।

আন্তধর্ম বিয়ের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। বাংলাদেশে আগে দেখা যেত, কেউ নিজের ধর্ম ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইলে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিয়ে করতে হতো বিধায় সহজে কেউ ওপথে হাঁটতো না। এখন বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। ধর্ম ত্যাগ না করেই যুবক-যুবতীরা তাদের রঙ্গলীলা সাঙ্গ করতে নেমে পড়বে। কোনো ধর্মের স্বকীয়তা আর থাকবে না। যার ফল দাঁড়াবে অদূর ভবিষ্যতে গোটা সমাজ ব্যবস্থাই ধর্মহীন হয়ে পড়বে। যেনা-ব্যভিচার ডাল-ভাতে পরিণত হবে। জন্ম নেবে জারজ সন্তান। একদিন জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। আর এই ব্যভিচার নামক গর্হিত কাজটি আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও সমগ্র উম্মাহর ঐক্যমত্যে হারাম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ ﴾ [الاسراء: ٣٢]

‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’। {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত : ৩২}

ব্যভিচার তো দূরের কথা ইসলামে যে কোনো ধরনের অশ্লীলতাকেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣ ﴾ [الاعراف: ٣٣]

‘বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। {সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ৩৩}

অপর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,

﴿ ۞قُلۡ تَعَالَوۡاْ أَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَيۡكُمۡۖ أَلَّا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗاۖ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ١٥١ ﴾ [الانعام: ١٥١]

‘বল, ‘এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি। তা এই যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}

যেনা-ব্যভিচারের ভয়াবহতা তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

« لا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ , وَلا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ , وَلا يَنْتَهِبُ مُنْتَهِبٌ النُّهْبَةَ يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ».

‘যেনাকারী মুমিন থাকে না যখন সে যেনা করে, আর মদ্যপ মুমিন থাকে না যখন মদ পান করে, চোর মুমিন থাকে না যখন সে চুরি করে, ছিনতাইকারী মুমিন থাকে না যখন সে কোনোরূপ ছিনতাই করে আর লোকেরা তার দিকে (বিস্ময় বিস্ফোরিত নেত্রে) চেয়ে থাকে।’

আবদুর রহমান ইবন সাখার রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

« إِذَا زَنَى الْعَبْدُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيمَانُ فَكَانَ فَوْقَ رَأْسِهِ كَالظُّلَّةِ فَإِذَا خَرَجَ مِنْ ذَلِكَ الْعَمَلِ عَادَ إِلَيْهِ الْإِيمَانُ ».

‘বান্দা যখন যেনা করে তখন তার কাছ থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং তা ছায়ার মতো (শূন্যে) দুলতে থাকে। অতপর যখন সে ওই কাজ থেকে নিবৃত হয়, তখন তার কাছে ঈমান ফিরে আসে।’

বিশেষ বিবাহ আইনটি বাংলাদেশে কার্যকর হলে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দু’ধর্ম পালনকারী দম্পতির সন্তানরা। মানসিকভাবে তারা বিকারগ্রস্ত হবে। মুসলিম বাবা বলবেন, আল্লাহ এক আর মা বলবেন ঈশ্বর তিনজন অথবা আমাদের অসংখ্য খোদা রয়েছেন। মুসলিম বাবা যেটাকে বলবেন সত্য সেটাকেই অমুসলিম মা বলবেন অসত্য। মা-বাবার এই বিপরীত অবস্থান থেকে সন্তানের মনে ঘৃণার জন্ম নেবে। জীবনের ঊষাকাল থেকে মধ্যগগন অবধি সে হাবুডুবু খাবে সিদ্ধান্তহীনতার চোরাবালিতে। এছাড়া উত্তরাধিকারী হয়ে মা বাবার সম্পত্তি ভোগ করতেও ঝামেলায় পড়তে হবে সন্তানকে। প্রচলিত আইনে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার পেতেও তাদের ঝামেলা পোহাতে হবে। মোটকথা নৈরাজ্য ছাড়া উপায় নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক দৈনিক নয়াদিগন্তকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের মুসলিম স্ত্রীর কথা তুলে ধরে বলেন, ওই পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানটি কোন ধর্ম গ্রহণ করবে, সেটি নির্ধারণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে সমস্যা এখন মনোমালিন্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, দেশের একজন খ্যাতিমান প্রবাসী কথাশিল্পীর স্বামী মুসলিম। তিনি হিন্দু। তার সন্তান মারা যাওয়ার পর তাকে জানাযা দেয়া হবে নাকি দাহ করা হবে তা নিয়ে প্রচণ্ড সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এ ধরনের বিয়ে সমাজে কোনো রকমের ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এটা একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে মাত্র। (১ মে সংখ্যা)

তাই পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্য ধর্মের অনুসারীকে বিয়ে করাটা ভালোভাবে নেয় না। এটি একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। ব্যতিক্রম শুধু ইহুদী ধর্ম। তাদের ব্যাপারটি বেশ মজারও বটে! ইহুদীরা তাদের মেয়েদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিয়ে দেয়, কিন্ত কখনোই ছেলেদের এই অনুমতি দেয় না। কারণ তাদের বিশ্বাস, সন্তানেরা তাদের মায়েদের ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ কারণে বিল ক্লিন্টনের মেয়েকে এক ইহুদী ছেলে বিয়ে করায় জুইস কাউন্সিল এর তীব্র সমালোচনা করেছিল। অতএব নিজেদের জাতকে বিশুদ্ধ রেখে অন্য সকল ধর্মের মধ্যে ফ্রি মিক্সিং বা জগাখিচুড়িকে উত্সাহিত করা ইহুদীদের কৌশল। বাংলা রম্য রচনার বরপুত্র সৈয়দ মুজতবা আলীর কর্নেল গল্পে এর ইঙ্গিত দেওয়া আছে।

ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ মতে শিশুকে তার বাবা মায়ের ধর্মের অনুসারী ধরা হলে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হয়। শিশুকে যে কোনো নীতি বা আদর্শের দীক্ষা দেওয়াই তার স্বাধীনতার পরিপন্থী! তাই হয়তো বড় হয়ে বিবেক-বুদ্ধি অনুসারে যে কোনো ধর্মের অনুকরণ করা না করা তার এখতিয়ারে রাখা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, দেশাত্ববোধের বিষয়টিও কি তার ইচ্ছাধীন? বড় হয়ে তার কি দেশের সংবিধান ও আদর্শে বিশ্বাসী না হবারও অধিকার রয়েছে? কোনো উদারতম ধর্মনিরপেক্ষ বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও কিন্তু এ অধিকার দেবে না।

আসলে মানুষ কখনোই পুরোপুরি স্বাধীন নয়। তার স্বাধীনতা সীমিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। আর একজন মুসলিমের স্বাধীনতার প্রথম শর্তই হলো তা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির মধ্যে থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]

‘আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। {সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৮৫}

কেউ সুন্দরী বিধর্মী নারীতে মজে আল্লাহর বিধান উপেক্ষা করবেন আর নিজেকে খুব ভালো মুসলিম ভেবে আবার তৃপ্তও হবেন তা কিন্তু হয় না। তারা মূলত বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কিছু মানা আর কিছু না মানার কোনো সুযোগ ইসলামে রাখা হয় নি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ أَفَتُؤۡمِنُونَ بِبَعۡضِ ٱلۡكِتَٰبِ وَتَكۡفُرُونَ بِبَعۡضٖۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفۡعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمۡ إِلَّا خِزۡيٞ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلۡعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ٨٥ ﴾ [البقرة : ٨٥]

‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন’। {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৫}

নিজের মন মতো নয় আমাদের সব কাজ হতে হবে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]

‘অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়’। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৬৫}

বাংলাদেশে আন্তধর্ম বিয়ে আইন

নিজ ধর্ম বিশ্বাস বাদ দিয়ে যেসব নারী-পুরুষ বিয়ে করতে আগ্রহী তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করতে গত ১৮ এপ্রিল ২০১২ ইং আইনমন্ত্রীর এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) আকছির এম চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এতদিন এই বিয়ে পড়ানোর একমাত্র স্থান হিসেবে নির্ধারিত ছিল পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী শরৎচন্দ্র ব্রাহ্ম প্রচারক নিবাস। এখানে প্রাণেশ সমাদ্দার ছিলেন সরকার নিযুক্ত একমাত্র রেজিস্ট্রার। এখন উভয়ে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারবেন। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে যে কোনো ধর্মের (হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-মুসলমান) নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।

এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। ধর্ম পরিবর্তন ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে পারবে। ইচ্ছে করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে অথবা যে কোনো একজন নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিতে পারে। এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। বড় হয়ে (১৮ বছর) তারা যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে অথবা ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে। (১ মে, ২০১২ দৈনিক নয়া দিগন্ত ও আমার দেশ)

আইন সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

আইনটি পাসের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে দেশের আলেম সমাজ একে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। সকল দল-মতের ইসলামী ভাবাপন্ন নেতৃবৃন্দ এবং সর্বশ্রেণীর ধর্মপ্রাণ মানুষ এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বলছে, প্রস্তাবিত আইনে ইসলামবিরোধী কিছু নেই।

১৫ মে (সোমবার) আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিবাহ আইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ‘বিশেষ বিবাহ আইনটি ১৮৭২ সালে প্রণীত হয়েছে। এ আইন এখনো বর্তমান আছে। বর্তমান সরকারের সময় এ আইনের কোনো প্রকার সংশোধন হয় নি। আইনটি অপরিবর্তিত অবস্থায় বহাল আছে।’

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘১৮৭২ সালের এ আইন অনুযায়ী একজন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী কিংবা অন্য যে কোনো ধর্মের যে কেউ যে কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। তারা ১৮ বছর বয়সের পর যে কোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে।’ (আমার দেশ : ১৬/০৫/২০১২)

আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার অসারতা

বক্তব্যটি আসলে একটি স্পষ্ট মিথ্যাচারের নমুনা। কেননা, ১৮৭২ সালের আইনেও মুসলমান কর্তৃক বিধর্মীদের বিয়ে জায়িয বলা হয় নি। ১৮৭২ সালের বিশেষ বিয়ে আইনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি খ্রিস্টান, ইহুদী, হিন্দু, মুসলিম, পারসি, বৌদ্ধ, শিখ অথবা জৈন কোনো ধর্মই পালন করে না, তারা এ আইনের অধীনে বিয়ে করতে পারে। এ আইনের অধীনে বিয়ে করতে হলে পাত্র-পাত্রীকে ঘোষণা করতে হবে, তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। ধর্ম ত্যাগের ঘোষণা না করলে বিয়েটি অবৈধ, বরং বাতিল হবে। তবে বিয়েটি যদি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈনদের মধ্যে সম্পাদন করা হয় তাহলে তারা নিজ নিজ ধর্ম অনুসরণ করতে পারবে। নিচে ১৮৭২ সালে প্রণীত স্পেশাল ম্যারিজ এ্যাক্ট বা বিশেষ বিবাহ আইনটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
THE SPECIAL MARRIAGE ACT, 1872
(ACT NO. III OF 1872). [18th July, 1872]
Local extent 1. This Act extends to the whole of [Bangladesh].
An Act to provide a form of Marriage in certain cases.
Preamble WHEREAS it is expedient to provide a form of marriage for persons who do not profess the Christian, Jewish, Hindu, Muslim, Parsi, Buddhist, Sikh or Jaina religion, and for persons who profess the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina religion and to legalize certain marriages the validity of which is doubtful; It is hereby enacted as follows:–
Conditions upon which marriages under Act may be celebrated :

2. Marriages may be celebrated under this Act between persons neither of whom professes the Christian or the Jewish, or the Hindu or the Muslim or the Parsi or the Buddhist, or the Sikh or the Jaina religion, or between persons each of whom professes one or other of the following religions, that is to say, the Hindu, Buddhist, Sikh or Jaina religion upon the following conditions:–
  1. neither party must, at the time of the marriage, have a husband or wife living:
  2.  the man must have completed his age of eighteen years, and the woman her age of fourteen years, according to the Gregorian calendar:
  3. each party must, if he or she has not completed the age of twenty-one years, have obtained the consent of his or her father or guardian to the marriage:
  4. the parties must not be related to each other in any degree of consanguinity or affinity which would, according to any law to which either of them is subject, render a marriage between them illegal.
1st Proviso- No such law or custom, other than one relating to consanguinity or affinity, shall prevent them from marrying.

2nd Proviso- No law or custom as to consanguinity shall prevent them from marrying, unless a relationship can be traced between the parties through some common ancestor, who stands to each of them in a nearer relationship than that of great-great-grand-father or great-great-grand-mother, or unless one of the parties is the lineal ancestor, or the brother or sister of some lineal ancestor, of the other.
আইনের ধারাগুলো পড়লেই বুঝা যায় বর্তমানে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃটিশ প্রণীত এই আইনটিকে বলা হয়েছে ‘বিশেষ বিবাহ আইন’। পক্ষান্তরে সরকার যে আইনটি করতে যাচ্ছে তা মূলত তো ‘আন্তধর্ম বিয়ে আইন’। বিশেষ আর আন্তধর্ম বিয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ বিবাহ আইন হলো, স্বধর্মত্যাগীদের জন্য এক বিশেষ ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে আন্তধর্ম বিয়ে হলো, এক ধর্মের লোকের সঙ্গে আরেক ধর্মাবলম্বীর বিয়ে।

সুতরাং বৃটিশ আমলে খ্রিস্টান সরকারও কিন্তু সরাসরি কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধাতে যায় নি। অতএব কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভোটে নির্বাচিত মুসলিম সরকারকে বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। যারা এমন বিয়ের বাঁধনে জড়াতে চান তাদের উদ্দেশে বলি, সমাজ ও ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই যদি বিয়ে করতে হয় তবে এ সম্পর্কে জড়ানোর কী দরকার? যারা সরাসরি আল্লাহর বাণীকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছে যেনা-ব্যভিচার তো কোনো ব্যাপারই না। এ দিয়েই তো তাদের কাজ চলার কথা। সামাজিক ও আইনগত দায়বদ্ধতায় আনতেই কি তবে তাদের বিয়ের বৈধতা প্রয়োজন? উত্তর হ্যা হলে প্রশ্ন, যারা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতির তোয়াক্কা করে না তাদের সামাজিক বৈধতা দিতে রাষ্ট্রের এত দায় কেন?

এটি আসলে প্রবঞ্চনামূলক জবাব। তা না হলে হঠাৎ করে দু’জন কাজী নিয়োগ দিয়ে কেন বলা হবে, সারাদেশেও প্রয়োজন হলে এ ধরনের কাজী নিয়োগ হবে। যেখানে বছরে দু-চারজন নিজ ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে-শাদি করছে সেখানে কয়জন কাজী লাগে? তাছাড়া ১৮৭২ সনের বৃটিশ আইনই আমাদের রাখার দরকার কী? প্রতিনিয়ত সব কিছু উল্টাতে পারলে ওই আইন নিয়ে কেন মাথা ব্যথা?

অতএব সরকার ও দেশের সর্বশ্রেণীর মুসলিম ভাই-বোনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা না জেনে না বুঝে পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তা-ই হবে আমাদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সর্বশক্তিমান আল্লাহই একমাত্র আমাদের ভরসাস্থল; কেবল তিনিই যাবতীয় প্রতিকূলতা থেকে এই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সুমতি দান করুন। আমীন।
- আলী হাসান তৈয়ব এবং সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
তথ্য সুত্র :-
  • তাফসীর তাবারী : ৪/৩৬৪।
  • তাফসীরে তাবারী : ৪/৩৬৩; আল-ওয়াসিত : ৩২০-৩২১।
  • তাফসীরে ইবন কাছীর : ১/৪৭৪।
  • তাফসীরে কুরতুবী : ৩/৬৭-৬৯।
  • বুখারী : ২৪৭৫; মুসলিম : ৫৫৩।
  • আল-মুস্তাদরাক আলাস-সাহীহাইন : ৫৫; বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান : ৪৯৬৪।
বিস্তারিত

সন্তান জন্ম দেয়া আর সফল মাতা-পিতা হওয়া এক জিনিস নয়

সন্তান জন্ম দেয়া সহজ। কিন্তু সফল ও যোগ্য পিতা-মাতা হওয়া কঠিন। সন্তান মানুষ করা আরও কঠিন। পিতা-মাতার কাছে সন্তান অমূল্য সম্পদ। তাদের ঘিরেই থাকে সব স্বপ্ন। অথচ সফল পিতা-মাতা কি করে হ’তে হয় অধিকাংশ মানুষই তা জানেন না বা জানলেও অনুসরণ করেন না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। সন্তানদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে, সন্তানরা বিপথগামী হচ্ছে, মানসিক যন্ত্রণা ও দ্বন্দ্ব বাড়ছে। পশু-পাখির বাচ্চা জন্ম নিয়েই দৌড়ায়। কিন্তু মানব সন্তানকে যে যত্ন ও নিয়ম করে হাঁটতে-দৌড়াতে শিখাতে হয়।
বিস্তারিত

মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০১৪

ইসলামে যেসব নারী-পুরুষদের মধ্যে বিয়ে/বিবাহ বন্ধন হারাম

এক জন পুরুষ ও আর একজন নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই মূলত একটি সভ্য সমাজের গোড়া পত্তন করে। যদি বিয়ের বন্ধন না থাকে তবে, সমাজের কঠামো মজবুত হয়না। থাকেনা পারিবারীক বন্ধন। তবে একজন পুরুষ বা নারী যাকে খুশী তাকেই বিয়ে করতে পারেনা। সমাজের কিছু বিধি নিষেধ মেনে চলতে হয়।
বিস্তারিত

বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৪

স্বামী/স্ত্রী পরষ্পরের মুখমৈথুন এবং ধর্মীয় বিধি নিষেধ

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আজ মিলনে বা অন্য সময় নর-নারী পরষ্পরের মুখমৈথুন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু বিষয়টা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে কতটা যৌক্তিক এটাও একটা প্রশ্ন দাড় করিয়ে দেয়। তাছাড়া এ সংক্রান্ত ধর্মীয় বিধি নিষেধই বা কি এটাও জানার বিষয়। বিশেষ করে ইসলামে এর কি বিধান রয়েছে তাও চিন্তা করা দরকার।
বিস্তারিত

ছেলে এবং মেয়ে শিশু বা বাচ্চাদের সুন্দর ইসলামী নাম এবং এর গুরত্ব

ছেলে এবং মেয়ে শিশুদের সুন্দর ও ভালো অর্থবোধক ইসলামী নাম এবং এর গুরত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট ব্লগার নূরুল্লাহ তারীফ। শিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর অর্থবোধক ইসলামী নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য।
বিস্তারিত

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

দাম্পত্যজীবন, আমাদের অজ্ঞতা-পরিণাম ও করনীয়

মানুষ যে কোন কাজ করতে চায়, প্রথমে সে ঐ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। কাজটির হাকীকত ও উদ্দেশ্য কী? কাজটি আঞ্জাম দেয়ার সঠিক পন্থা কী? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী সমস্যা হতে পারে, সেগুলোর সমাধান কী? এগুলো জানা খুবই জরুরী। বিয়ের প্রস্তুতি মানে শুধু কেনা-কাটা নয়। বরং মানুষিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

অথচ জীবনের সবচে’ কাঠিন ও জটিল অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করে, বরং বলা যায় ঝাঁপ দেয়, কিছু না শিখে, না জেনে এবং না বুঝে একেবারে অপ্রস্ত্তত অবস্থায়। ফল কী হতে পারে?! কী হয়?! সংসারে দন্দ, ঝগড়া, শেষে বিচ্ছেদ। অথবা ঘর হয়ত টিকে থাকে কিন্তু শান্তি নেই। স্বাভাবিক শান্তি হয়ত বজায় থাকে, কিন্তু বিবাহ যে দুনিয়ার বুকে মানবের জন্য আল্লাহর দেয়া এক জান্নাতি নেয়ামত (সুকূন ও সাকীনাহ), সে খবর আপনা পাই না, শুধু অজ্ঞতার কারণে,শুধু শিক্ষার অভাবে।
দাম্পত্যজীবন, আমাদের অজ্ঞতা-পরিণাম ও করনীয়
আশ্চর্য,মা-বাবা সন্তানকে কত বিষয়ে কত উপদেশ দান করেন; উস্তাদ কত কিছু শিক্ষা দেন, নছীহত করেন, কিন্তু জীবনের সবচে’ কঠিন ও জটিল বিষয়টি কেন যেন তারা সযত্নে এড়িয়ে যান!

দাম্পত্য জীবনের এই যে নতুন অধ্যায় উর্দূতে এটাকে বলে ইযদিওয়াজী যিন্দেগী, বাংলায় বলে দাম্পত্য জীবন, অর্থাৎ এটা জীবন ও যিন্দেগির খুবই এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটা ঘাবড়ে দেয়ার জন্য বলছি না; প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি গ্রহণ ও পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য বলছি, যাতে পূর্ণ আস্থা ও সাহসের সঙ্গে আমরা এই নতুন জীবন শুরু করতে পারি। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তাহলে সবই সহজ।

এটা যে শুধু আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়! আমাদের মা-বাবার জীবনেও হয়েছে! আমাদের মা-বাবাও একদিন এ জীবন শুরু করেছিলেন। যদি সহজ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে তাহলে মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করা যায়, কীভাবে তারা এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন? জীবনের শুরুতে তারা কী ভেবেছিলেন, কী চেয়েছিলেন, কী পেয়েছেন? কখন কী সমস্যা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন। এই জীবনের শুরুতে আমাদের প্রতি তাদের কী উপদেশ? এধরনের সহজ আন্তরিক আলোচনায় সংসার জীবনের পথচলা অনেক সহজ হয়ে যায়। অবশ্য সব মা-বাবার সঙ্গে সব সন্তানের এমন সহজ সম্পর্ক থাকে না, তবে থাকা উচিত। জীবনের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সন্তান মা-বাবার কাছেই আসবে, মা-বাবাকেই নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে, বন্ধুবান্ধবকে নয়। কঠিন সমস্যার মুখে একজন অপরিপক্ব বন্ধু কীভাবে সঠিক পথ দেখাতে পারে! কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই ঘটে। সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, হয়ত কোন জটিলতায় পড়েছে; তখন তাদের প্রথম চেষ্টা হয় যে, মা-বাবা যেন জানতে না পারে, কারণ তাদের কানে গেলে সর্বনাশ!ছেলে তার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়, মেয়ে তার বান্ধবীর কাছে বলে,তারা তাদের মত করে পরামর্শ দেয়। ফলে অবস্থা আরো গুরুতর হয়।

অতীতে যাই ছিলো,এখন তো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, মা-বাবার জন্য সন্তানের বন্ধু হওয়া। বিপদে সমস্যায় সন্তানকে তিরস্কার পরে করা, আগে তার পাশে দাঁড়ানো। তাহলে সন্তান আরো বড় অন্যায় করা থেকে এবং আরো গুরুতর অবস্থায় পড়া থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এখন অবস্থা হলো, সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, বন্ধুকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। তাই সন্তান সমস্যায় পড়ে মা-বাবার কাছে আসে না, বন্ধুর কাছে আসে। এভাবে নিজের কারণেই সবচে’ কাছের হয়েও মা-বাবা হয়ে যায় দূরের,আর দূরের হয়েও বন্ধু হয়ে যায় কাছের। সন্তানের সমস্যা বন্ধু জানে সবার আগে। মা-বাবা জানে সবার পরে, পানি যখন মাথার উপর দিয়ে চলে যায় তখন।

বিবাহের আসল মাকছাদ বা উদ্দেশ্য হলো স্বামী ও স্ত্রী- এই পরিচয়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করা এবং মা ও বাবা-এই পরিচয়ে সন্তান লাভ করা। তারপর উত্তম লালন-পালন এবং আদর্শ শিক্ষা-দীক্ষা ও তারবিয়াতের মাধ্যমে নেক সন্তানরূপে গড়ে তুলে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করা,যাতে নস্লে ইনসানি বা মানববংশ কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পছন্দমত আগে বাড়তে থাকে।

এটাই হলো বিবাহের আসল উদ্দেশ্য; অন্য যা কিছু আছে তা সব পার্শ্ব-উদ্দেশ্য। তো এখনই তুমি নিয়ত ঠিক করে নাও যে, কেন কী উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে। উদ্দেশ্য যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে দেখতে পাবে, আল্লাহ চাহে তো এখনই তোমার ভিতরে কত সুন্দর পরিবর্তন আসছে! কী আশ্চর্য এক পরিপূর্ণতা নিজের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে! আগামী জীবনের সকল দায়দায়িত্ব পালন করার জন্য গায়ব থেকে তুমি আত্মিক শক্তি লাভ করছো। আল্লাহ তাওফীক দান করেন।

বিবাহের পর দুজনের মধ্যে সম্পর্ক হয় স্বামী-স্ত্রীর, দু’দিন পরেই হয়ে যায়- মা এবং বাবা। সেটা তো জীবনের আরো কঠিন, আরো জটিল অধ্যায়। প্রাকৃতিক নিয়মে মা-বাবা হয়ে যাওয়া খুব সহজ। কিন্তু আদর্শ মা-বাবা হওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ শিক্ষা ও দীক্ষা।

আমরা যেন সন্তানের সামনে তার মাকে অসম্মান করো করি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের স্ত্রী কিন্তু আমাদের সন্তানের মা, আমাদের চেয়েও অধিক শ্রদ্ধার পাত্রী। সন্তান যেন কখনো, কখনোই মা-বাবাকে ঝগড়া-বিবাদ করতে না দেখে। আর স্বামী-স্ত্রী উভয়ই সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করা, এমন বন্ধু যাকে নিজের মনের কথা, সব কথা নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারে।

বিবাহ মানে- নিছক একটি যুবক ছেলে বিয়ের পর হয়ে যাচ্ছে একজন দায়িত্ববান স্বামী। কত বিরাট পার্থক্য এই দাম্পত্য জীবনের মধ্যে। আমাদেরকে বুঝতে হবে। কেন আমি বিবাহ করছি ? বিবাহের উদ্দেশ্য কী? আমাদের দেশে পারিবারিক পর্যায়ে একটা নিন্দনীয় মানসিকতা হলো,সংসারের প্রয়োজনে বিবাহ করা,আরো খোলামেলা যদি বলি, কাজের মানুষের প্রয়োজনে ছেলেকে বিয়ে করানো। সবাই যে এমন করে তা নয়, তবে এটা প্রবলভাবে ছিলো, এখনো কিছু আছে। মেয়ের বিয়ের পর শশুরবাড়ীতে রাত পোহালেই যেন পুত্রবধুর সামনে কাপড়ের স্ত্তপ নিক্ষেপ করে শাশুড়ী আদেশ, কাপড়ে সাবান লাগাও, দেখি, মায়ের বাড়ী থেকে কেমন কাজ শিখে এসেছো !একবন্ধুর কথা, বিয়ের প্রয়োজন। কেন? কারণ মা-বাবার খেদমত করার কেউ নেই।

এটা কিন্তু বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। মা-বাবার খেদমত মূলত আমাদের দায়িত্ব। এখন সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তোমার সাথে এতে শরীক হয়, তবে সেটা উভয়ের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে। কিন্তু আমি আমার পুত্রকে অবশ্যই বলবো, বিবাহের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মা-বাবার খেদমত করা হতে পারে না।

বৈধ উপায়ে স্ত্রী পরিচয়ে কাউকে ভোগ করা,এটাও বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বলা হয় শরীকে হায়াত, জীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী। বস্ত্তত এই শব্দটির মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সুমহান উদ্দেশ্যটি নিহিত রয়েছে। আর যদি কোরআনের ভাষায় বলি তাহলে বিবাহের উদ্দেশ্য হল,
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
ভেবে দেখার বিষয়, দাম্পত্য-সম্পর্কের কী গভীর তাৎপর্য এখানে নিহিত!
পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,বিবাহ হচ্ছে আমার সুন্নত। আর বলেছেন, যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। বিবাহ নবীর সুন্নত! সুতরাং সহজেই বোঝা যায়, বিরাট ও মহান কোন মাকছাদ রয়েছে এর পিছনে।

এবার জীবনের বাস্তবতার কথা বলি, এতদিন তোমার জীবনে ছিলেন শুধু তোমার মা, যিনি তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, প্রসববেদনা ভোগ করেছেন। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করে তোমাকে প্রতিপালন করেছেন। এতদিন তোমার উপর ছিলো তাঁর অখন্ড অধিকার। হঠাৎ তিনি দেখছেন, তাঁর আদরের ধন, তাঁর অাঁচলের রত্ন পুত্রের জীবনে স্ত্রীপরিচয়ে অন্য এক নারীর প্রবেশ (অনুপ্রবেশ?) ঘটেছে! এভাবে পুত্রের উপর তার অখন্ড অধিকার খন্ডিত হতে চলেছে। যে পুত্র ছিলো এতদিন তাঁর একক অবলম্বন, এখন সে হতে চলেছে অন্য এক নারীর অবলম্বন। এ বাস্তবতা না তিনি অস্বীকার করতে পারছেন, না মেনে নিতে পারছেন। সংসারে প্রত্যেক মায়ের জীবনে এ কঠিন সময়টি আসে। এমন এক অর্ন্তজ্বালা শুরু হয় যা শুধু তিনি নিজেই ভোগ করেন, কাউকে বোঝাতে পারেন না, এমনকি এতদিনের আদরের ধন পুত্রকেও না। ফলে সামান্য সামান্য কারণে, এমনকি অকারণেও তিনি খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়েন; তাঁর অনুভূতি আহত হয়। এমন সময় ছেলে (এবং তার স্ত্রী অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও অপিরপক্বতার কারণে) যদি অসঙ্গত কিছু বলে বা করে বসে তাহলে তো মায়ের মনে কষ্টের শেষ থাকে না। প্রসববেদনা থেকে শুরু করে প্রতিপালনের সব কষ্ট একসঙ্গে মনে পড়ে যায়।

কেন বলছি স্ত্রীর বিষয়টি সবচে’ নাযুক? তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দাও; কোন বিবাহে কোন ছেলেকে কাঁদতে দেখেছো?! কোন ছেলের মা-বাবাকে বিষণ্ণ দেখেছো?! দেখোনি; (হয়তো ব্যতিক্রম এক দুইটি ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থা এটিই, এদের কেউ কাঁদে না।) কেন? কারণ বিবাহের মাধ্যমে ছেলে কিছু হারায় না, ছেলের মা-বাবা কিছু হারায় না, বরং অর্জন করে। তাই তাদের মুখে থাকে অর্জনের হাসি এবং প্রাপ্তির তৃপ্তি।

বিবাহের আসরে কাঁদে শুধু মেয়ে, আর মেয়ের মা-বাবা। কেন কাঁদে একটি মেয়ে? কারণ তাকে সবকিছু হারাতে হয়, সবকিছু ত্যাগ করতে হয়। মা-বাবাকে ছেড়ে আসতে হয়, শৈশবের সব স্মৃতি তাকে মুছে ফেলতে হয়। একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনে এটি অনেক বড় আঘাত। এ যেন একটি ছোট্ট গাছের চারাকে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে বহু দূরে ভিন্ন পরিবেশে নতুন মাটিতে এনে রোপণ করা। বাকি জীবন তাকে এই মাটি থেকেই রস আহরণ করে বেঁচে থাকতে হবে।
হিন্দিতে বলে, ‘আওরত কী ডোলী যাহা উত্যরতী হ্যয়, উসকী আর্থী ওহীঁ সে উঠতি হ্যয়।’ অর্থাৎ মেয়েদের পালকি যেখানে গিয়ে নামে, সেখান থেকেই তার জানাযা ওঠে।
কত বড় নির্মম সত্য! তো তোমার স্ত্রীরূপে তোমার ঘরে আসা এই ছোট্ট মেয়েটির যখমি দিলে তাসাল্লির মরহম তোমাকেই রাখতে হবে। একমাটি থেকে উপড়ে এনে আরেক মাটিতে রোপণ করা একটি চারাগাছ থেকে দু’দিন পরেই ফল দাবী করা কতটা নিষ্ঠুরতা! ফল পেতে হলে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। চারা গাছটির পরিচর্যা করতে হবে, সকাল-সন্ধ্যা তার গোড়ায় পানি দিতে হবে। ধীরে ধীরে শিকড় যখন মাটিতে বসবে এবং মাটি থেকে রস সংগ্রহ করার উপযুক্ত হবে, তখন তোমাকে ফল চাইতে হবে না; সজীব বৃক্ষ নিজে থেকেই ফল দিতে শুরু করবে।

কত আফসোসের বিষয়, দাম্পত্য জীবনের শুরুতে যত আদেশ-উপদেশ সব ঐ ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বর্ষিত হয়। প্রথম দিনেই তাকে শুনতে হয়, এখন থেকে তাকে স্বামীর মন জয় করতে হবে, শশুর-শাশুড়ি সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, শশুর বাড়ীর সবার মন যুগিয়ে চলতে হবে। তার নিজের যেন কোন ‘মন’ নেই। সুতরাং সেটা জয় করারও কারো গরজ নেই।

তো মায়ের মন তোমাকেই রক্ষা করতে হবে,আবার স্ত্রীর মনোরঞ্জনও তোমাকেই করতে হবে। সবদিক তোমাকেই শামাল দিয়ে চলতে হবে। কত কঠিন দায়িত্ব! অথচ না শিক্ষাঙ্গনে, না গৃহপ্রাঙ্গণে, কোথাও এ সম্পর্কে শিক্ষার নূন্যতম কোন ব্যবস্থা নেই। সম্পূর্ণ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় দু’টি অপরিপক্ব তরুণ-তরুণীকে যেন সংসার সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া! মেয়েটিও জানে না, আজ থেকে সে আর ছোট্ট মেয়েটি নেই। সে এখন স্ত্রী হয়ে একটি অপরিচিত মানুষের জীবনে প্রবেশ করছে, যার মা আছে, বাবা আছে, ভাইবোন আছে এবং তাদের প্রতি তার স্বামীর অনেক দায়-দায়িত্ব আছে। সহানুভূতির সঙ্গে কোমলাতার সঙ্গে এই দায়িত্ববোধ কেউ তার মধ্যে জাগ্রত করে দেয়নি। এ দোষ কার!

কথা দ্বারা আচরণ দ্বারা তোমার মাকে তুমি বোঝাবে, মা, আমি আপনারই ছিলাম, আছি এবং থাকবো। স্ত্রী হলো আমার জীবনের নতুন প্রয়োজন; আপনি আমার প্রাণ, আপনার সঙ্গে আমার নাড়ির টান।

অন্যদিকে স্ত্রীকে বোঝাতে হবে, এই সংসার সমুদ্রে তুমি একা নও; আমি তোমার পাশে আছি। নতুন জীবনে চলার পথে আমারও অনেক কষ্ট হবে, তোমারও অনেক কষ্ট হবে। তবে সান্ত্বনা এই যে, তুমিও একা নও, আমিও একা নই। আমার পাশে তুমি আছো, তোমার পাশে আমি আছি। আমার কষ্টের সান্ত্বনা তুমি, তোমার কষ্টের সান্ত্বনা আমি। আমরা পরস্পরের কষ্ট হয়ত দূর করতে পারবো না, তবে অনুভব করতে পারবো এবং হয়ত কিছুটা লাঘব করতে পারবো। আল্লাহর কসম, এমন কোন নারিহৃদয় নেই যা এমন কোমল সান্ত্বনায় বিগলিত হবে না।

তোমার স্ত্রীকে তুমি এভাবে বলবে,আমাদের জীবন তো আলাদা ছিলো। আমরা তো একে অপরকে চিনতামও না। আল্লাহ আমাদের কেন একত্র করেছেন জানো?! একা একা জান্নাতে যাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদের একত্র করেছেন একসঙ্গে জান্নাতের পথে চলার জন্য। আমি যদি পিছিয়ে পড়ি, তুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাবে; তুমি যদি পিছিয়ে পড়ো, আমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো। তুমি সতর্ক থাকবে, আমার দ্বারা যেন কারো হক নষ্ট না হয়; আমিও সতর্ক থাকবো, তোমার দ্বারা যেন কারো প্রতি যুলুম না হয়।

স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য তার সন্তানকে সামনে আনতে হবে। অর্থাৎ তুমি তাকে বলবে, দেখো, জীবন কত গতিশীল! সবকিছু কত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে! দু’দিন আগে আমরা শুধু যুবক-যুবতী ছিলাম,আজ হয়ে গেছি স্বামী-স্ত্রী। দু’দিন পরেই হয়ে যাবো মা-বাবা। আমি বাবা,তুমি মা!আল্লাহর কাছে একজন মায়ের মর্যাদা কত! তোমার কদমের নীচে হবে তোমার সন্তানের জান্নাত! যেমন আমার মায়ের কদমের নীচে আমার জান্নাত। তো তোমার সন্তান কেমন হলে তুমি খুশী হবে? আমাকেও আমার মায়ের ঐরকম সন্তান হতে তুমি সাহায্য করো। আমি যদি ভুল করি, মায়ের কোন হক নষ্ট করি, মায়ের সামনে ‘উফ’ করি, তুমি আমাকে সাবধান করো, আমাকে সংশোধন করো। তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমার সন্তানও তুমি যেমন চাও তেমন হবে।

প্রয়োজন হলে স্ত্রীকে মা-বাবার সামনে তিরস্কার করবে, তবে ঘরে এসে একটু আদর, একটু সোহাগ করে বোঝাতে হবে,কেন তুমি এটা করেছো?!বোঝানোর এই তরযগুলো শিখতে হবে,আর এটা দু’একদিনের বিষয় নয়,সারা জীবনের বিষয়। কিন্তু আমরা ক’জন এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করি?! হয় মাতৃভক্তিতে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করি, না হয়, স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেই, আর দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ হয়। আমার একটা কথা মনে রেখো, মায়ের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা মূলত মায়ের প্রতি যুলুম, তদ্রূপ স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের হক নষ্ট করা আসলে স্ত্রীর প্রতি যুলুম। আমার একথার উৎস হলো,
أنصر أخاك ظالما أو مظلوما
অবশ্য সবকিছু হতে হবে হিকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে।
একটি ঘটনা বলি, একবার তার মা তাকে বললেন, তোর বউ আজ তোর এত আপন হয়ে গেলো কীভাবে!

আমি বললাম, দেখো মা, তোমাকে আমি মা বলি; এই ‘মা’ ডাকটুকু পাওয়ার জন্য তোমাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে! অথচ ‘পরের বাড়ীর মেয়েটি’র মুখ থেকে তুমি বিনা কষ্টে ‘মা’ ডাক শুনতে পাও! তোমাকে যে মা বলে ডাকে সে আমার আপন হবে না কেন মা?

আরেকটা ঘটনা, এক মা তার মেয়ের শাশুড়ী সম্পর্কে বললেন, মানুষ না,মেয়েটাকে আনতে পাঠালাম,দু’টো পিঠে বানিয়ে খাওয়াবো,দিলো না,ফেরত পাঠিয়ে দিলো!

দু’দিন আগে তিনিও একই কাজ করেছিলেন,ছেলের বউকে নিতে এসেছিলো মায়ের বাড়ী থেকে। তিনি বললেন,দু’দিন পরে আমার মেয়েরা আসবে এখন তুমি গেলে কীভাবে চলবে!

ভদ্রমহিলাকে বললাম, আপনার কাজটা কি ঠিক হয়েছিলো? আপনাকে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, সতর্ক করা উদ্দেশ্য। আল্লাহর কাছে যদি আটকা পড়েন তখন তো আপনিই বলবেন, তুমি তো হাদীছ-কোরআন পড়েছো, আমাকে সতর্ক করোনি কেন?

মোটকথা, মেয়েদেরকে তারবিয়াত করতে হবে যাতে তারা আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা এবং আদর্শ শাশুড়ীরূপে আদর্শ জীবন যাপন করতে পারে। পুরুষ হচ্ছে কাওয়াম ও পরিচালক। সুতরাং তারবিয়াত ও পরিচালনা করা পুরুষেরই দায়িত্ব। স্ত্রী, মা ও শাশুড়ী, জীবনের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ধাপের জন্য ঘরে ঘরে আমরা যদি আমাদের মেয়েদের গড়ে তুলতে পারি, আদেশ দ্বারা, উপদেশ, সর্বোপরি নিজেদের আচরণ দ্বারা তাহলেই সংসার হতে পারে সুখের, শান্তির।

তোমার স্ত্রীর কোন আচরণ তোমার অপছন্দ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে তোমাকে ভাবতে হবে, তোমার সব আচরণ কি সুন্দর,তোমার স্ত্রীর পছন্দের? তাছাড়া তোমার স্ত্রীর ভালো দিক কি কিছু নেই। সেই ভালো দিকগুলোর জন্য শোকর করো, আর যা তোমার কাছে মন্দ লাগে তার উপর ছবর করো। আর যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করো, তারপর কোমল ভাষায় বলো, তোমার এই বিষয়টা যদি না থাকতো তাহলে তুমি আরো অনেক ভালো হতে। তবে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ মনে রাখতে হবে,একটু বাঁকা থাকবেই,এই বক্রতা,সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে নায, আন্দায, মান, অভিমান, লাস্যতা, এই বক্রতা নারীর সৌন্দর্য, নারীর শক্তি। এটাকে সেভাবেই গ্রহণ করে তার সঙ্গে জীবন যাপন করতে হবে, পূর্ণ সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে, আর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।

সত্যি সত্যি যদি তোমার স্ত্রীর গুরুতর কোন ত্রুটি থাকে তবে সেটা সংশোধনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্যই তোমার। তবে সেক্ষেত্রেও সংশোধনের জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যেতে হবে। ধমক দিয়ে, জোর খাটিয়ে সংশোধন করা যায় না, ঘরে অশান্তি আনা যায়, ঘর ভাঙ্গা যায়, আর সন্তানদের জীবনে বিপর্যয় আনা যায়।

স্ত্রীর সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, এ সম্পর্কে একজনকে যা বলতে শুনেছিলাম, তা ছিল খুবই মর্মান্তিক। তিনি বলেছিলেন,‘মেয়েলোক যেন তোমার মাথায় চড়ে না বসে, তাই প্রথম দিন থেকেই তাকে শাসনের মধ্যে রাখবা। পূর্ণ ইতা‘আত ও আনুগত্য আদায় করে নিবা,গোরবা কুশতান দর শবে আওয়াল।’

এ প্রবাদ এমনই বিশ্ববিশ্রুত যে, আমাদের নিরীহ বাংলাভাষায়ও বলে,‘বাসর রাতেই বেড়াল মারতে হবে’। কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও আমাদের অনুসরণীয় হলো সুন্নাতে রাসুল, আর তিনি ইরশাদ করেছেন,
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي
তো জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শরীয়তের সীমারেখায় থেকে স্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণই আমাকে করতে হবে, যাতে সে মনে করে, আমি সর্বোত্তম স্বামী, আমার মতো উত্তম স্বামী হয় না, হতে পারে না।
স্ত্রীগণের সঙ্গে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কী ছিলো তা জানতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। স্বামীর খেদমত করার মাধ্যমে স্ত্রী অনেক আজর ও ছাওয়াবের অধিকারিণী হতে পারে, এটা আলাদা কথা। তবে আমাকে মনে রাখতে হবে যে, এটা স্ত্রীর মহত্ত্ব, স্বামীর অধিকার নয়। তারা যদি কখনো মায়ের বাড়ী যেতে চায়, আমরা প্রশ্ন করি, ‘আমার খাওয়া-দাওয়ার কী হবে?’ অথচ এটা তার বিবেচনার বিষয় হতে পারে, আমার প্রশ্ন করার বিষয় নয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: সহবাস দাম্পত্য জীবনের একটি অপরিহার্য সত্য। এ বিষয়ে আলোচনাকে হায়া-শরমের খেলাফ মনে করা হয়। ফলে বিষয়টি অজ্ঞতার মধ্যে থেকে যায়। একারণে এমনকি অনেক সময় দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে পড়ে। স্ত্রী তোমার সারা জীবনের সম্পদ এবং সেরা সম্পদ।

متاع মানে সম্পত্তি নয়, ভোগের বস্ত্ত নয় متاع মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য। বিষয়টি বুঝতে না পেরে আধুনিক বুদ্ধিজীবীরা হাদীছের সমালোচনা করেন। আমরা হাদীছটির তরজমা ও ব্যাখ্যা এমন খন্ডিতভাবে করি যে, তারাও সুযোগ পেয়ে যায়।

তো স্ত্রী তোমার সম্পত্তি নয়, স্ত্রী হলো তোমার জীবনের সর্বোত্তম সম্পদ, যা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে তোমাকে রাখতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।

প্রথমেই বর্বর ও পাশবিকরূপে নিজেকে স্ত্রীর সামনে তুলে ধরা বিরাট মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্ত্রী স্বামীর ভোগের পাত্রী নয়, বরং স্বামী-স্ত্রী হলো পরস্পরকে উপভোগ করার জন্য। যত দিন লাগে, দীর্ঘ সাধনা করে প্রথমে হৃদয় জয় করো, মনের দুয়ার খোলো, অন্তরের গভীরে প্রবেশ করো।

যিন্দেগীর এই কঠিন মারহালা সম্পর্কে কত কিছু যে বলার আছে, কত কিছু যে শেখার আছে! দেখি, যদি আবার কখনো সুযোগ হয়।[দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, নারীরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা অতি প্রয়োজন।এ বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। কিন্তু নারীর তালীম-তরবিয়তের ভারও তো পুরুষেরই উপর। বিয়ের আগে পিতামাতা তার তরবিয়ত করবেন, বিয়ের পর স্বামী।...লেখক:সাঈদ আলী হাছান (বিশিষ্ট ব্লগার )
বিস্তারিত

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০১৪

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কি কি করণীয়

মুধময় দাম্পত্য জীবনকে অনাবিল সুখের করতে স্বামী স্ত্রী দু'জনেরই কিছু না কিছু কর্তব্য রয়েছে। কেউ যদি তা করতে ভুল করেন এবং সেই ভুলের উপর অবিচল থাকেন তাহলে সংসারে ভাঙ্গন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই আসুন একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কি কি করণীয় এবং কি কি বর্জনীয় তা দেখে নেই।

খারাপ ব্যবহার করা :- তাকে এমন কিছু নিয়ে ঠাট্টা করা যাতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমন ধমক দেয়া যা অন্যদের সামনে তার অসম্মান হয়ে যায়। তাকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।
উপেক্ষা করা :- তার পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা তার কথাবার্তাকে গোণায় না ধরা বা পাত্তা না দেয়া। হয়ত সে সালাম দিয়েছেন আপনাকে, আপনি উত্তর দিলেন না। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে হয়ত সে কিছু বলছে কিন্তু আপনি বিশেষ কারণ ছাড়াই তার কথার পাত্তা দিচ্ছেন না।

মিথ্যা বলা :- কিছুতেই মিথ্যা বলা সঠিক নয়। আল্লাহ মিথ্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের এই ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন। মিথ্যা আপনাদের পারস্পারিক বিশ্বাসকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে।

কথা দিয়ে কথা না রাখা :- কথা দিয়ে কথা রাখা বা ওয়াদা রক্ষা করা একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এড়িয়ে চলা :- অনেকদিন পর দেখা হলে বন্ধুদেরকে বা ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরি, কোলাকুলি করি। আপনার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না? পারবেন, অস্বস্তি লাগলেও তা ভেঙ্গে ফেলুন। ভালোবাসার প্রকাশ থাকা খুবই প্রয়োজন।

সন্দেহ ও গীবত করা :- কখনো সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে। আপনার জীবনসঙ্গী আপনার খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি। কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। আর মনে রাখবেন, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ হিসাব দিবে। তাই সন্দেহ দূর করুন। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের চাদরস্বরূপ, ছোট-খাটো ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যদের কাছে বলে বেড়াবেন না, গীবত করবেন না।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেছেন :
"হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।" — [আল হুজুরাত, ৪৯ : ১২]
খুব বেশি ব্যস্ততা :- অপরজনের জন্য কিছু সময় রাখবেন। পারস্পরিক কথাবার্তা আর সময়গুলো সম্পর্ককে প্রগাঢ় করে। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা সময় তিনি পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

সালাত এবং অন্যান্য ইবাদাত না করা :- যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত না করে, নামাজ না পড়ে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নন। নিয়মিত নামাজ না পড়া, অশ্লীল কাজ, হারাম উপার্জনগুলো থেকে সরে না আসার কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে। আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনে অলসতা-উপেক্ষা করার কারণে মুসলিম সংসারে অত্যন্ত দ্রুত ভাঙ্গন ধরে যায়।

আল্লাহ আমাদেরকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমাদের সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমাদের পরিবারগুলোতে রাহমাত এবং বারাকাহ দান করুন।
বিস্তারিত

স্ত্রীরা যেসব গুণাবলীর কারণে স্বামীর নিকট প্রিয় পাত্রী হন

জীবন সঙ্গিনী একজন পুরুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উত্তম স্ত্রী যিনি জীবনে পান, তিনি একজন ভাগ্যবান পুরুষ। ​তেমনি একজন স্ত্রীর কাছে যিনি ভালো স্বামী তিনিই প্রকৃত উত্তম চরিত্রের মানুষ। ​একজন সফল ব্যক্তির পাশে থাকেন তার সুযোগ্য সহযোদ্ধা,সহযাত্রী, বন্ধু হিসেবে তার স্ত্রী।
বিস্তারিত

স্বামীর যে গুণগুলোর কারণে স্ত্রীরা তাদের ভালোবাসেন

একটা মেয়ে যখন বিবাহ নামক আল্লাহ্‌র বিধান মানার মাধ্যমে তাঁর পরিচিত গণ্ডি ছেরে ভিন্ন একটা পরিবেশ ভিন্ন একটা পরিবার অপরিচিত সব মানুষদের মাঝে এসে বসবাস করা শুরু করে আর তখন এ অপরিচিত সবার মাঝ থেকে একজন মানুষ হয়ে উঠে তাঁর সবচেয়ে আপন তিনি হচ্ছেন তাঁর স্বামী ।
বিস্তারিত

সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে মা-বোনদের করণীয়সমূহ

আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ভূমিকা থাকে। আর এটা সব সময় এক রকম থাকে না। কখনো কমে কখনো বাড়ে। সেটা আল্লাহর রহমতের পর নির্ভর করে তাদের উভয়ের চেষ্টার উপর। কিন্তু স্ত্রী এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

ইসলামের ক্ষেত্রে আরবী সাহিত্য জগতের সাহিত্য ও বাগ্মিতায় একজন প্রসিদ্ধ নারী উমামা বিনতে হারেস (আউফ ইবনে মুহাল্লাম আশ শায়বানীর স্ত্রী) তার মেয়েকে বিয়ের পর অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় উপদেশ দিয়ে ছিলেন যা আরবদের মাঝে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সে উপদেশগুলোর অনুবাদ তুলে ধরা হল। সেই সাথে আধুনিক যুগের একজন প্রসিদ্ধ দাঈ এবং আলেম স্বামীর ভালবাসা অর্জনের জন্য স্ত্রীর প্রতি বেশ কিছু মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন সেগুলোও উপস্থাপন করা হল। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যেন সব সময় কল্যাণের উপর অটুট রাখেন। আমীন।
সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে মা-বোনদের করণীয়সমূহ

এক আরব মা তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর উপদেশ দিচ্ছেন 

উমামা বিনতে হারেছ নিজ কন্যার বিবাহের সময় তাকে এমন কিছু নসীহত করেন যা শুধু মেয়ের জন্যই নয়; বরং পরবর্তী সমস্ত নারীর জন্য মাইল ফলক হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে।

তিনি মেয়েকে লক্ষ্য করে বলেন, ওহে আমার কলিজার টুকরা মেয়ে! আজ তুমি নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বান্ধবী ও প্রতিবেশী থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে এমন এক অপরিচিত পরিবেশে এমন এক অপরিচিত ব্যক্তির নিকট গমণ করছো যেখানেই রয়েছে তোমার আসল ঠিকানা সেই ব্যক্তিই তোমার প্রকৃত বন্ধু সাথী ও কল্যাণকামী। তুমি ওখানের আচার-আচরণ ও পরিবেশ সম্পর্কে মোটেও অবগত নও। তুমি যদি স্বামীর দাসী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পার, তবে দেখবে সেও তোমার দাসে পরিণত হয়েছে।

এই মূহুর্তে আমি তোমাকে কতিপয় নসীহত করছি। আল্লাহ চাহে তো এগুলো তোমার জীবনের সাফল্য ও সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য পাথেয় হবে।
  • স্বামীর প্রতি বিনীত থাকবে এবং অল্পতেই তার উপর সন্তুষ্ট হবে।
  • ভালভাবে তার কথা শুনবে ও মানবে।
  • তার চোখ ও নাকের পসন্দের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। তোমাকে যেন কখনো খারাপ দৃশ্যে সে না দেখে এবং তোমার নিকট থেকে কখনো যেন সর্বোত্তম সুগন্ধি ছাড়া অন্য কিছু না পায়।
  • তার খাওয়া দাওয়া ও নিদ্রার বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবে। কেননা ক্ষুধা ও অনিদ্রা মানুষকে বদমেজাজী ও ক্রোধাম্বিত করে তোলে।
  • তার ধন-সম্পদের রক্ষণা-বেক্ষণ করবে। হিসাবের সাথে পরিমাণমত তার সম্পদ খরচ করবে।
  • তার পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীর দেখাশোনা করবে। উত্তমভাবে মনযোগসহকারে তার সন্তান-সন্তুানতিকে লালন-পালন করবে।
  • তার কোন গোপন বিষয় ফাঁস করবে না ও তার নাফরমানী করবে না। কেননা তার গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলে একদিন সে তোমাকে ধোঁকা দিবে। অবাধ্য হলে তার বুকে আগুন জ্বালাবে তাকে ক্রোধাম্বিত করবে।
  • তুমি কাঙ্খিত লক্ষ্যে কখনই পৌঁছতে পারবে না যে পর্যন্ত তার সন্তুষ্টিকে নিজের সন্তুষ্টির উপর সন্তান না দিবে, তার পছন্দ-অপছন্দকে নিজের পছন্দ-অপছন্দের উপর সন্তান না দিবে। (আ’লামুন্নেসা ১/৭৪, ত্বাবায়েউন্নেসা পৃঃ ২৮)

স্বামীর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধির জন্য স্ত্রীকে কতিপয় উপদেশ

শায়খ ইবনু জুবাইলান স্বামীর ভালবাসা ও প্রীতি অর্জন করার জন্য নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে কিছু নসীহত করেছেন। তা নিম্নরূপঃ
  • বিভিন্ন উপলক্ষে স্বামীর হাতে কপালে চুম্বন করা।
  • স্বামী বাইরে থেকে এলে সাথে সাথে স্বাগতম জানানোর জন্য দরজায় এগিয়ে আসা। তার হাতে কোন বস’ থাকলে তা নিজের হাতে নেয়ার চেষ্টা করা।
  • সময় ও মেজাজ বুঝে স্বামীর সামনে প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত বাক্যালাপ করা। তার সামনে তার প্রশংসা করা। সম্মান ও শ্রদ্ধা মূলক আচরণ করা।
  • স্বামীর পোশাক-আশাকের পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। (পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার স্ত্রী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন)। রান্নার ক্ষেত্রে স্বামী যা পছন্দ করেন তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।
  • সর্বদা স্বামীর সামনে হাসি মুখে থাকা।
  • স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে বা রান্না ঘরের পোষাকে তার সম্মুখে না যাওয়া। মাসিক ঋতুর সময়ও সুসজ্জিত অবস্থায় থাকা।
  • স্বামীর সামনে কখনই নিজের কন্ঠকে উঁচু না করা। নারীর সৌন্দর্য তার নম্র কন্ঠে।
  • সন্তানদের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও গুণগান করা।
  • নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে স্বামীর প্রশংসা করা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনই তার বিরুদ্ধে তাদের নিকট অভিযোগ করবে না।
  • সুযোগ বুঝে স্বামীকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।
  • কখনো স্বামীর আভ্যন-রীন গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। কেননা কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেন, ((ولا تجسسوا)) “তোমরা কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান কর না। (সূরা হুজুরাত -১৩) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কারো প্রতি কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। (বুখারী, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/৪৭৪৭।)
  • স্বামী কখনো রাগম্বিত হলে চুপ থাকার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে তার রাগ থামানোর চেষ্টা করা। যদি সে নাহক রেগে থাকে তবে অন্য সময় তার মেজাজ বুঝে সমঝোতার ব্যবসন্তা করা।
  • স্বামীর মাতাকে নিজের পক্ষ থেকে (সাধ্যানুযায়ী) কিছু হাদিয়া-উপহার প্রদান করা।
  • সম্পদশালী হয়ে থাকলে স্বামীর অভাব অনটনের সময় তাকে সহযোগিতা করা। উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাব। ওদেরকে তো এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। ওরা তো আমারও সন্তান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি যে পরিমাণ তাদের জন্য সম্পদ খরচ করবে, তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
  • ১৫) স্বামীর নির্দেশ পালন, তার এবং তার সংসারের খেদমত প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করা।
পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে পরিবারগুলোকে যে সুখ-সম্ভারে ভরে দেন এবং সেখান থেকে সকল অশান্তি দূর করে দেন। আমীন। সূত্র: জান্নাতী রমনী বই থেকে(ফিরোজ আহম্মদ )
বিস্তারিত

সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০১৪

হিজড়া জন্ম হওয়ার কারন কি ?

বিষয়টা ভাল ভাবে সকলেরই উপলগ্ধি করা উচিত। আমরা অনেক সময় রাস্ত- ঘাঁটে বা  ট্রেনে দেখে থাকি এক শ্রেনীর মেয়েলি স্বভাবের মানুষ (হিজরা) ভিক্ষা করছে বা দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে চাদা তুলছে। তাদেরকে দেখে অনেকেই দারুন অস্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু আপনারা কি কেউ জানেন তাদের জন্মের রহস্য কি ? আসুন বিষয়টা জেনে নেই। ..
বিস্তারিত

শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৪

ইসলামে নিষিদ্ধ চারটি যৌন আচরণ / সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার

লেখাটি লিখবো কিনা এ নিয়ে দুমিনিট ভাবছি। কারণ জ্ঞানীরা বলে গেছেন, "ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।" ইদানীং নারী পুরুষের বিবাহিত সেক্সুয়াল লাইফ এ কিছু কিছু সমস্যা প্রকট আকারে সামনে চলে এসেছে। বিবাহিত জীবন গড়াচ্ছে ডিভোর্স পর্যন্ত। অস্বাভাবিক সেক্সুয়াল লাইফের বলি হিসেবে মহিলারা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা পি, আই, ডিতে ভুগছেন। মেডিকেল ট্রিটমেন্ট ফেইলুরের পর সার্জারি করেও শেষ রক্ষা হয়না। ব্যথা ময় এক জীবন বয়ে বেড়ান।

পুরুষ নারী নির্বিশেষে যৌন বাহিত অসুখবিসুখ তো আছেই। আর মনের উপর যে ভয়াবহ চাপ পড়ে মেন্টাল ট্রমা তৈরি হয় সে প্রসঙ্গ নাই বা বললাম, মনের ব্যাপারটাতো চির উপেক্ষিত আমাদের সমাজে।
ইসলামে নিষিদ্ধ চারটি যৌন আচরণ / সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার
কথা হল, একজন কনজারভেটিভ আর নতুন প্র্যাকটিসিং মুসলিম সর্বোপরি একজন ডাক্তার হিসেবে সমস্যাগুলো দেখে, রবি গুরুর ব্রজেশ্বরের মত জঞ্জাল দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যাব, নাকি সুকান্তের মত,"প্রাণ পণে সরাব জঞ্জাল"?!?

আসলে সময় এসেছে কিছু কিছু ব্যাপারে শালীনতার মধ্য থেকেই আলোচনা করার। কারণ আমরা অনেক কিছুই জানিনা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন, দীর্ঘ ১২ বছর পড়াশুনা করে এইস, এস, সি পাশ দিলেও কেউ না পারে ইহকালে রুটি রোজগারের ব্যবস্থা করতে, আর না হয় তার নৈতিক জ্ঞান,যা দিয়ে সে বাকি জীবন সঠিক ভাবে চলার দিক নির্দেশনা পাবে। মাছি মারা কেরানী ছাড়া আর কিছুই হতে পারিনা আমরা; পরবর্তী উচ্চশিক্ষায় ও নৈতিক বিষয়টি কোন স্থান পায়না। তাই আমাদের জ্ঞানের অভাব আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্যতার উপরেই বর্তায়।

তবুও একটি আশাবাদী কথা দিয়েই শুরু করি। আপনি কি জানেন? মুসলিমদের সেক্সুয়াল লাইফকে মেডিকেলে খুবই এপ্রিশিয়েট করা হয়। গাইনি মেডিকেল বই এ মুসলিম সেক্সুয়াল বিহেভিয়ারের প্রশংসা করে লেখা থাকে, “মুসলিম ছেলেদের সারকামসেশন (মুসলমানি) করা থাকে তাই তাদের স্ত্রীর অমুক অসুখ কম হয়। অথবা সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স এ মুসলিম রা অমুক নিয়মটি ফলো করে তাই তাদের অমুক অসুখটি কম হয়।“

“মুসলিমদের কি সেক্সের আলাদা নিয়ম আছে?!? "ঝট করে প্রশ্নটি মনে জাগে।
আমার পরম শ্রদ্ধেয় সার্জারির প্রফেসরের উক্তি মনে পড়ে গেলো । সদা হাস্যময়ী স্যার বলেছিলেন , "Breast feeding (নবজাতকের মায়ের দুধ পান করা ) & Sexual intercourse ( সেক্স করা) reflexly মানুষ শিখে যায় , এটা কাউকে শিখাতে হয় না । "

এখানেই কথা আছে কিন্তু। রিফলেক্সলি ঠিক জিনিসটি শিখার আগেই প্রযুক্তির অকল্যাণে বিধ্বংসী কিছু পারভার্সন ঢুকে গেছে স্বাভাবিক যৌন জীবনে ।

কিভাবে ? ইন্ডিয়ার কিছু চটি সাইট আছে ওগুলোর মূল ভিজিটর বাংলাদেশি । আর ইন্ডিয়ান ভিজিটর বাংলাদেশের ভিজিটরের অর্ধেকের ও কম । আর অনলাইন সংবাদ মাধ্যম গুলোর মূল ভিজিটর আসে অশালীন রগরগে সংবাদগুলো থেকে ।তারা দেশে এরকম সংবাদ না পেলে বিদেশ থেকে সংবাদ আমদানি করে । লক্ষ্যকরে থাকবেন এই রোজার মাসেও ভিজিটরের লোভে সানি লিওনের সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত হয়নি । মোবাইলে মোবাইলে অশালীন ভিডিও সহজে কিনতেও পাওয়া যায় যারা নেট ইউজ করেনা তাদের সুবিধার জন্য।

তাহলে বুঝাই যায় মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া শর্তেও পর্ণোগ্রাফী বাংলাদেশে দারুণ জনপ্রিয় । আর পর্ণো পড়ার সময় বা দেখার সময় আমাদের কয়জনের মনে থাকে ,এগুলি কিন্তু গুনাহ । চোখের ব্যভিচার ।

এই সহজলভ্য পর্ণো আর চটিসাইট গুলো মানুষের স্বাভাবিক যৌন জীবন কে অস্বাভাবিকতা দিয়ে রিপ্লেস করে দিয়েছে। সংসার জীবনে নেমে এসেছে অশান্তি।
"ভালবেসে স্ত্রীর দিকে তাকালেও সোয়াব " এই সব হাদিস উঠে গিয়ে এসেছে , "LOVE করে আর লাভ নেই রে পাগলা।"

মানুষ সেক্সুয়াল লাইফ নিয়ে পুরোই বেদিশা । তারা শুধু ছুটছে। "কই আমিতো পর্ণো ছবির পুরুষ বা মহিলাটির মত আনন্দে আত্মহারা হলাম না ।হয়ত আমার ওয়াইফ বা হাসবেন্ড ঠিক পারছেনা । কোথায় ? কোথায় আছে সেই সোনার হরিণ। কোথায় সেই আনন্দের ফোয়ারা ? সবাই পায় , আমি পাই না কেন ? "

বিবাহ বহির্ভূত সেক্স , হোমোসেক্সুয়ালিটি , এনাল সেক্স মহামারির মত ছড়িয়ে গেছে । দুনিয়াতে এত মজা নিলে আখেরাত কিন্তু অন্ধকার । আজ আমরা জানবো ইসলামে সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার এ ৪ টি নিষিদ্ধ ক্ষেত্র ।
  • EXtramerital sex 
  • Sexual intercourse during menstruation and Puerperium 
  • Homosexuality 
  • Anal Sex 
Extramerital sex: বিবাহ বহির্ভূত সেক্স – এর কারণে সিফিলিস , গনোরিয়া , ক্ল্যামাইডিয়া , মোনিলিয়াসিস , ট্রাইকোমোনিয়াসিস , ব্যাকটেরিয়াল ভেজাইনোসিস , জেনিটাল হার্পিস , জেনিটাল ওয়ার্টস প্রভৃতি সমস্যা আর তাদের কমপ্লিকেশন তো আছেই। সারভাইক্যাল ক্যন্সার ( জরায়ু মুখের ক্যান্সার ) যার মূল কারণ হিউমেন প্যাপিলোমা ভাইরাস তাও ট্রান্সমিট হয় । আর ঘাতক ব্যাধি এইডস তো আছেই ।
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন , “ তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেওনা , কারণ এটি অশ্লীল ও মন্দ পথ।‘ ( সূরা বনী ইসরাইল , ৩২)
যে মুহাররামাত মহিলার সাথে যিনা করবে তার হুকুম:

যে ব্যক্তি কোন মুহররামাত ( যাদেরকে বিবাহ করা হারাম ) যেমন – আপন , বোন , কন্যা ও বাবার স্ত্রী ইত্যাদি এর সাথে হারাম জানা স্বর্তেও যিনা করবে তাকে হত্যা করা ফরজ ।

বারা ইবনে আজেব (রা ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন , " আমার চাচাকে ঝান্ডা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখে বললাম:-- কোথায় চলেছেন ? তিনি বললেন- আমাকে রাসুল করিম ( সাঃ ) প্রেরণ করেছেন ঐ মানুষের নিকট যে তার বাবার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে । তিনি ( সাঃ ) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তার গর্দান উড়িয়ে দেয়ার জন্য এবং সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য । ( সহীহ হাদিস , তিরমিজি হাদিস নং ১৩৬২ , নাসাঈ হাদিস নং ৩৩৩২ ) ।

তাহলে ইনচেস্ট ( Incest ) ভর্তি পর্নো চটি সাইট গুলো আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য বাহী মূল্যবোধ সম্পন্ন সম্পর্ক গুলোকে কোথায় নিয়ে চলেছে ?

Homosexuality (সমকামিতা): লূত (আঃ ) এর সময়ের আগে পৃথিবীতে হোমোসেক্সুয়ালিটি ছিলনা । সমকামিতা চরিত্র আর স্বভাব বিধ্বংসী এক জঘন্যতম অপরাধ ইসলামের দৃষ্টিতে । লূত ( আঃ ) এর জাতি এ অপকর্ম করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন । তাদের উপর পাথর বৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন । এ ছাড়া শেষ বিচারের দিনেও তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, " এবং আমি লূতকে পাঠিয়েছি । যখন সে নিজ জাতিকে বলল- তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ , যা তোমাদের পূর্বে গোটা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরাতো কামবশতঃ পুরুষের নিকট গমন কর মহিলাদের ছেড়ে এবং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছো [ সূরা আরাফ ৮০-৮৪ ]

আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- " অবশেষে যখন আমার আদেশ পৌঁছল , আমি উক্ত জনপদকে উপুড় করে নীচ করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম । যার প্রতিটি তোমার রবের কাছে চিহ্নিত ছিল । এবং পাপিষ্ঠ দের কাছ থেকে বেশি দূরেও নয় । "( সুরা হূদ ৮২-৮৩)

আর রাসুল ( সাঃ ) বলেন , " তোমরা লূতের জাতির কর্ম অবস্থায় যাকে পাবে তার কর্তা এবং কর্ম উভয়কে হত্যা করবে । ( সহীহ হাদিস আবু দাউদ হাদিস নং ৪৪৬২ , তিরমিযী হাদিস নং ১৪৫৬)

হোমোসেক্সুয়ালিটি জন্মগত ভাবে আসে , হোমোদের এমন আজব কথা তাদের নিজেদের আবিষ্কার।

Anal sex: Anus ( মলদ্বার ) অনেক রকম মাইক্রোওর্গানিজম দিয়ে পূর্ণ । আনহাইজিনিক সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের কারণে ফিমেল পার্টনার ভয়াবহ রকমের পি, আই , ডি তে আক্রান্ত হয়ে যায় । এনাল ফিসার, পাইলস হবার ঝুঁকি বাড়ে । এনাল স্ফিংটার এর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় ।

হাদিসে আছে , " যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে এনাল সেক্স ( নিতম্বে সহবাস ) করবে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না । " ( নাসাঈ আল ইশ্রাহ ২/ ৭৭- ৭৮/১; তিরমিযী ১/২১৮ )

হাদিসে আরো আছে , " যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে নিতম্বে সহবাস করবে সে লা’নত প্রাপ্ত " ( আবু দাউদ ২১৬২ , আহমদ ২/ ৪৪৪, ৪৭৯ )

Sexual intercourse during menstruation and puerperium – ( পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আর সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৪০ ( ৪৫) দিনের মধ্যে সহবাস ): পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নরমাল ডিফেন্স মেকানিজম নষ্ট হয়ে যায় । মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । একই ঘটনা ঘটে সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৪০-৪৫ দিন। আর এসময়ের সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স প্রজনন অঙ্গ গুলোতে ভয়াবহ ইনফেকশন ঘটায় লোকাল অর্গানিজম ।
স্ত্রীর হায়ে্য ( পিরিয়ড ) চলাকালীন তার সাথে সহবাস করা স্বামীর জন্য হারাম । ( ফথুল কাদীর , ১/২০০ )
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ আর তারা তোমার নিকট হায়ে্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করে। তাহলে বলে দাও এটা অশুচি বা কষ্ট । কাজেই তোমরা হায়েয চলাকালীন সময় সহবাস থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাস করবেনা, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায় । যখন তারা ভালোভাবে পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তাদের নিকটে যাও যেভাবে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন । নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদের ভালবাসেন । ( সুরা আল বাকারাহ ২২২ )
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ ) বলেন, ‘"যদি কোন ব্যক্তি হায়েযাহ নারীর সাথে বা তার নিতম্বে সহবাস ( এনাল সেক্স) করে , জ্যোতিষীর নিকট যায় আর জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করে তাহলে সে মুহাম্মদ (সাঃ ) এর প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি কুফরি করল। "

তাহলে এই হল চারটি বিধি নিষেধ ।

উপসংহার হিসেবে কয়েকটি কথা বলি । জাতি হিসেবে আমরা হীন মন্যতায় ভোগা জাতি । নিজের দেশ ভাল লাগেনা । গরীব । নিজের ভাষা ভাল লাগেনা । টিভি , এফ,এম রেডিওতে বাংরেজি ভাষায় কি যে কথা বলি আমরা নিজেদেরই বুঝতে কষ্ট । নিজের সংস্কৃতি ভাল লাগেনা । সেদিন দেখলাম এক টিভি চ্যানেল নাম ৭১ , ফিমেল নিউজ প্রেজেন্টার শার্ট , কোর্ট পরে খবর পড়ছেন । এটা কি আমাদের নতুন সংযোজিত বাঙ্গালী সংস্কৃতি কিনা জানিনা । আমাদের নিজেদের ধর্ম ও ভাল লাগেনা । দু কলম পড়াশুনা করে অনেকেই নিজের ধর্মকে মৌলবাদী আখ্যা দিয়ে নামাজ , রোজাকে শিকেয় তুলে রেখেছেন । আমাদের ধর্ম বাস করে ঈদের বিপণী বিতানে , পোশাক কেনার মধ্যেই আমাদের ঈদ । কোরবানির সময় বড় ধার্মিকতার পরিচয় দিয়ে লাখ টাকার গরু , উট কুরবানি দিই নাকি জবাই দেই । শ্বশুর বাড়ি থেকে কি পশু পাঠাল কুরবানি দেয়ার জন্য তার হিসেব করি ।

এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করার মানুষিকতা তৈরি হোক আমাদের । জন্মসূত্রে পাওয়া মুসলিম পরিচয় কে শানিত করে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হয়ে উঠার তৌফিক আল্লাহ যেন আমাদের দেয় । ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হোক আমাদের পরিচয়।

অত্যন্ত ব্যথাতুর লাগছে এটা ভাবতেই যে পবিত্র রমজান মাস শেষের দিকে । এই পবিত্র সময়ে নিজের কাছে নিজেই অঙ্গীকার করি , ইসলামের আলোর নীচে আসার । দেখেন, চীনের মুসলিমদের এবার জোর করে রোজা ভাঙ্গানো হয়েছে । রোজা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে সে দেশে । গাজায় শত শত মুসলিম মারা যাচ্ছে । শিশুদের সারি সারি লাশ দেখে দুঃখে মন ভরে যায় । আফগানিস্তানে ও দেশীয় সন্ত্রাসীদের হাতে শত শত মুসলিম মারা গেছে ।

সে তুলনায় আমরা আল্লাহর করুণা ধারায় বাস করছি । আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানো দরকার । সকল প্রশংসা আল্লাহর । আমরা যে যে অবস্থায় আছি না কেন ,আল্লাহ যেন আমাদের উপর তাঁর রহমত বর্ষণ করেন । আমাদের দুঃখ দূর করে দেন । শান্তি ও কল্যাণের মধ্যে আমাদের রাখেন । বালা মুসিবত , অসুখ বিসুখ দূর করে দেন । আমাদের ঈমানী জোর বৃদ্ধি করেন । বিপদে ধৈর্যধারণের তৌফিক দেন । সারা জাহানের সমস্ত মানুষের কষ্ট দূর করে দিন ।একজন জীবন্মৃত কে প্রাণচঞ্চলতা দান করুন । আমিন.........ডাঃ নার্গিস পারভীন
বিস্তারিত