বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

যৌন মিলনে চরমানন্দ কয় প্রকার হয়ে থাকে?

ষাটের দশকের যৌনবিজ্ঞানীদের মতে যৌন-চরমানন্দের জন্য ভগাংকুর-ই একমাত্র অঙ্গ। অন্য কোন অঙ্গের সাথে চরমানন্দের সরাসরি সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরবর্তীতে বিশদ গবেষনা এবং নারীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় - সংগমের শেষ ভাগে পরম-যৌনতৃপ্তির একপ্রকার অনুভুতি ভগাঙকুরে শুরু হয়ে সম্পুর্ন যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, যা পরবর্তী মুহুর্তের জন্য ক্রমশঃ শক্তিশালী আনন্দের চরম শিখরে পৌঁছায়।
যৌন মিলনে চরমানন্দ কয় প্রকার হয়ে থাকে?
প্রচলিত আছে নারীর জি-স্পটে যৌনানন্দের কম্পনের (আন্দোলিত হওয়া) সৃষ্টি হয়ে তা গভীর থেকে গভীরতায়, শক্তিশালী থেকে প্রকটতায়, সময়ব্যপ্তি এবং যোনী - মুত্রনালী - পেলভিক অঙ্গে প্রতক্ষ্য সংযোগ স্থাপন করে এক স্বর্গীয় সুখানুভুতির অনুরনন ঘটায়। নারী স্বীকার করেন সত্যিকার অর্থেই যৌনপুর্নতৃপ্তি তার মস্তিস্কের ভালবাসা অনুভবের স্নায়ুযন্ত্রে স্বামীর সাথে মনের যোগাযোগ/সংযোগ প্রতিস্থাপন করে দেয় যা তাকে সংসারের প্রতি দায়িত্বশীল এবং বিশ্বাসযোগ্য দাম্পত্য সম্পর্কে উৎসাহী করে।
বিস্তারিত

নারী পুরুষের যৌন পরিতৃপ্তি কিভাবে কাজ করে?

যারা বিবাহ করেছেন তারা হয়ত নিয়মিত মিলিত হওয়ার কারণে বিষয়টি লক্ষ্য করে থাকবেন। তারপরও আসুন জেনে নেয়া যাক নারী পুরুষের যৌন পরিতৃপ্তি কিভাবে কাজ করে? নারী মিলন-পুর্ব-সিঙারে পুরুষের তুলনায় অধিক সময় নিয়ে শারীরিক উত্তেজনা তথা যৌনমিলনের জন্য শারীরিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।

আনন্দের চরম শিখর আরোহনের পর সে ধীর গতিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে (পক্ষান্তরে পুরুষের অনন্দানুভুতি স্বল্প সময়ে ধ্বসে পড়ে). অনেক সময় এই অবস্থা লম্বা সময় নিয়ে নারী শরীরে বিরাজমান থাকে এবং মিলনকালে স্বামী কর্মঠ থাকলে থেমে থেমে একাদিকবার এ সুখবোধ অনুভব করেন। আকাঙ্খার শিখরে আরোহন পর্যন্ত যৌন পীড়ন ক্রমশঃ প্রকট হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তার শরীর পুরুষাঙ্গ গ্রহনে উতলা আগ্রহী হয়ে উঠবে। লিঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং পুরুষের সবল শরীর আন্দোলনে (সজোরে ঠেলে দেয়া) তার ভাললাগা অনুভবের মাত্রা উন্নিত হতে থাকে এবং সে যৌন পুর্নতৃপ্তির দিকে অগ্রসর হয়।
নারী পুরুষের যৌন পরিতৃপ্তি কিভাবে কাজ করে?

কিভাবে একজন নারী একই মিলনে একাধিক পুর্নতৃপ্তি অর্জন করতে পারে?

একজন নারী একই মিলনে দুই বা ততোদিক পরিতৃপ্তি অর্জন করতে পারেন - অপরপক্ষে পুরুষের ক্ষেত্রে বহুবার পরিতৃপ্তি অনুপস্থতিত। তীক্ষ তৃপ্তির কিনারায় গিয়ে সাময়িক বিরতি দিয়ে পুরুষ মিলনে সময় বাড়িয়ে তার সহধর্মিনীকে বহুমাত্রিক যৌনতৃপ্তি প্রদানে সক্ষম - যতক্ষন নারী সম্পুর্ন মাত্রায় উত্তেজিত থাকবে। প্রকৃতপক্ষে নারী সব মিলনে পরিপুর্ন তৃপ্তি অর্জন করেন না, এমনকি সে প্রতিবার পুর্নপরিতৃপ্তির আকাঙ্খাও করেনা। পরম যৌন পরিতৃপ্তি শেষে অধিকাংশ নারী স্বামীকে আবেগের সহিত চুমু খেয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং পরম আন্তরিকতায় জড়িয়ে ধরেন, কিছু নারী অনেকটা অবচেতন ভাবনায় হারিয়ে যায়। অনেকে ঘুমঘুম ভাবে আবিষ্ট হন।
বিস্তারিত

নারী গর্ভবতী হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় ?

যদি কোন নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন তাহলে প্রথম কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি কিছু বুঝতে নাও পারেন। একটু ক্লান্তি, একটু বমি বমি ভাব থাকতেও পারে আবার না-ও থাকতে পারে। হয়তো তিনি সেসব খেয়ালই করলেন না। প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয় সেটা হলো, সময় মাসিক না হওয়া। এটা গর্ভধারণের একটা নিশ্চিত লক্ষণ, তবে আরও অনেক কারণে মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। তাই মাসিক বন্ধ হলেই কোনো নারী গর্ভবতী হয়েছেন এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কিন্তু গর্ভবতী হলে মাসিক বন্ধ হবেই।
বিস্তারিত

সেক্স বা যৌন মিলনে নারীর কিছু কষ্টদায়ক সমস্যা ও সমাধান

আমাদের দেশের মেয়েরা স্বাভাবিক ভাবেই অনেক লাজুক। তাদের ছোট ছোট সমস্যাই শেয়ার করতে পারে না আর যৌন সমস্যা হলে তো কথাই নেই। মেয়েদের এমন কিছু কষ্টের কথা নিয়েই আজকের ছোট প্রবন্ধ। বিবাহিত মহিলা ও যারা বিয়ের পায়তারা করছেন তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী হবে বলেই মনে করছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে, সমস্যা গুলোকে হালকা দৃষ্টিতে না দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন হবে।

যৌন চাহিদা হওয়ার পরেও লুব্রিকেশনের অভাব

কারণঃ অনেকেরই যৌন চাহিদা হওয়া সত্ত্বেও যৌন স্থান ভিজে না। পানিশূন্যতা, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ (কাউন্টার এন্টিহিস্টামিন), নার্সিং, মেনোপজের সময় হরমোন লেভেল পরিবর্তন এর উল্লেখযোগ্য কারণ।
সেক্স বা যৌন মিলনে নারীর কিছু কষ্টদায়ক সমস্যা ও সমাধান
চিকিৎসাঃ পিচ্ছিল কারক পদার্থ ব্যবহার করতে হবে, পানি জাতীয় ব্যবহার করলে ভালো, কারণ কনডম এর জন্যে নিরাপদ। কিন্তু কেউ যদি তৈলাক্ত পিচ্ছিল কারক ব্যবহার করে তখন এটি কনডমের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে দিতে পারে। রঙ দেয়া, সেন্ট দেয়া ও ফ্লেভার জাতীয় লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। কারণ তা ইস্ট ইনফেকশন করে শুকনা ভাব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, ইস্ট ইনফেকশন কি তার পুরুষ সঙ্গীর শরীরেও ইনফেকশন করতে পারে? উত্তর হবে হ্যাঁ । এটি অনেক কমই হয়, কিন্তু হয়। একই রকম লক্ষণ যেমন- লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, যৌনমিলনের পর অস্বাভাবিক নিঃসরণ হতে পারে। কোন পুরুষের যদি ডায়াবেটিস থাকে, এন্টিবায়োটিক নিতে থাকে অথবা সে তার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোন কারণে কমে যায় তখন তার আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়। খৎনা করা না থাকলেও এর ঝুকি বেড়ে যায়। কারণ এর উপরের চামড়া ভেজা ভেজা অবস্থার সৃষ্টি করে যা ইস্ট বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে।

মিশনারি (পুরুষ উপরে থাকা ) পজিশনে যৌন মিলনে সমস্যা হওয়া

শতকরা ২০ ভাগ মহিলার জরায়ু নরমালের উল্টো দিকে থাকতে পারে অর্থাৎ পেটের দিকে না থকে শিরদাঁড়ার দিকে থাকেতে পারে। এ ক্ষেত্রে টেম্পুন বা ডায়াফ্রাম ব্যবহার করা কষ্টকর হয় কারণ তা জরায়ুর ভেতর পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তাই নারী উপরে থেকে মিলনে কষ্ট লাঘব হবে। আর মা হতে চাইলে যৌন মিলনের পর পেটের উপর অর্থাৎ উপুড় হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে তা স্পার্ম কে সাঁতরে জরায়ুমুখে যেতে সাহায্য করবে।

যৌন চাহিদা কমে যাওয়া

মেনোপজের কাছাকাছি বয়সের মহিলাদের এটি একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। মেনোপজের আগে ইস্ট্রোজেন হরমোন লেভেল কমে যায়। লুব্রিকেশনের অভাবে ব্যথা ও ব্যথা থেকে আগ্রহ কমে যাওয়া এর প্রধান কারণ।

চিকিৎসাঃ এমনটা হলে আপনার হোমিওপ্যাথের সাথে কথা বলুন। খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবেন।

যৌন মিলনের পর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া

কারণঃ চাপে ঘষা লেগে মূত্রনালিতে ইরিটেশন হলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মিলন আর যৌন স্থানের শুষ্ক ভাবও এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রস্রাব নালীতে ইনফেকশন হলেও এই সমস্যা হতে পারে। যদি প্রস্রাব যৌন স্থানে লাগার পর জ্বালাপোড়া হয় তবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মুত্রথলি খালি হওয়ার সাথে সাথে ব্যথা বাড়তে থাকলে মুত্রথলি ইনফেকশনের ব্যাপারেই সন্দেহ বেড়ে যায়।

চিকিৎসাঃ যৌন মিলনের পর বাথ টাব ভর্তি কুসুম গরম পানিতে বসে থাকলে ব্যথা কমতে পারে। তাছাড়া পিচ্ছিল কারক ব্যবহারেও মাঝে মাঝে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যদি এসব কিছুতেই লাভ না হয় তাহলে আপনার হোমিওপ্যাথের সাথে কথা বলুন কারণ তখন কারণটা ইনফেকশনের দিকেই বেশি ইঙ্গিত করে। পানি বেশি পান করলে পিচ্ছিলতা ও ইনফেকশন থেকে মুক্তি দুইটা জিনিসেই উপকার পাওয়া যায়।

যৌনমিলনের পর তীব্র দুর্গন্ধ ও চুলকানি

কারণঃ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এমন হতে পারে। নতুন বা একাধিক মিলন সঙ্গীর কারণে এমন হতে পারে। যৌন স্থানের ভেতরে কিছু দেয়া থাকলে ( যেমন চিকিৎসার জন্যে বা রোগ নির্ণয়ে কোন কিছু ব্যবহার করা হলে ) তা থেকেও হতে পারে। এর পাশাপাশি ইনফেকশনের আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে যেমন অস্বাভাবিক নিঃসরণ, জ্বালাপোড়া। চিকিৎসা না করা হলে ডেট এর আগেই ডেলিভারি হওয়া, স্বল্প ওজনের বাচ্চা জন্ম নিতে পারে।

চিকিৎসাঃ আপনার হোমিওপ্যাথের সাথে কথা বলুন। খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবেন।

শেষ করার আগে একটা ছোট্ট টিপস দিতে চাই। অনেকেই মনে করেন পিল খেলে মোটা হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়। দীর্ঘ দিন ব্যবহারের জন্যে পিলের উপরে কিছু নেই। আর নতুন বাজারে আসা পিল গুলোর সাইড ইফেক্ট-ও কম। কনডম ছিড়ে গিয়ে লিক করতে পারে। সেইফ পিরিয়ড মেনে যৌন মিলন শুধু রেগুলার পিরিয়ড হওয়া মেয়েদের জন্যেই কার্যকরী। তাও সেইফ থেকে ঠিক আনসেইফ পিরিয়ড হওয়ার সময়-ও ভুলবশত গর্ভধারণ হয়ে যেতে পারে কারণ এতটা হিসেব মেনে সেইফ আনসেইফ বের করা সম্ভব হয় না আর জরায়ুর ভেতরে জন্মনিয়ন্ত্রক ডিভাইস রেখে দিলে তার সাইড ইফেক্ট এর তো শেষ নেই। তাই সিদ্ধান্ত আপনার। নিরাপদ থাকুন।
বিস্তারিত

পিরিয়ডের সময় সেক্স বা যৌন মিলন করা কি উচিত ?

অনেকেই হয়ত পিরিয়ডের সময় স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন করার পক্ষপাতি। কিন্তু এটা করা কতটা যুক্তি সংগত হতে পারে আমাদের সকলেরই তা ভেবে দেখা উচিত। কারণ পিরিয়ডের সময় সেক্স করাটা শুধু অস্বাস্থ্যকরই নয় বরং ক্ষতিকর। মুসলমানদের জন্য এসময় সহবাস করা নিষিদ্ধ।
পিরিয়ডের সময় সেক্স বা যৌন মিলন করা কি উচিত ?
এই সময় মেয়েদের মুড পাল্টে যায়, কিছুটা বিষন্নতা, মাথা যন্ত্রণা, তল পেটে ব্যথা, সম্পুর্ন শরীর ব্যথা বা জ্বর জ্বর ভাব প্রভৃতি থাকতে পারে। এ সময় মেয়েরামিলন করতে তেমন আগ্রহীও হয়না। তাই সঙ্গম না করে বরং তার মনোভাবের দিকে খেয়াল রাখা কর্তব্য এবং তাকে কাজে সহযোগিতা করা উচিৎ। পিরিয়ডের সময় মেয়েরা অন্য সময়ের মতো ততটা আনন্দ পায় না। পিরিয়ডের সময় যৌন মিলন মেয়েদের খুব বেশি Bleeding এর কারন হতে পারে। তাছাড়া এসময় সঙ্গম করলে পুরুষের যৌনরোগে (STD: Sexually Transmitted Diseases) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিস্তারিত

দাম্পত্যজীবন, আমাদের অজ্ঞতা-পরিণাম ও করনীয়

মানুষ যে কোন কাজ করতে চায়, প্রথমে সে ঐ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। কাজটির হাকীকত ও উদ্দেশ্য কী? কাজটি আঞ্জাম দেয়ার সঠিক পন্থা কী? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী সমস্যা হতে পারে, সেগুলোর সমাধান কী? এগুলো জানা খুবই জরুরী। বিয়ের প্রস্তুতি মানে শুধু কেনা-কাটা নয়। বরং মানুষিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

অথচ জীবনের সবচে’ কাঠিন ও জটিল অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করে, বরং বলা যায় ঝাঁপ দেয়, কিছু না শিখে, না জেনে এবং না বুঝে একেবারে অপ্রস্ত্তত অবস্থায়। ফল কী হতে পারে?! কী হয়?! সংসারে দন্দ, ঝগড়া, শেষে বিচ্ছেদ। অথবা ঘর হয়ত টিকে থাকে কিন্তু শান্তি নেই। স্বাভাবিক শান্তি হয়ত বজায় থাকে, কিন্তু বিবাহ যে দুনিয়ার বুকে মানবের জন্য আল্লাহর দেয়া এক জান্নাতি নেয়ামত (সুকূন ও সাকীনাহ), সে খবর আপনা পাই না, শুধু অজ্ঞতার কারণে,শুধু শিক্ষার অভাবে।
দাম্পত্যজীবন, আমাদের অজ্ঞতা-পরিণাম ও করনীয়
আশ্চর্য,মা-বাবা সন্তানকে কত বিষয়ে কত উপদেশ দান করেন; উস্তাদ কত কিছু শিক্ষা দেন, নছীহত করেন, কিন্তু জীবনের সবচে’ কঠিন ও জটিল বিষয়টি কেন যেন তারা সযত্নে এড়িয়ে যান!

দাম্পত্য জীবনের এই যে নতুন অধ্যায় উর্দূতে এটাকে বলে ইযদিওয়াজী যিন্দেগী, বাংলায় বলে দাম্পত্য জীবন, অর্থাৎ এটা জীবন ও যিন্দেগির খুবই এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটা ঘাবড়ে দেয়ার জন্য বলছি না; প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি গ্রহণ ও পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য বলছি, যাতে পূর্ণ আস্থা ও সাহসের সঙ্গে আমরা এই নতুন জীবন শুরু করতে পারি। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তাহলে সবই সহজ।

এটা যে শুধু আমাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়! আমাদের মা-বাবার জীবনেও হয়েছে! আমাদের মা-বাবাও একদিন এ জীবন শুরু করেছিলেন। যদি সহজ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে তাহলে মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করা যায়, কীভাবে তারা এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন? জীবনের শুরুতে তারা কী ভেবেছিলেন, কী চেয়েছিলেন, কী পেয়েছেন? কখন কী সমস্যা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন। এই জীবনের শুরুতে আমাদের প্রতি তাদের কী উপদেশ? এধরনের সহজ আন্তরিক আলোচনায় সংসার জীবনের পথচলা অনেক সহজ হয়ে যায়। অবশ্য সব মা-বাবার সঙ্গে সব সন্তানের এমন সহজ সম্পর্ক থাকে না, তবে থাকা উচিত। জীবনের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সন্তান মা-বাবার কাছেই আসবে, মা-বাবাকেই নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে, বন্ধুবান্ধবকে নয়। কঠিন সমস্যার মুখে একজন অপরিপক্ব বন্ধু কীভাবে সঠিক পথ দেখাতে পারে! কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই ঘটে। সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, হয়ত কোন জটিলতায় পড়েছে; তখন তাদের প্রথম চেষ্টা হয় যে, মা-বাবা যেন জানতে না পারে, কারণ তাদের কানে গেলে সর্বনাশ!ছেলে তার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়, মেয়ে তার বান্ধবীর কাছে বলে,তারা তাদের মত করে পরামর্শ দেয়। ফলে অবস্থা আরো গুরুতর হয়।

অতীতে যাই ছিলো,এখন তো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, মা-বাবার জন্য সন্তানের বন্ধু হওয়া। বিপদে সমস্যায় সন্তানকে তিরস্কার পরে করা, আগে তার পাশে দাঁড়ানো। তাহলে সন্তান আরো বড় অন্যায় করা থেকে এবং আরো গুরুতর অবস্থায় পড়া থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এখন অবস্থা হলো, সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, বন্ধুকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। তাই সন্তান সমস্যায় পড়ে মা-বাবার কাছে আসে না, বন্ধুর কাছে আসে। এভাবে নিজের কারণেই সবচে’ কাছের হয়েও মা-বাবা হয়ে যায় দূরের,আর দূরের হয়েও বন্ধু হয়ে যায় কাছের। সন্তানের সমস্যা বন্ধু জানে সবার আগে। মা-বাবা জানে সবার পরে, পানি যখন মাথার উপর দিয়ে চলে যায় তখন।

বিবাহের আসল মাকছাদ বা উদ্দেশ্য হলো স্বামী ও স্ত্রী- এই পরিচয়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করা এবং মা ও বাবা-এই পরিচয়ে সন্তান লাভ করা। তারপর উত্তম লালন-পালন এবং আদর্শ শিক্ষা-দীক্ষা ও তারবিয়াতের মাধ্যমে নেক সন্তানরূপে গড়ে তুলে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করা,যাতে নস্লে ইনসানি বা মানববংশ কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পছন্দমত আগে বাড়তে থাকে।

এটাই হলো বিবাহের আসল উদ্দেশ্য; অন্য যা কিছু আছে তা সব পার্শ্ব-উদ্দেশ্য। তো এখনই তুমি নিয়ত ঠিক করে নাও যে, কেন কী উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে। উদ্দেশ্য যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে দেখতে পাবে, আল্লাহ চাহে তো এখনই তোমার ভিতরে কত সুন্দর পরিবর্তন আসছে! কী আশ্চর্য এক পরিপূর্ণতা নিজের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে! আগামী জীবনের সকল দায়দায়িত্ব পালন করার জন্য গায়ব থেকে তুমি আত্মিক শক্তি লাভ করছো। আল্লাহ তাওফীক দান করেন।

বিবাহের পর দুজনের মধ্যে সম্পর্ক হয় স্বামী-স্ত্রীর, দু’দিন পরেই হয়ে যায়- মা এবং বাবা। সেটা তো জীবনের আরো কঠিন, আরো জটিল অধ্যায়। প্রাকৃতিক নিয়মে মা-বাবা হয়ে যাওয়া খুব সহজ। কিন্তু আদর্শ মা-বাবা হওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ শিক্ষা ও দীক্ষা।

আমরা যেন সন্তানের সামনে তার মাকে অসম্মান করো করি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের স্ত্রী কিন্তু আমাদের সন্তানের মা, আমাদের চেয়েও অধিক শ্রদ্ধার পাত্রী। সন্তান যেন কখনো, কখনোই মা-বাবাকে ঝগড়া-বিবাদ করতে না দেখে। আর স্বামী-স্ত্রী উভয়ই সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করা, এমন বন্ধু যাকে নিজের মনের কথা, সব কথা নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারে।

বিবাহ মানে- নিছক একটি যুবক ছেলে বিয়ের পর হয়ে যাচ্ছে একজন দায়িত্ববান স্বামী। কত বিরাট পার্থক্য এই দাম্পত্য জীবনের মধ্যে। আমাদেরকে বুঝতে হবে। কেন আমি বিবাহ করছি ? বিবাহের উদ্দেশ্য কী? আমাদের দেশে পারিবারিক পর্যায়ে একটা নিন্দনীয় মানসিকতা হলো,সংসারের প্রয়োজনে বিবাহ করা,আরো খোলামেলা যদি বলি, কাজের মানুষের প্রয়োজনে ছেলেকে বিয়ে করানো। সবাই যে এমন করে তা নয়, তবে এটা প্রবলভাবে ছিলো, এখনো কিছু আছে। মেয়ের বিয়ের পর শশুরবাড়ীতে রাত পোহালেই যেন পুত্রবধুর সামনে কাপড়ের স্ত্তপ নিক্ষেপ করে শাশুড়ী আদেশ, কাপড়ে সাবান লাগাও, দেখি, মায়ের বাড়ী থেকে কেমন কাজ শিখে এসেছো !একবন্ধুর কথা, বিয়ের প্রয়োজন। কেন? কারণ মা-বাবার খেদমত করার কেউ নেই।

এটা কিন্তু বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। মা-বাবার খেদমত মূলত আমাদের দায়িত্ব। এখন সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তোমার সাথে এতে শরীক হয়, তবে সেটা উভয়ের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে। কিন্তু আমি আমার পুত্রকে অবশ্যই বলবো, বিবাহের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মা-বাবার খেদমত করা হতে পারে না।

বৈধ উপায়ে স্ত্রী পরিচয়ে কাউকে ভোগ করা,এটাও বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বলা হয় শরীকে হায়াত, জীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী। বস্ত্তত এই শব্দটির মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সুমহান উদ্দেশ্যটি নিহিত রয়েছে। আর যদি কোরআনের ভাষায় বলি তাহলে বিবাহের উদ্দেশ্য হল,
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
ভেবে দেখার বিষয়, দাম্পত্য-সম্পর্কের কী গভীর তাৎপর্য এখানে নিহিত!
পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,বিবাহ হচ্ছে আমার সুন্নত। আর বলেছেন, যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। বিবাহ নবীর সুন্নত! সুতরাং সহজেই বোঝা যায়, বিরাট ও মহান কোন মাকছাদ রয়েছে এর পিছনে।

এবার জীবনের বাস্তবতার কথা বলি, এতদিন তোমার জীবনে ছিলেন শুধু তোমার মা, যিনি তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, প্রসববেদনা ভোগ করেছেন। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করে তোমাকে প্রতিপালন করেছেন। এতদিন তোমার উপর ছিলো তাঁর অখন্ড অধিকার। হঠাৎ তিনি দেখছেন, তাঁর আদরের ধন, তাঁর অাঁচলের রত্ন পুত্রের জীবনে স্ত্রীপরিচয়ে অন্য এক নারীর প্রবেশ (অনুপ্রবেশ?) ঘটেছে! এভাবে পুত্রের উপর তার অখন্ড অধিকার খন্ডিত হতে চলেছে। যে পুত্র ছিলো এতদিন তাঁর একক অবলম্বন, এখন সে হতে চলেছে অন্য এক নারীর অবলম্বন। এ বাস্তবতা না তিনি অস্বীকার করতে পারছেন, না মেনে নিতে পারছেন। সংসারে প্রত্যেক মায়ের জীবনে এ কঠিন সময়টি আসে। এমন এক অর্ন্তজ্বালা শুরু হয় যা শুধু তিনি নিজেই ভোগ করেন, কাউকে বোঝাতে পারেন না, এমনকি এতদিনের আদরের ধন পুত্রকেও না। ফলে সামান্য সামান্য কারণে, এমনকি অকারণেও তিনি খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়েন; তাঁর অনুভূতি আহত হয়। এমন সময় ছেলে (এবং তার স্ত্রী অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও অপিরপক্বতার কারণে) যদি অসঙ্গত কিছু বলে বা করে বসে তাহলে তো মায়ের মনে কষ্টের শেষ থাকে না। প্রসববেদনা থেকে শুরু করে প্রতিপালনের সব কষ্ট একসঙ্গে মনে পড়ে যায়।

কেন বলছি স্ত্রীর বিষয়টি সবচে’ নাযুক? তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দাও; কোন বিবাহে কোন ছেলেকে কাঁদতে দেখেছো?! কোন ছেলের মা-বাবাকে বিষণ্ণ দেখেছো?! দেখোনি; (হয়তো ব্যতিক্রম এক দুইটি ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থা এটিই, এদের কেউ কাঁদে না।) কেন? কারণ বিবাহের মাধ্যমে ছেলে কিছু হারায় না, ছেলের মা-বাবা কিছু হারায় না, বরং অর্জন করে। তাই তাদের মুখে থাকে অর্জনের হাসি এবং প্রাপ্তির তৃপ্তি।

বিবাহের আসরে কাঁদে শুধু মেয়ে, আর মেয়ের মা-বাবা। কেন কাঁদে একটি মেয়ে? কারণ তাকে সবকিছু হারাতে হয়, সবকিছু ত্যাগ করতে হয়। মা-বাবাকে ছেড়ে আসতে হয়, শৈশবের সব স্মৃতি তাকে মুছে ফেলতে হয়। একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনে এটি অনেক বড় আঘাত। এ যেন একটি ছোট্ট গাছের চারাকে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে বহু দূরে ভিন্ন পরিবেশে নতুন মাটিতে এনে রোপণ করা। বাকি জীবন তাকে এই মাটি থেকেই রস আহরণ করে বেঁচে থাকতে হবে।
হিন্দিতে বলে, ‘আওরত কী ডোলী যাহা উত্যরতী হ্যয়, উসকী আর্থী ওহীঁ সে উঠতি হ্যয়।’ অর্থাৎ মেয়েদের পালকি যেখানে গিয়ে নামে, সেখান থেকেই তার জানাযা ওঠে।
কত বড় নির্মম সত্য! তো তোমার স্ত্রীরূপে তোমার ঘরে আসা এই ছোট্ট মেয়েটির যখমি দিলে তাসাল্লির মরহম তোমাকেই রাখতে হবে। একমাটি থেকে উপড়ে এনে আরেক মাটিতে রোপণ করা একটি চারাগাছ থেকে দু’দিন পরেই ফল দাবী করা কতটা নিষ্ঠুরতা! ফল পেতে হলে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। চারা গাছটির পরিচর্যা করতে হবে, সকাল-সন্ধ্যা তার গোড়ায় পানি দিতে হবে। ধীরে ধীরে শিকড় যখন মাটিতে বসবে এবং মাটি থেকে রস সংগ্রহ করার উপযুক্ত হবে, তখন তোমাকে ফল চাইতে হবে না; সজীব বৃক্ষ নিজে থেকেই ফল দিতে শুরু করবে।

কত আফসোসের বিষয়, দাম্পত্য জীবনের শুরুতে যত আদেশ-উপদেশ সব ঐ ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বর্ষিত হয়। প্রথম দিনেই তাকে শুনতে হয়, এখন থেকে তাকে স্বামীর মন জয় করতে হবে, শশুর-শাশুড়ি সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, শশুর বাড়ীর সবার মন যুগিয়ে চলতে হবে। তার নিজের যেন কোন ‘মন’ নেই। সুতরাং সেটা জয় করারও কারো গরজ নেই।

তো মায়ের মন তোমাকেই রক্ষা করতে হবে,আবার স্ত্রীর মনোরঞ্জনও তোমাকেই করতে হবে। সবদিক তোমাকেই শামাল দিয়ে চলতে হবে। কত কঠিন দায়িত্ব! অথচ না শিক্ষাঙ্গনে, না গৃহপ্রাঙ্গণে, কোথাও এ সম্পর্কে শিক্ষার নূন্যতম কোন ব্যবস্থা নেই। সম্পূর্ণ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় দু’টি অপরিপক্ব তরুণ-তরুণীকে যেন সংসার সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া! মেয়েটিও জানে না, আজ থেকে সে আর ছোট্ট মেয়েটি নেই। সে এখন স্ত্রী হয়ে একটি অপরিচিত মানুষের জীবনে প্রবেশ করছে, যার মা আছে, বাবা আছে, ভাইবোন আছে এবং তাদের প্রতি তার স্বামীর অনেক দায়-দায়িত্ব আছে। সহানুভূতির সঙ্গে কোমলাতার সঙ্গে এই দায়িত্ববোধ কেউ তার মধ্যে জাগ্রত করে দেয়নি। এ দোষ কার!

কথা দ্বারা আচরণ দ্বারা তোমার মাকে তুমি বোঝাবে, মা, আমি আপনারই ছিলাম, আছি এবং থাকবো। স্ত্রী হলো আমার জীবনের নতুন প্রয়োজন; আপনি আমার প্রাণ, আপনার সঙ্গে আমার নাড়ির টান।

অন্যদিকে স্ত্রীকে বোঝাতে হবে, এই সংসার সমুদ্রে তুমি একা নও; আমি তোমার পাশে আছি। নতুন জীবনে চলার পথে আমারও অনেক কষ্ট হবে, তোমারও অনেক কষ্ট হবে। তবে সান্ত্বনা এই যে, তুমিও একা নও, আমিও একা নই। আমার পাশে তুমি আছো, তোমার পাশে আমি আছি। আমার কষ্টের সান্ত্বনা তুমি, তোমার কষ্টের সান্ত্বনা আমি। আমরা পরস্পরের কষ্ট হয়ত দূর করতে পারবো না, তবে অনুভব করতে পারবো এবং হয়ত কিছুটা লাঘব করতে পারবো। আল্লাহর কসম, এমন কোন নারিহৃদয় নেই যা এমন কোমল সান্ত্বনায় বিগলিত হবে না।

তোমার স্ত্রীকে তুমি এভাবে বলবে,আমাদের জীবন তো আলাদা ছিলো। আমরা তো একে অপরকে চিনতামও না। আল্লাহ আমাদের কেন একত্র করেছেন জানো?! একা একা জান্নাতে যাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদের একত্র করেছেন একসঙ্গে জান্নাতের পথে চলার জন্য। আমি যদি পিছিয়ে পড়ি, তুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাবে; তুমি যদি পিছিয়ে পড়ো, আমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো। তুমি সতর্ক থাকবে, আমার দ্বারা যেন কারো হক নষ্ট না হয়; আমিও সতর্ক থাকবো, তোমার দ্বারা যেন কারো প্রতি যুলুম না হয়।

স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য তার সন্তানকে সামনে আনতে হবে। অর্থাৎ তুমি তাকে বলবে, দেখো, জীবন কত গতিশীল! সবকিছু কত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে! দু’দিন আগে আমরা শুধু যুবক-যুবতী ছিলাম,আজ হয়ে গেছি স্বামী-স্ত্রী। দু’দিন পরেই হয়ে যাবো মা-বাবা। আমি বাবা,তুমি মা!আল্লাহর কাছে একজন মায়ের মর্যাদা কত! তোমার কদমের নীচে হবে তোমার সন্তানের জান্নাত! যেমন আমার মায়ের কদমের নীচে আমার জান্নাত। তো তোমার সন্তান কেমন হলে তুমি খুশী হবে? আমাকেও আমার মায়ের ঐরকম সন্তান হতে তুমি সাহায্য করো। আমি যদি ভুল করি, মায়ের কোন হক নষ্ট করি, মায়ের সামনে ‘উফ’ করি, তুমি আমাকে সাবধান করো, আমাকে সংশোধন করো। তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমার সন্তানও তুমি যেমন চাও তেমন হবে।

প্রয়োজন হলে স্ত্রীকে মা-বাবার সামনে তিরস্কার করবে, তবে ঘরে এসে একটু আদর, একটু সোহাগ করে বোঝাতে হবে,কেন তুমি এটা করেছো?!বোঝানোর এই তরযগুলো শিখতে হবে,আর এটা দু’একদিনের বিষয় নয়,সারা জীবনের বিষয়। কিন্তু আমরা ক’জন এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করি?! হয় মাতৃভক্তিতে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করি, না হয়, স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেই, আর দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ হয়। আমার একটা কথা মনে রেখো, মায়ের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা মূলত মায়ের প্রতি যুলুম, তদ্রূপ স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের হক নষ্ট করা আসলে স্ত্রীর প্রতি যুলুম। আমার একথার উৎস হলো,
أنصر أخاك ظالما أو مظلوما
অবশ্য সবকিছু হতে হবে হিকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে।
একটি ঘটনা বলি, একবার তার মা তাকে বললেন, তোর বউ আজ তোর এত আপন হয়ে গেলো কীভাবে!

আমি বললাম, দেখো মা, তোমাকে আমি মা বলি; এই ‘মা’ ডাকটুকু পাওয়ার জন্য তোমাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে! অথচ ‘পরের বাড়ীর মেয়েটি’র মুখ থেকে তুমি বিনা কষ্টে ‘মা’ ডাক শুনতে পাও! তোমাকে যে মা বলে ডাকে সে আমার আপন হবে না কেন মা?

আরেকটা ঘটনা, এক মা তার মেয়ের শাশুড়ী সম্পর্কে বললেন, মানুষ না,মেয়েটাকে আনতে পাঠালাম,দু’টো পিঠে বানিয়ে খাওয়াবো,দিলো না,ফেরত পাঠিয়ে দিলো!

দু’দিন আগে তিনিও একই কাজ করেছিলেন,ছেলের বউকে নিতে এসেছিলো মায়ের বাড়ী থেকে। তিনি বললেন,দু’দিন পরে আমার মেয়েরা আসবে এখন তুমি গেলে কীভাবে চলবে!

ভদ্রমহিলাকে বললাম, আপনার কাজটা কি ঠিক হয়েছিলো? আপনাকে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, সতর্ক করা উদ্দেশ্য। আল্লাহর কাছে যদি আটকা পড়েন তখন তো আপনিই বলবেন, তুমি তো হাদীছ-কোরআন পড়েছো, আমাকে সতর্ক করোনি কেন?

মোটকথা, মেয়েদেরকে তারবিয়াত করতে হবে যাতে তারা আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা এবং আদর্শ শাশুড়ীরূপে আদর্শ জীবন যাপন করতে পারে। পুরুষ হচ্ছে কাওয়াম ও পরিচালক। সুতরাং তারবিয়াত ও পরিচালনা করা পুরুষেরই দায়িত্ব। স্ত্রী, মা ও শাশুড়ী, জীবনের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ধাপের জন্য ঘরে ঘরে আমরা যদি আমাদের মেয়েদের গড়ে তুলতে পারি, আদেশ দ্বারা, উপদেশ, সর্বোপরি নিজেদের আচরণ দ্বারা তাহলেই সংসার হতে পারে সুখের, শান্তির।

তোমার স্ত্রীর কোন আচরণ তোমার অপছন্দ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে তোমাকে ভাবতে হবে, তোমার সব আচরণ কি সুন্দর,তোমার স্ত্রীর পছন্দের? তাছাড়া তোমার স্ত্রীর ভালো দিক কি কিছু নেই। সেই ভালো দিকগুলোর জন্য শোকর করো, আর যা তোমার কাছে মন্দ লাগে তার উপর ছবর করো। আর যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করো, তারপর কোমল ভাষায় বলো, তোমার এই বিষয়টা যদি না থাকতো তাহলে তুমি আরো অনেক ভালো হতে। তবে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ মনে রাখতে হবে,একটু বাঁকা থাকবেই,এই বক্রতা,সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে নায, আন্দায, মান, অভিমান, লাস্যতা, এই বক্রতা নারীর সৌন্দর্য, নারীর শক্তি। এটাকে সেভাবেই গ্রহণ করে তার সঙ্গে জীবন যাপন করতে হবে, পূর্ণ সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে, আর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।

সত্যি সত্যি যদি তোমার স্ত্রীর গুরুতর কোন ত্রুটি থাকে তবে সেটা সংশোধনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্যই তোমার। তবে সেক্ষেত্রেও সংশোধনের জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যেতে হবে। ধমক দিয়ে, জোর খাটিয়ে সংশোধন করা যায় না, ঘরে অশান্তি আনা যায়, ঘর ভাঙ্গা যায়, আর সন্তানদের জীবনে বিপর্যয় আনা যায়।

স্ত্রীর সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, এ সম্পর্কে একজনকে যা বলতে শুনেছিলাম, তা ছিল খুবই মর্মান্তিক। তিনি বলেছিলেন,‘মেয়েলোক যেন তোমার মাথায় চড়ে না বসে, তাই প্রথম দিন থেকেই তাকে শাসনের মধ্যে রাখবা। পূর্ণ ইতা‘আত ও আনুগত্য আদায় করে নিবা,গোরবা কুশতান দর শবে আওয়াল।’

এ প্রবাদ এমনই বিশ্ববিশ্রুত যে, আমাদের নিরীহ বাংলাভাষায়ও বলে,‘বাসর রাতেই বেড়াল মারতে হবে’। কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও আমাদের অনুসরণীয় হলো সুন্নাতে রাসুল, আর তিনি ইরশাদ করেছেন,
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي
তো জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শরীয়তের সীমারেখায় থেকে স্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণই আমাকে করতে হবে, যাতে সে মনে করে, আমি সর্বোত্তম স্বামী, আমার মতো উত্তম স্বামী হয় না, হতে পারে না।
স্ত্রীগণের সঙ্গে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কী ছিলো তা জানতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। স্বামীর খেদমত করার মাধ্যমে স্ত্রী অনেক আজর ও ছাওয়াবের অধিকারিণী হতে পারে, এটা আলাদা কথা। তবে আমাকে মনে রাখতে হবে যে, এটা স্ত্রীর মহত্ত্ব, স্বামীর অধিকার নয়। তারা যদি কখনো মায়ের বাড়ী যেতে চায়, আমরা প্রশ্ন করি, ‘আমার খাওয়া-দাওয়ার কী হবে?’ অথচ এটা তার বিবেচনার বিষয় হতে পারে, আমার প্রশ্ন করার বিষয় নয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: সহবাস দাম্পত্য জীবনের একটি অপরিহার্য সত্য। এ বিষয়ে আলোচনাকে হায়া-শরমের খেলাফ মনে করা হয়। ফলে বিষয়টি অজ্ঞতার মধ্যে থেকে যায়। একারণে এমনকি অনেক সময় দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে পড়ে। স্ত্রী তোমার সারা জীবনের সম্পদ এবং সেরা সম্পদ।

متاع মানে সম্পত্তি নয়, ভোগের বস্ত্ত নয় متاع মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য। বিষয়টি বুঝতে না পেরে আধুনিক বুদ্ধিজীবীরা হাদীছের সমালোচনা করেন। আমরা হাদীছটির তরজমা ও ব্যাখ্যা এমন খন্ডিতভাবে করি যে, তারাও সুযোগ পেয়ে যায়।

তো স্ত্রী তোমার সম্পত্তি নয়, স্ত্রী হলো তোমার জীবনের সর্বোত্তম সম্পদ, যা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে তোমাকে রাখতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।

প্রথমেই বর্বর ও পাশবিকরূপে নিজেকে স্ত্রীর সামনে তুলে ধরা বিরাট মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্ত্রী স্বামীর ভোগের পাত্রী নয়, বরং স্বামী-স্ত্রী হলো পরস্পরকে উপভোগ করার জন্য। যত দিন লাগে, দীর্ঘ সাধনা করে প্রথমে হৃদয় জয় করো, মনের দুয়ার খোলো, অন্তরের গভীরে প্রবেশ করো।

যিন্দেগীর এই কঠিন মারহালা সম্পর্কে কত কিছু যে বলার আছে, কত কিছু যে শেখার আছে! দেখি, যদি আবার কখনো সুযোগ হয়।[দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, নারীরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা অতি প্রয়োজন।এ বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। কিন্তু নারীর তালীম-তরবিয়তের ভারও তো পুরুষেরই উপর। বিয়ের আগে পিতামাতা তার তরবিয়ত করবেন, বিয়ের পর স্বামী।...লেখক:সাঈদ আলী হাছান (বিশিষ্ট ব্লগার )
বিস্তারিত

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০১৪

HIV - AIDS কি? এইডস্ সম্পর্কে জানুন এবং সচেতন হন

এইডস্ হলো শরীর বা মনের অস্বাভাবিক অবস্থা নির্দেশক লক্ষণসমষ্টি -যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতির কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় আত্মপ্রকাশ করে। এক ধরনের ভাইরাস এর মাধ্যমে এইডস্ এক জনের দেহ থেকে অন্যের দেহে সংক্রমিত হয়। কোন মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তাদেরকে HIV+ বলা হয়।

HIV কি: এটি একটি ভাইরাসের নাম, যার পূর্ণাংগ রূপ হলো Human immunodeficiency virus।

AIDS কি:- HIV ভাইরাসের সংক্রমনের ফলে যে রোগ সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় AIDS।
HIV - AIDS কি? এইডস্ সম্পর্কে জানুন এবং সচেতন হন

H IV ভাইরাসের সংক্রমন কিভাবে হতে পারে?

  • অনৈতিক ও অনিরাপদ যৌন সংগমঃ অনৈতিক বলতে বোঝানো হচ্ছে বহুগামিতা বা একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌনমিলনের ইতিহাস। অনিরাপদ বলতে বোঝানো হচ্ছে কনডম বিহীন সঙ্গম, যা একজন সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে করার ফলে আপনিও সংক্রমিত হতে পারেন। যোনী পথ, পায়ু পথ ও মুখ পথ- তিন ক্ষেত্রেই বীর্যপাতের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমন হতে পারে। কনডোম বিহীন অবস্থাতেও বীর্যপাতে অভ্যন্তরে ঘটা থেকে সম্পূর্ণ রহিত করা গেলেও ভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাচা যায় যদি মুখ, পায়ুপথ বা যোনীপথে কোন কাটা-ছেড়া না থাকে। পুরুষের কাছ থেকে নারী সংক্রমিত হয়, কিন্তু নারীর কাছ থেকে পুরুষের সংক্রমনের সম্ভাবনা কম। যদি আক্রান্ত নারীর যোনীরস পুরুষাঙ্গের ভিতরে ঢুকে পরে না পুরুষাঙ্গে কোন কাটা ছেড়া থাকে, তবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই সেক্স টয় এর ব্যবহারেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। চুমুর মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমন হয়না যদি উভয়েরই মুখে কাটা বা দাতে দিয়ে রক্ত পরার সমস্যা না থাকে।
  • রক্তগ্রহণ ও ব্যবহৃত সুই ব্যবহারঃ সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে রক্ত বা কোন অংগ (যেমন কিডনী) গ্রহণের মাধ্যমে আপনি সংক্রমিত হতে পারেন, কিন্তু আপনি রক্ত বা অংগ দান করলে ভয়ের কিছু নেই। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুই ব্যবহারের মাধ্যমেও আপনি সংক্রমিত হতে পারেন।
  • আক্রান্ত মায়ের গর্ভস্থ শিশুও মা হতে সংক্রমিত হয়।
কিন্তু সাধারণ ছোয়া, একই দ্রব্য ব্যবহার (সেক্স টয় ব্যতীত), সর্দি-কফ বা মশার কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় না।

HIV দ্বারা সংক্রমনের লক্ষণ

সংক্রমিত হওয়ার ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে কিছু ফ্লু-জাতীয় লক্ষন যেমন জ্বর, গলাব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, মাংস পেষীতে ব্যথা, জয়েন্ট এ ব্যথা ইত্যাদি দেখা যেতে পারে। এরপর আবার ব্যক্তি একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। এভাবে ভাইরাস কোন লক্ষন প্রকাশ না করে চুপচাপ ১০ বছর পর্যন্ত শরীরে বসে থাকতে পারে। কিন্তু এই সময়ে কোন লক্ষন না থাকলেও সংক্রমিত ব্যক্তি অন্যদের সংক্রমিত করতে থাকে।

HIV কিভাবে AIDS ঘটায়?

HIV যতদিন শরীরে থাকে, আস্তে আস্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে থাকে। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধে সাহায্যকারী CD4 T কোষগুলো কে ভাইরাস টি ধ্বংস করতে থাকে। যখন প্রতি মিলিমিটার আয়তনের রক্তে CD4 T কোষের সংখ্যা ২০০ এর নীচে নামে তখন AIDS এর লক্ষন পরিপূর্ণ প্রকাশ পায়। CD4 T কোষের সংখ্যা ২০০ এর নীচে নামতে ১০ বছরও সময় লাগতে পারে।

AIDS এর লক্ষণ কি?

AIDS এর নিজস্ব কোন লক্ষণ নেই। এটি শুধুমাত্র শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে দূর্বল করে বসে থাকে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি এই জীবানুপূর্ণ পৃথিবীতে সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পরে। এই সময়ে সমস্ত সাধারণ জীবানু দ্বারাও সে আক্রান্ত ও কাবু হয়ে পরে, অথচ সাধারণ অবস্থায় যেসব জীবানুর সঙ্গে যুদ্ধ করা তার জন্য কোন ব্যপার ই ছিলোনা। এই ধরণের জীবানুর আক্রমন কে বলা হয় opportunistic infections বা সুযোগ-সন্ধানী আক্রমন (যেহেতু রোগীর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল, এই সুযোগে সে আক্রমন করেছে)। opportunistic infections এর কারণে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তা হলো-
  • ঠান্ডা লাগা
  • সপ্তাহব্যপী ১০০ ডিগ্রী এর উপরে জ্বর থাকা
  • রাতের বেলা ঘাম হওয়া
  • লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া
  • ওজন কমতে থাকা
  • মাংস পেষীতে ব্যথা
  • জয়েন্ট এ ব্যথা
  • সার্বক্ষনিক দূর্বলতা বোধ করা
  • ক্রমাগত ডায়রিয়া থাকা
  • মুখে ও জীহবায় সাদা ঘা থাকা
আস্তে আস্তে আরো ভয়াবহ রোগ ও তার শরীরে বাসা বাধতে থাকে যেমন- মেনিঞ্জাইটিস, যক্ষা, ক্যানসার, নিওমোনিয়া, সাইটোমেগালো ও হার্পিস ভাইরাসের আক্রমন ইত্যাদি।

চিকিতসা

AIDS এর এখন পর্যন্ত কোন নিরাময় নেই তবে চিকিতসা আছে। AIDS এর চিকিতসায় ব্যবহৃত হয় highly active antiretroviral therapy বা HAART। এটি মূলত একাধিক এন্টি ভাইরাল ওষুধের সমন্বয়। এটি শরীর থেকে ভাইরাস দূর করতে পারেনা, কিন্তু কমাতে পারে। ফলে CD4 T কোষ এর সংখ্যা ২০০ এর নীচে নামেনা। CD4 T কোষ এর সংখ্যা ২০০ এর উপরে থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির আয়ুষ্কাল ও সুস্থ্যতা-দুই ই বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দীর্ঘকাল একই এন্টি ভাইরাল ওষুধের কম্বিনেশন ব্যবহার করলে ভাইরাসটি এই ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে যেতে পারে, তাই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একাধিক কম্বিনেশন ব্যবহার করা হয়। তবে এই চিকিতসার কিছু মারাত্মক প্বার্শপ্রতিক্রিয়া আছে- যেমন কাধে কুজের মত চর্বি জমা, হার্ট এটাকের ঝুকি বেড়ে যাওয়া, কোলেস্টেরল ও ব্লাড গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

HIV ভাইরাসের সংক্রমন হওয়ার সাথে সাথে তা যদি নির্ণয় করা যায় এবং AIDS এর লক্ষন প্রকাশের আগেই চিকিতসা শুরু করা যায়, রোগীর আয়ুস্কাল ও বেড়ে যায়।

তাছাড়া কেউ যদি আক্রান্ত হওয়ার মত ঝুকিপূর্ণ আচরণ করে বা করতে বাধ্য হয়, তবে ৭২ ঘন্টার মধ্যে PEP (post-exposure prophylaxis) ওষুধটি গ্রহণ করলে প্বার্শপ্রতিক্রিয়া থাকলেও মোটামোটি ভাবে ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কারা ঝুকি তে আছেন ?

  • বহুগামী যৌন আচরনের অভ্যস্ত ব্যক্তি
  • সুই ব্যবহার কারী মাদকাসক্ত ব্যক্তি
  • কোন ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত থাকলে বা মাদকাসক্ত হলে বা বহুগামী আচরনে অভ্যস্থ হলে
  • আক্রান্ত মায়ের গর্ভস্থ সন্তান
  • অপরিক্ষীত রক্ত গ্রহনকারী ব্যক্তি

আপনি ঝুকিপূর্ণদের একজন হলে কি করবেন ?

যদি আপনি গত তিনমাসের মধ্যে কোন ঝুকিপূর্ণ আচরন (যেমন অনৈতিক বা অনিরাপদ সঙ্গম, ব্যবহৃত সুই ব্যবহার, অপরিক্ষীত রক্ত গ্রহণ ইত্যাদি) করে থাকেন তাহলে,রক্তে HIV এর উপস্থিতির জন্য পরীক্ষা করান। তিন মাস পরে পরীক্ষা করানোটাই সবচেয়ে ভালো কারন এর আগে অনেক সময় ই রক্তে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যায়না। পরীক্ষাতে HIV এর উপস্থিতি বোঝা গেলে আরো কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমন কতটা ভয়াবহ বা কি পরিমাণ ভাইরাস শরীরের আছে তা নির্ণয় করা হয়। এরপর AIDS এর লক্ষন প্রকাশের জন্য অপেক্ষা না করেই চিকিতসা শুরু করে দেয়া সম্ভব। এবং যত তারাতারি নির্ণয় করে চিকিতসা শুরু করা যায়, রোগীর আয়ুষ্কাল ও সুস্থতার মাত্রা- দুই ই বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, যদি আপনি ঝিকিপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে থাকেন, সচেতন হোন এবং রোগ নির্নয়ে এখনই পদক্ষেপ নিন।

কখন নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি আক্রান্ত হননি ?

যদি ঝুকিপূর্ণ আচরন করার ছয়মাস পরে টেস্ট করে কোন ভাইরাসের উপস্থিতি না পান, তবে নিশ্চিত হতে পারবেন যে, এইবারের ঝুকিপূর্ণ আচরন দ্বারা আপনি আক্রান্ত হননি।

টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসা মানে কি আপনার সঙ্গীও সংক্রমন মুক্ত ?

আপনার টেস্টের রেজাল্ট দিয়ে আপনার সঙ্গীর অবস্থা যাচাই করা যাবেনা। হতে পারে যে, সে আক্রান্ত কিন্তু আপনি এখন পর্যন্ত তার দ্বারা সংক্রমিত হননি।

আপনার পরিবারের জন্য আপনার কি করণীয় ?

  • AIDS কি এবং কিভাবে হতে পারে-পরিবারের সবাইকে শিক্ষা দিন।মুখে না বলে, এক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত বই-পুস্তক বা পোস্টার সরবরাহ করতে পারেন।
  • শিশু-কিশোর দের নৈতিকতা শিক্ষা দিন
  • যে কোন প্রয়োজনে রক্ত নেওয়ার আগে, রক্ত পরীক্ষা করে নিন বা বিশ্বস্ত পরিচিত লোকের শরীর থেকে রক্ত নিন।
  • পরিবারের কোন মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই ছেলে সম্পর্কে ভালো ভাবে খোজ নিন। বিদেশে বেশীদিন থাকা পাত্র দেখে মাত্র লালায়িত না হয়ে, তার বিদেশ জীবন সম্পর্কে ভালো মত খোজ নিন। অবশ্যই বিদেশে থাকা সবাই খারাপ না, কিন্তু অনেকে দীর্ঘ প্রবাসে নিঃসঙ্গতা ও সহজলভ্যতার কারণে অনৈতিক আচরন ও মাদক গ্রহণে জড়িয়ে পরে।
  • কেউ ধর্ষিত হলে তিন মাস পর, HIV পরীক্ষা করান।
সবার পরিবারের সুস্থ্যতা কামনা করি। সবাই ভালো থাকবেন।
বিস্তারিত

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কি কি করণীয়

মুধময় দাম্পত্য জীবনকে অনাবিল সুখের করতে স্বামী স্ত্রী দু'জনেরই কিছু না কিছু কর্তব্য রয়েছে। কেউ যদি তা করতে ভুল করেন এবং সেই ভুলের উপর অবিচল থাকেন তাহলে সংসারে ভাঙ্গন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই আসুন একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কি কি করণীয় এবং কি কি বর্জনীয় তা দেখে নেই।

খারাপ ব্যবহার করা :- তাকে এমন কিছু নিয়ে ঠাট্টা করা যাতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমন ধমক দেয়া যা অন্যদের সামনে তার অসম্মান হয়ে যায়। তাকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।
উপেক্ষা করা :- তার পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা তার কথাবার্তাকে গোণায় না ধরা বা পাত্তা না দেয়া। হয়ত সে সালাম দিয়েছেন আপনাকে, আপনি উত্তর দিলেন না। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে হয়ত সে কিছু বলছে কিন্তু আপনি বিশেষ কারণ ছাড়াই তার কথার পাত্তা দিচ্ছেন না।

মিথ্যা বলা :- কিছুতেই মিথ্যা বলা সঠিক নয়। আল্লাহ মিথ্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের এই ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন। মিথ্যা আপনাদের পারস্পারিক বিশ্বাসকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে।

কথা দিয়ে কথা না রাখা :- কথা দিয়ে কথা রাখা বা ওয়াদা রক্ষা করা একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এড়িয়ে চলা :- অনেকদিন পর দেখা হলে বন্ধুদেরকে বা ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরি, কোলাকুলি করি। আপনার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না? পারবেন, অস্বস্তি লাগলেও তা ভেঙ্গে ফেলুন। ভালোবাসার প্রকাশ থাকা খুবই প্রয়োজন।

সন্দেহ ও গীবত করা :- কখনো সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে। আপনার জীবনসঙ্গী আপনার খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি। কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। আর মনে রাখবেন, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ হিসাব দিবে। তাই সন্দেহ দূর করুন। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের চাদরস্বরূপ, ছোট-খাটো ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যদের কাছে বলে বেড়াবেন না, গীবত করবেন না।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেছেন :
"হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।" — [আল হুজুরাত, ৪৯ : ১২]
খুব বেশি ব্যস্ততা :- অপরজনের জন্য কিছু সময় রাখবেন। পারস্পরিক কথাবার্তা আর সময়গুলো সম্পর্ককে প্রগাঢ় করে। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা সময় তিনি পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

সালাত এবং অন্যান্য ইবাদাত না করা :- যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত না করে, নামাজ না পড়ে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নন। নিয়মিত নামাজ না পড়া, অশ্লীল কাজ, হারাম উপার্জনগুলো থেকে সরে না আসার কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে। আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনে অলসতা-উপেক্ষা করার কারণে মুসলিম সংসারে অত্যন্ত দ্রুত ভাঙ্গন ধরে যায়।

আল্লাহ আমাদেরকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমাদের সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমাদের পরিবারগুলোতে রাহমাত এবং বারাকাহ দান করুন।
বিস্তারিত

স্ত্রীরা যেসব গুণাবলীর কারণে স্বামীর নিকট প্রিয় পাত্রী হন

জীবন সঙ্গিনী একজন পুরুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উত্তম স্ত্রী যিনি জীবনে পান, তিনি একজন ভাগ্যবান পুরুষ। ​তেমনি একজন স্ত্রীর কাছে যিনি ভালো স্বামী তিনিই প্রকৃত উত্তম চরিত্রের মানুষ। ​একজন সফল ব্যক্তির পাশে থাকেন তার সুযোগ্য সহযোদ্ধা,সহযাত্রী, বন্ধু হিসেবে তার স্ত্রী।
বিস্তারিত

স্বামীর যে গুণগুলোর কারণে স্ত্রীরা তাদের ভালোবাসেন

একটা মেয়ে যখন বিবাহ নামক আল্লাহ্‌র বিধান মানার মাধ্যমে তাঁর পরিচিত গণ্ডি ছেরে ভিন্ন একটা পরিবেশ ভিন্ন একটা পরিবার অপরিচিত সব মানুষদের মাঝে এসে বসবাস করা শুরু করে আর তখন এ অপরিচিত সবার মাঝ থেকে একজন মানুষ হয়ে উঠে তাঁর সবচেয়ে আপন তিনি হচ্ছেন তাঁর স্বামী ।
বিস্তারিত