আপন গতিতে জীবন বয়ে চলে। জীবনের নিজস্ব ধারায় মানুষ শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন এবং যৌবন থেকে মধ্যবয়স এবং মধ্যবয়স থেকে বাধর্ক্যের দিগন্ত রেখা ছুয়ে যেতে হয়। জীবনের এই প্রতিটি প্রান্তে এসে দেহে মনে নানা পরিবর্তন দেখা দেয়।
তবে এ সব পরিবর্তন নারী এবং পুরুষের একই ধরণের হয় না। বিশেষ করে মধ্য বয়স অতিত্রুম করার পর একজন নারী বিশেষ কিছু শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে পড়েন। যাকে মেনোপজ, রজঃনিবৃত্তি বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া বলে।
মধ্য বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার সময় নারী দেহে কিছু কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি বা ঋতুস্রাব বন্ধের আগে এসব পরিবর্তন দেখা দিতে থাকে। এ সব পরিবর্তন সাধারণ ভাবে ৪৫এর পর নারীরা অনুভব করতে থাকেন। সাধারণত গড়ে ৫১ বছর বয়সে মেনোপজ হয়ে থাকে, তবে কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে তা ৪০ বছরে আবার কারো ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সে তা ঘটতে পারে। ধুমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজ অল্প বয়সেই দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে বিশেষ কোন রোগের কারণে জরায়ু কেটে ফেলা হলে নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে।
তবে অপারেশনের সময় যদি ওভারি ফেলে দেয়া না হয় তবে মেনোপজের উপসর্গগুলো দেখা দেবে না। এ ছাড়া কোনো বিশেষ কারণে যদি কোনো নারীর জরায়ু এবং ওভারি দুটোই ফেলে দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে রোগিনীর বয়স যাই হোক না কেন, মেনোপজের উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকবে। আর এমনটি হওয়ার কারণ হলো নারী দেহে ইষ্ট্রোজেন ও প্রজেষ্টেরন হরমোন তৈরীর কাজটি করে ওভারিই।
কাজেই ওভারি যদি না থাকে এ হরমোনও তৈরি হবে না এবং পরিণামে মেনোপজ দেখা দেবে। মেনোপজের ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা: মাহেনাজ আফরোজ বলেন, বয়সের কারণে মেনোপজ হয় বলে এটাকে প্রতিহত করা কারো পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
তাই মধ্য বয়স অতিক্রম করার সময় পরবর্তী অনিবার্য পরিবর্তনের জন্য একজন নারীর দেহ ও মনকে প্রস্তুত রাখা উচিত। সাধারণভাবে শিক্ষিত নারীরা এ ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন। আর মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলেও এই পরিবর্তনকে সহজে মেনে নেয়া যাবে। মেনোপজের আগে ভাগে নারীদের মনেও কিছু পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে খানিকটা ভুলো মনো হয়ে পড়া এবং আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠাই হলো উল্লেখযোগ্য।
মেনোপজ প্রতিহত করার কথা অনেকেই বলে থাকেন। প্রথমেই এ ব্যাপারে পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছে বয়সজনিত এই বিষয়টা প্রতিহত করা একেবারেই সম্ভব না। এরপরও অনেকে নানা ধরণের ওষুধের দিকে ঝুকে থাকেন।
এ প্রসংগে ডা. মাহেনাজ আফরোজ জানালেন, এ পরিবর্তন আসবেই। এটাকে প্রতিহত বা এই পরিবর্তনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে পরিবর্তন যেনো দেরিতে আসে সে জিনিসটা করা যেতে পারে। কিন্তু এ পরিবর্তন বিলম্ব করার জন্য যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা যে সব পদক্ষেপ নেয়া হয় কোনো সু চিকিৎসকই তা সমর্থন করবেন না। তবে পরিবর্তন আসার আগে যদি কোনো উপসর্গের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় তবে সে ক্ষেত্রে রোগী ভেদে চিকিৎসা করা যেতে পারে। মেনোপজের আগে ভাগে যে সব লক্ষণ দেখা যায় তা নিয়ে আলোচনার শুরুতেই একবার আভাস দেয়া হয়েছে।
এবার এ সব উপসর্গ নিয়ে বিস্তারিত বললেন ডা.মাহেনাজ আফরোজ। তিনি জানালেন, বুক ধড়ফড় করা, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব করা, হট ফ্ল্যাশ বা নাকে বা মুখে হঠাৎ গরম ভাপ লাগা মনে হওয়া, এমন সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একে মেনোপজের প্রথম বা প্রধান লক্ষণও বলা যেতে পারে। এটি দিনে দুই-তিনবার বা রাতে যেকোনো সময় হতে পারে, বা এ কারণে একজন নারী ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড ভাবে ঘেমে উঠতে পারেন। এ ছাড়া দেহের পরিবর্তনের এ সময়ে বিষন্নতা, অকারণে উত্তেজনা, নার্ভাসনেস, রুক্ষ ও খিটখিটে মেজাজ, অমনোযোগিতা, মাথা ধরা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। খাবারে প্রচন্ড অরুচি, অনেক সময় বদহজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
মেনোপজের প্রথম বছর গুলোতে যে সব সংকট দেখা দিতে পারে তার একটি হলো হট ফ্লাশ বা গা গরম হয়ে ওঠা। শরীরের উপরের অংশ অর্থাৎ মুখ এবং গলায় প্রচন্ড গরম অনুভূত হতে পারে এবং ঘাম দেখা দিতে পারে । কখনো কখনো হাত গলা বুক ও পিঠে লাল দাগ দেখা দিতে পারে। প্রচন্ড গরমের পর পরই শীতে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে পারে। এ সমস্যা কখনো কখনো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। হট ফ্লাশের এ অবস্থাকে নাইট সোয়েট বলা হয়।
সাধারণভাবে হট ফ্লাশ ৩০ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মেনোপজের সময়ে খাদ্য তালিকাতে কোন পরিবর্তন না করলেও নারীদের ওজন বাড়তে দেখা যায়৷ মেনোপজে হয়েছে বা মেনোপজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এমন সকল মহিলার ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়৷ আর এই ওজন বৃদ্ধির কারণে প্রায় সব মহিলাই চিন্তায় থাকেন। কিন্তু এমন কেন হয় তা আমাদের মধ্যে বেশীর ভাগ মহিলারই জানা নেই৷
আসলে মেনোপজের সময় থেকে নারীদের মধ্যে হঠাৎ মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে থাকে তার ফলে নিয়মিত ব্যায়াম চর্চার ইচ্ছা কমতে থাকে৷ আর ব্যায়ামে অনীহার কারণে মেনোপজের সময়ে মহিলাদের ওজন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠে। বেশীর ভাগ মহিলাই মেনোপজের সময়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তাদের ওজন বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে কারণ তাদের ব্যায়াম করার ইচ্ছা হ্রাস পায় অন্যদিকে সে অনুযায়ী তাদের খাদ্য তালিকাতে কোন পরিবর্তন ঘটে না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, অর্থাৎ ওজন বাড়তে থাকে। মেনোপজের আগে নারী নিজ উদ্যোগ নিয়ে কাজে আগ্রহী হতেন বা যে পরিমাণ কাজ তারা করতেন এ সময়ে তার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ কাজ করেন ৷ বরং বলা যায় তাদের একরকম আলসেমীতে পেয়ে বসে।
কাজের পরিমাণ কমানোর ফলে তাদের কায়িক পরিশ্রম কমে যায় এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ না কমানোর ফলে তাদের ওজন ক্রমশঃ বাড়তে থাকে৷ এছাড়াও মেনোপজ কালীন সময়ে নারীদেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে এবং হরমোনের এই ঘাটতি তাদের মোটা হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠে। আর এর কারণ হলো এই হরমোন নারীদের সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে৷ মেনোপজের পর পরই নারীর সকল দৈহিক সমস্যা প্রকাশ পায় না। তবে এ সময় স্বামীর সাথে থাকতে গেলে বেদনা অনুভূত হতে পারে।
এ ছাড়া বয়স কিছু বাড়ার সাথে সাথে তার মধ্যে দৈহিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ইষ্ট্রোজেন হ্রাস পাওয়ার ফলে নারীর ঘন ঘন ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। মূত্রনালীর ইনফেকশনের ফলে বেশিক্ষণ প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, ব্যায়াম, হাচি, কাশি, দৌড়ানো অথবা জোরে হাসির সময় ফোটা ফোটা প্রস্রাব গড়িয়ে পড়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এ সময় নারী আবেগ প্রবণ হয়ে পড়তে পারেন। কিংবা ভুলো মনা হয়ে পড়তে পারেন সে কথা আগেই বলা হয়েছে। জয়েন্ট বা দেহের সন্ধি ও মাংশপেশি শক্ত হয়ে উঠতে পারে এবং সেগুলোতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। নারী দেহের মাংসপেশী হ্রাস পেয়ে সেখানে মেদ জমতে পারে। এছাড়াও মেনোপজের পর কোন পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই দুটি খুব সাধারণ কিন্তু জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, তার একটি হলো অষ্টিওপোরোসিস (Osteoporosis) পুরোনো হাড় ক্ষয় হয়ে নতুন হাড় তৈরী হওয়া মানব-মানবীর শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় ভুমিকা রয়েছে ইষ্ট্রোজেন নামক হরমোনের।
কাজেই দেহে ইষ্ট্রোজেন এর অভাবে ধীরে ধীরে হাড়গুলো দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। চিকিৎসা বিদ্যার ভাষায় এই অবস্থার নাম হলো অষ্টিওপোরোসিস। এ ছাড়া ইষ্ট্রোজেন ঘাটতি অথবা বয়স বেড়ে যাবার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপসহ শরীরের কোলেষ্টেরল এর পরিমাণ পরীক্ষা করা দরকার। মেনোপজ কোনো রোগ নয় দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তাই একে মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। এ সময় শরীরের প্রতি আগের চেয়ে একটু বেশি যত্ন নিতে হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
নিয়মিত কম চর্বি যুক্ত, বেশি প্রোটিন ও আশযুক্ত খাবার খেতে হবে। বেশি পরিমাণে ফলমুল, শাকসবজি, শষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ গ্রহণ করতে হবে এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে ও শরীরের স্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
তবে এ সব পরিবর্তন নারী এবং পুরুষের একই ধরণের হয় না। বিশেষ করে মধ্য বয়স অতিত্রুম করার পর একজন নারী বিশেষ কিছু শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে পড়েন। যাকে মেনোপজ, রজঃনিবৃত্তি বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া বলে।
মধ্য বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার সময় নারী দেহে কিছু কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি বা ঋতুস্রাব বন্ধের আগে এসব পরিবর্তন দেখা দিতে থাকে। এ সব পরিবর্তন সাধারণ ভাবে ৪৫এর পর নারীরা অনুভব করতে থাকেন। সাধারণত গড়ে ৫১ বছর বয়সে মেনোপজ হয়ে থাকে, তবে কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে তা ৪০ বছরে আবার কারো ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সে তা ঘটতে পারে। ধুমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজ অল্প বয়সেই দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে বিশেষ কোন রোগের কারণে জরায়ু কেটে ফেলা হলে নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে।
তবে অপারেশনের সময় যদি ওভারি ফেলে দেয়া না হয় তবে মেনোপজের উপসর্গগুলো দেখা দেবে না। এ ছাড়া কোনো বিশেষ কারণে যদি কোনো নারীর জরায়ু এবং ওভারি দুটোই ফেলে দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে রোগিনীর বয়স যাই হোক না কেন, মেনোপজের উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকবে। আর এমনটি হওয়ার কারণ হলো নারী দেহে ইষ্ট্রোজেন ও প্রজেষ্টেরন হরমোন তৈরীর কাজটি করে ওভারিই।
কাজেই ওভারি যদি না থাকে এ হরমোনও তৈরি হবে না এবং পরিণামে মেনোপজ দেখা দেবে। মেনোপজের ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা: মাহেনাজ আফরোজ বলেন, বয়সের কারণে মেনোপজ হয় বলে এটাকে প্রতিহত করা কারো পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
তাই মধ্য বয়স অতিক্রম করার সময় পরবর্তী অনিবার্য পরিবর্তনের জন্য একজন নারীর দেহ ও মনকে প্রস্তুত রাখা উচিত। সাধারণভাবে শিক্ষিত নারীরা এ ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন। আর মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলেও এই পরিবর্তনকে সহজে মেনে নেয়া যাবে। মেনোপজের আগে ভাগে নারীদের মনেও কিছু পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে খানিকটা ভুলো মনো হয়ে পড়া এবং আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠাই হলো উল্লেখযোগ্য।
মেনোপজ প্রতিহত করার কথা অনেকেই বলে থাকেন। প্রথমেই এ ব্যাপারে পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছে বয়সজনিত এই বিষয়টা প্রতিহত করা একেবারেই সম্ভব না। এরপরও অনেকে নানা ধরণের ওষুধের দিকে ঝুকে থাকেন।
এ প্রসংগে ডা. মাহেনাজ আফরোজ জানালেন, এ পরিবর্তন আসবেই। এটাকে প্রতিহত বা এই পরিবর্তনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে পরিবর্তন যেনো দেরিতে আসে সে জিনিসটা করা যেতে পারে। কিন্তু এ পরিবর্তন বিলম্ব করার জন্য যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা যে সব পদক্ষেপ নেয়া হয় কোনো সু চিকিৎসকই তা সমর্থন করবেন না। তবে পরিবর্তন আসার আগে যদি কোনো উপসর্গের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় তবে সে ক্ষেত্রে রোগী ভেদে চিকিৎসা করা যেতে পারে। মেনোপজের আগে ভাগে যে সব লক্ষণ দেখা যায় তা নিয়ে আলোচনার শুরুতেই একবার আভাস দেয়া হয়েছে।
এবার এ সব উপসর্গ নিয়ে বিস্তারিত বললেন ডা.মাহেনাজ আফরোজ। তিনি জানালেন, বুক ধড়ফড় করা, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব করা, হট ফ্ল্যাশ বা নাকে বা মুখে হঠাৎ গরম ভাপ লাগা মনে হওয়া, এমন সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একে মেনোপজের প্রথম বা প্রধান লক্ষণও বলা যেতে পারে। এটি দিনে দুই-তিনবার বা রাতে যেকোনো সময় হতে পারে, বা এ কারণে একজন নারী ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড ভাবে ঘেমে উঠতে পারেন। এ ছাড়া দেহের পরিবর্তনের এ সময়ে বিষন্নতা, অকারণে উত্তেজনা, নার্ভাসনেস, রুক্ষ ও খিটখিটে মেজাজ, অমনোযোগিতা, মাথা ধরা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। খাবারে প্রচন্ড অরুচি, অনেক সময় বদহজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
মেনোপজের প্রথম বছর গুলোতে যে সব সংকট দেখা দিতে পারে তার একটি হলো হট ফ্লাশ বা গা গরম হয়ে ওঠা। শরীরের উপরের অংশ অর্থাৎ মুখ এবং গলায় প্রচন্ড গরম অনুভূত হতে পারে এবং ঘাম দেখা দিতে পারে । কখনো কখনো হাত গলা বুক ও পিঠে লাল দাগ দেখা দিতে পারে। প্রচন্ড গরমের পর পরই শীতে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে পারে। এ সমস্যা কখনো কখনো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। হট ফ্লাশের এ অবস্থাকে নাইট সোয়েট বলা হয়।
সাধারণভাবে হট ফ্লাশ ৩০ সেকেন্ড থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মেনোপজের সময়ে খাদ্য তালিকাতে কোন পরিবর্তন না করলেও নারীদের ওজন বাড়তে দেখা যায়৷ মেনোপজে হয়েছে বা মেনোপজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এমন সকল মহিলার ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়৷ আর এই ওজন বৃদ্ধির কারণে প্রায় সব মহিলাই চিন্তায় থাকেন। কিন্তু এমন কেন হয় তা আমাদের মধ্যে বেশীর ভাগ মহিলারই জানা নেই৷
আসলে মেনোপজের সময় থেকে নারীদের মধ্যে হঠাৎ মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে থাকে তার ফলে নিয়মিত ব্যায়াম চর্চার ইচ্ছা কমতে থাকে৷ আর ব্যায়ামে অনীহার কারণে মেনোপজের সময়ে মহিলাদের ওজন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠে। বেশীর ভাগ মহিলাই মেনোপজের সময়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তাদের ওজন বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে কারণ তাদের ব্যায়াম করার ইচ্ছা হ্রাস পায় অন্যদিকে সে অনুযায়ী তাদের খাদ্য তালিকাতে কোন পরিবর্তন ঘটে না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, অর্থাৎ ওজন বাড়তে থাকে। মেনোপজের আগে নারী নিজ উদ্যোগ নিয়ে কাজে আগ্রহী হতেন বা যে পরিমাণ কাজ তারা করতেন এ সময়ে তার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ কাজ করেন ৷ বরং বলা যায় তাদের একরকম আলসেমীতে পেয়ে বসে।
কাজের পরিমাণ কমানোর ফলে তাদের কায়িক পরিশ্রম কমে যায় এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ না কমানোর ফলে তাদের ওজন ক্রমশঃ বাড়তে থাকে৷ এছাড়াও মেনোপজ কালীন সময়ে নারীদেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে এবং হরমোনের এই ঘাটতি তাদের মোটা হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠে। আর এর কারণ হলো এই হরমোন নারীদের সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে৷ মেনোপজের পর পরই নারীর সকল দৈহিক সমস্যা প্রকাশ পায় না। তবে এ সময় স্বামীর সাথে থাকতে গেলে বেদনা অনুভূত হতে পারে।
এ ছাড়া বয়স কিছু বাড়ার সাথে সাথে তার মধ্যে দৈহিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ইষ্ট্রোজেন হ্রাস পাওয়ার ফলে নারীর ঘন ঘন ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। মূত্রনালীর ইনফেকশনের ফলে বেশিক্ষণ প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, ব্যায়াম, হাচি, কাশি, দৌড়ানো অথবা জোরে হাসির সময় ফোটা ফোটা প্রস্রাব গড়িয়ে পড়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এ সময় নারী আবেগ প্রবণ হয়ে পড়তে পারেন। কিংবা ভুলো মনা হয়ে পড়তে পারেন সে কথা আগেই বলা হয়েছে। জয়েন্ট বা দেহের সন্ধি ও মাংশপেশি শক্ত হয়ে উঠতে পারে এবং সেগুলোতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। নারী দেহের মাংসপেশী হ্রাস পেয়ে সেখানে মেদ জমতে পারে। এছাড়াও মেনোপজের পর কোন পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই দুটি খুব সাধারণ কিন্তু জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, তার একটি হলো অষ্টিওপোরোসিস (Osteoporosis) পুরোনো হাড় ক্ষয় হয়ে নতুন হাড় তৈরী হওয়া মানব-মানবীর শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় ভুমিকা রয়েছে ইষ্ট্রোজেন নামক হরমোনের।
কাজেই দেহে ইষ্ট্রোজেন এর অভাবে ধীরে ধীরে হাড়গুলো দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। চিকিৎসা বিদ্যার ভাষায় এই অবস্থার নাম হলো অষ্টিওপোরোসিস। এ ছাড়া ইষ্ট্রোজেন ঘাটতি অথবা বয়স বেড়ে যাবার কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপসহ শরীরের কোলেষ্টেরল এর পরিমাণ পরীক্ষা করা দরকার। মেনোপজ কোনো রোগ নয় দেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তাই একে মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। এ সময় শরীরের প্রতি আগের চেয়ে একটু বেশি যত্ন নিতে হবে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
নিয়মিত কম চর্বি যুক্ত, বেশি প্রোটিন ও আশযুক্ত খাবার খেতে হবে। বেশি পরিমাণে ফলমুল, শাকসবজি, শষ্য ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ গ্রহণ করতে হবে এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে ও শরীরের স্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।